গৃহকর্মীর প্রতারণা-নৈরাজ্যই অপরাধের সূতিকাগার

দয়াস্ত নয়, আলো ফোটার অনেক আগে থেকে মধ্যরাত্রি পেরিয়েও যারা নিভৃত গৃহকোণে নীরবে কাজ করে, তারাও মাঝে মধ্যে সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়। তবে দুর্ভাগ্যবশত। নামমাত্র খাওয়া-পরা ও পারিশ্রমিকে অন্যের ঘরে কাজ করতে এসে হয়রানি ও নির্যাতনকে হয়তো গৃহকর্মীরা নিয়তি হিসেবেই ধরে নেয়। কিন্তু তাও কখনও কখনও সভ্যতা ও মানবতার সীমা ছাড়িয়ে যায়। মাঝে মধ্যেই দিনের আলোয় বেরিয়ে আসে শিশু গৃহকর্মী রোমেলার কর্তা-কর্ত্রীদের


জীবনের অন্ধকার। কিন্তু উল্টোচিত্রও বিরল নয়। গৃহকর্মীর প্রতারণার ফাঁদে পড়ে ধন-সম্পদ তো বটেই; জীবন সংশয় হওয়ার খবরও আমরা দেখে থাকি। বুধবার সমকালের অপরাধ পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যাচ্ছে, গৃহকর্মী পরিচয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসা অর্ধশত চক্র রাজধানীতে সক্রিয়। তারা রীতিমতো প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের সদস্যদের গৃহকর্মী হিসেবে বিভিন্ন বাসায় পাঠিয়ে থাকে। পরিবারের সবাইকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুট করে পালিয়ে যায়। আমরা মনে করি, গৃহকর্মী নিয়োগ ও তাদের সুযোগ-সুবিধা, অধিকারের ব্যাপারে নৈরাজ্যই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। জরুরি প্রয়োজনীয় এই সেবা যদি বিধিবদ্ধ হতো, তাহলে প্রতারকদের ফাঁদ পাতা কঠিন ছিল। কিন্তু নেহাত পেটের দায়ে দিনরাত সংসারের ঘানি টানা অবহেলিত এক জনগোষ্ঠীর প্রতি নাগরিক ও নীতিনির্ধারকদের ধারাবাহিক অবহেলাই বুমেরাং হতে শুরু করেছে। ২০ লাখের বেশি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতি নজর না দিলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাই স্বাভাবিক। আমরা জানি, খসড়া 'গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা-২০১০' অনেক দিন ধরেই ঝুলে রয়েছে। খসড়া নীতিমালায় দেশের সব সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর কার্যালয়, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ গৃহশ্রমিকদের নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। কর্মীর সঙ্গে নিয়োগ কর্তার চুক্তিতে কাজের ধরন, মজুরি, কর্মঘণ্টা, বিশ্রাম, ছুটি, লেখাপড়া, থাকা-খাওয়ার পাশাপাশি সেখানে গৃহকর্মীর অনুমোদিত ঠিকানা ও পরিচয়পত্রের কথাও বলা হয়েছে। এগুলো নিশ্চিত হলে এই খাতের নৈরাজ্য স্বভাবতই কমে আসবে। আর তাতে করে কেবল গৃহকর্মীদের অধিকারই অপেক্ষাকৃত সুরক্ষিত হবে না, গৃহকর্তার নিরাপত্তা ব্যবস্থাও একধাপ এগিয়ে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.