শুভ সময়ের অপেক্ষায় শুভ by কামরুজ্জামান মিলু

ক গানের শিল্পী বলেই শুভকে চেনে সবাই। তবে অন্য ধাঁচের গানেও রয়েছে তাঁর পারদর্শিতা। গত ঈদে প্রকাশিত হয়েছে শুভর দ্বিতীয় একক 'অনেক কিছু'। লিখেছেন কামরুজ্জামান মিলু'ছোট্টবেলায় ঘুম থেকে উঠতেই বাবার কণ্ঠে রেওয়াজের সুর ভেসে আসত কানে। কিন্তু গানের প্রতি তখন ঝোঁক ছিল না। অনেকটা জোর করেই শিশু একাডেমীতে তবলা শেখার জন্য ভর্তি করিয়ে দেন মা। তখন আমার বয়স পাঁচ কি ছয়। গান শিখতে শিখতেই এসএসসি পর্যন্ত বেড়ে


ওঠা। এর মধ্যে গানটাও আমাকে টানতে লাগল। ভালো লাগত রক ধাঁচের গান। সেই কৌতূহল থেকেই বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুলি রক ব্যান্ডদল 'মেটাল মেইজ'_গান শেখার গল্প বলছিলেন শুভ। ব্যান্ড গড়ার আগে সংগীতের চেয়ে খেলাধুলাতেই তাঁর মনোযোগ ছিল বেশি। সমানতালে চালিয়ে যান লেখাপড়াটাও। ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে [আইইআর] বিভাগে। সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার ফাঁকে খালি গলায় গান করতেন শুভ। অনেকে তাঁর গান শোনার জন্য ক্লাস শেষে আড্ডায় অপেক্ষা করত। ২০০০ সালে 'মেটাল মেইজ' ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বন্ধু মিলে গড়ে তোলেন নতুন ব্যান্ড 'অ্যাকুয়স্টিকা'। কিন্তু নিয়মিত না হওয়ায় এই ব্যান্ডও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি শুভর। শুভ বলেন, 'এই ব্যান্ড নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আমরা নিয়মিত স্টেজ শো করতাম, কিছু টাকাও পকেটে আসত। কিন্তু ব্যান্ডে আমি নিয়মিত সময় দিতে পারতাম না।' ২০০২ সালে 'রুটস [কমল]' নামের এক ব্যান্ডে ভোকাল হিসেবে যোগ দেন শুভ। তাঁর দুই বছর পর নাম লেখান 'বেনসন অ্যান্ড হেজেস : স্টার সার্চ' প্রতিযোগিতায়। সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে সেই প্রতিযোগিতার সেরা ব্যান্ডের পুরস্কার লাভ করে 'রুটস'। কিছু দিনের মধ্যেই সর্বত্র নতুন এই ব্যান্ডের পরিচিতি। বাড়ে স্টেজ শো, ডাক আসতে থাকে বিভিন্ন জায়গা থেকে। এভাবেই কাটে কয়েকটা বছর।
২০০৬ সালটা শুভর জন্য আরো সুখকর। নির্বাচিত হন 'ডি-রকস্টার' প্রতিযোগিতার সেরা ভোকাল। এবার শুভর সুযোগ আসে বিভিন্ন মিঙ্ড অ্যালবামে গাওয়ার। ফুয়াদের সংগীতে মিঙ্ড অ্যালবাম 'ক্রমান্বয়'-এ গান করার সুযোগ আসে তাঁর। ওই অ্যালবামে শুভর গাওয়া 'জানি না' এবং 'ক্লান্তির এই শহর ছেড়ে' গানগুলো বেশ প্রশংসিত হয়। এরপর 'বাপ্পা উইথ রকারস', 'জুয়েল উইথ স্টারস'সহ বেশ কিছু মিঙ্ড অ্যালবামে কণ্ঠ দেন তিনি। এসব অ্যালবামের 'ভুল জানালা', 'তুমিহীনা সারা বেলা', 'বৃষ্টি' গানগুলো শ্রোতারা পছন্দ করেন বলে জানান শুভ। ২০০৮ সালে বের হয় তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম 'রকারস ইন করপোরেটেড'। অ্যালবামটি বাণিজ্যিকভাবে সফল না হলেও নিজের গায়কির জন্য আলোচিত হন শুভ। পরের বছর 'সাউথ এশিয়ান সুপারস্টার' প্রতিযোগিতায় অংশ নেন সদা বিনয়ী এ তরুণ। সেখানেও অর্জন করেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব।
গত ঈদে অগি্নবীণার ব্যানারে নিজের দ্বিতীয় একক অ্যালবাম 'অনেক কিছু' প্রকাশ করেন শুভ। এতে মোট ৯টি গান রয়েছে। গানগুলো লিখেছেন শুভ, শাহান কবন্ধ, রুদ্র পলাশ ও আবদার। সংগীতায়োজনে আমজাদ, ফুয়াদ ও মাসুম হোসেন। 'নীরবে' শিরোনামের একটি গানে শুভর সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন টুম্পা। শুভ বলেন, 'প্রতিটি শিল্পীর জীবনের বড় প্রাপ্তি শ্রোতাদের মনে তাঁর গান বেঁচে থাকা। সেই ভাবনা থেকেই অনেক সময় নিয়ে এ অ্যালবামটি করেছি। শুধু রক নয়, শহুরে ফোকসহ বিভিন্ন ধাঁচের গান রয়েছে এতে। অল্প সময়ের মধ্যে অ্যালবামটির জন্য ভালো সাড়া পেয়েছি ও পাচ্ছি।' একসময় শুভ স্বপ্ন দেখতেন বিজ্ঞানী হবেন। কিন্তু হয়েছেন একজন রকস্টার। গান নিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে শুভ বলেন, 'আমরা সব সময় সাউথ এশিয়ান মিউজিক বলতে ভারতের মিউজিককে বুঝি। আমরা যেকোনো ভাষায় গান হৃদয়ে ধারণ করতে পারি। দেশীয় মিউজিককে আমি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত করাতে চাই। স্বপ্ন দেখি, সবাই একদিন আমার গান শুনে শ্রদ্ধার সঙ্গে বলবে_এটি বাংলাদেশের গান।' আসছে ভালোবাসা দিবসে একটি দ্বৈত এবং আগামী বছরই নিজের তৃতীয় একক অ্যালবাম প্রকাশের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন শুভ। গান গেয়ে নিজেকে আরো অনেক দূর নিয়ে যেতে চান তিনি। এখন আছেন সেই শুভ সময়ের অপেক্ষায়!

No comments

Powered by Blogger.