চাল আমদানিতে পাঁচ মাসে ১০ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ by ভূঁইয়া নজরুল,

মাত্র পাঁচ মাসেই ১০ বছরের চাল আমদানির রেকর্ড ভেঙেছে সরকারের খাদ্য বিভাগ। চলতি বছর এ পর্যন্ত ১০ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫১ টন চাল কেনা হয়েছে। আমদানির পাইপলাইনে রয়েছে আরো প্রায় আড়াই লাখ টন।বর্তমানে দেশের খাদ্যগুদামগুলোতে প্রায় ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে চাল রয়েছে প্রায় পৌনে ১২ লাখ টন। গুদামে জায়গা না থাকলেও সরকার আরো চাল কিনছে। বিপরীতে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকেও গত বোরো মৌসুমে


চাল সংগ্রহ করা হয়েছে এবং আসন্ন আমন মৌসুমে চাল সংগ্রহ করা হবে কি না, তা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্তে পেঁৗছাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম চাল আমদানি করা হয়েছে ২০০২-০৩ সালে। ওই বছর সরকারিভাবে ১৯৯২ টন চাল আমদানির পর প্রতিবছর বাড়তে থাকে এর পরিমাণ। ২০০৮-০৯ মৌসুমে আমদানির পরিমাণ বেড়ে তিন লাখ ৯৫ হাজার ৮৩০ টনে পেঁৗছে। পরে ২০১০-১১ অর্থবছরে সাত লাখ ২৪ হাজার ৯০ টন আমদানির পর চলতি অর্থবছরের জুলাই মাস থেকে এ পর্যন্ত ১০ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫১ টন চাল আমদানি করেছে সরকার।
বর্তমানে সরকারের গুদামে অনেক চাল মজুদ থাকার পরও আরো আমদানি প্রসঙ্গে দেশের বিশিষ্ট আমদানিকারক ও চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম কালের কণ্ঠকে জানান, চলতি বছর বেসরকারি পর্যায়ে কোনো চাল আমদানি করা হয়নি, সরকারই করছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, চালের বাজার সরকার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাচ্ছে। ফেয়ার প্রাইস কার্ড, ওএমএস, চতুর্থ শ্রেণীর রেশনিং, ভিজিএফ, ভিজিডি প্রভৃতি কার্ডের মাধ্যমে সরকারের খাদ্য বিভাগ প্রচুর পরিমাণে চাল বাজারে ছাড়ছে।
ওমর আজম আরো জানান, সরকারের এসব কর্মসূচির কারণে বাজারে চালের দাম কম এবং বেসরকারি পর্যায়ের আমদানিকারকরা কেজিপ্রতি সাত থেকে আট টাকা ভর্তুকি দিয়ে চাল বিক্রি করছেন। এ জন্য বেসরকারি আমদানিকারকরা চাল কিনছেন না বলে সরকার নিজেই ব্যাপকহারে চাল আমদানি করছে।
এর সত্যতা স্বীকার করে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমেদ হোসেন খান গতকাল বুধবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে জানান, বর্তমানে সরকারের গুদামে প্রায় পৌনে ১২ লাখ টন চাল মজুদ রয়েছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। বিভিন্ন খাদ্য কর্মসূচিতে প্রতি মাসে প্রায় এক লাখ টন চাল গুদাম থেকে বাজারে প্রবেশ করলেও চলতি বছরে দেশে চালের কোনো ঘাটতি হবে না এবং সরকারের কাছে পর্যাপ্ত মজুদ থাকবে।
আহমেদ হোসেন আরো জানান, গত বছর রেকর্ড পরিমাণ চাল আমদানির পর এ বছর এরই মধ্যে তা পার হয়ে গেছে। আরো প্রায় আড়াই লাখ টন আসার পর চলতি বছর বিশেষ প্রয়োজন না হলে আর চাল কেনার কোনো সম্ভাবনা নেই।
কৃষিবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে প্রতিবছর কৃষিজমি কমলেও হেক্টরপ্রতি চালের উৎপাদন কমছে না। জনসংখ্যার বাড়তি চাপ ও ভূমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় চালের উৎপাদন ও চাহিদার সমন্বয় হচ্ছে না, তবে ফলন বাড়ছে।
উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ওএমএসের আওতায় ঢাকা মহানগরীতে ১৫০ জন, ঢাকা মহানগরীর বাইরে ২০ জন, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী জেলায় ১০ জন করে, রংপুর ও বরিশাল বিভাগীয় শহরে ২৫ জন করে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহরে ৫৫ জন, সিলেট বিভাগীয় শহরে ১৫ জন, বাকি ৫৪ জেলায় ৫৩৭ জন, জেলা সদরের বাইরে এক হাজার ৮৯৫ জন, উপজেলা সদরের বাইরের ২৫ পৌরসভায় ৭৫ জন, বন্যা উপদ্রুত হাওর এলাকার ৪৪ উপজেলা সদরে ও সদরের বাইরে ৪৪ জন, বড় হাট-বাজারে ৩০৮ জন ডিলার চাল বিক্রি করছেন। এ ছাড়া দেশের প্রতি ইউনিয়নের এক হাজার হতদরিদ্র পরিবারের মধ্যে মাসে ১০ কেজি চাল ও ১০ কেজি গম বিক্রি এবং তিন লাখ সরকারি চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী মাসে ২০ কেজি করে চাল ও ফেয়ার প্রাইস কার্ডের আওতায় ২২ লাখ ২৫ হাজার পরিবার মাসে ২০ কেজি চাল পাচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে ফেয়ার প্রাইস কার্ড ও রেশনিং কার্যক্রম সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হলেও ওএমএস কার্যক্রম চলছে। ওএমএস, ফেয়ার প্রাইস কার্ড, চতুর্থ শ্রেণীর রেশনিং ও হতদরিদ্রদের মধ্যে কেজিপ্রতি ২৪ টাকা দরে চাল বিক্রি করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.