কুমিল্লা সিটি নির্বাচন-সমর্থনপ্রত্যাশী দুজনকে ডেকে পাঠিয়েছেন খালেদা জিয়া

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি না সে সিদ্ধান্ত গতকাল বুধবার রাতেই জানিয়ে দেওয়ার কথা। এ জন্য দলের সমর্থনপ্রত্যাশী দুই সম্ভাব্য প্রার্থীকে ঢাকায় ডেকে নেওয়া হয়েছে। জাতীয় রাজনীতির অংশ হিসেবে বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে যেতে চাইলেও কুমিল্লা সিটির ভোটারদের মধ্যে দলের অবস্থান ভালো বিবেচনা করে বিএনপির একটি অংশ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। এ অংশের নেতা কুমিল্লার সদ্য বিদায়ী মেয়র মনিরুল হক সাক্কু দলীয় সমর্থন না পেলেও নির্বাচন করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।


কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল মনোনয়নপত্র সংগ্রহের হিড়িক পড়ে। প্রথম দিনেই কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র নেওয়া হয়েছে ৭৮টি। তবে মেয়র পদে কেউ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি।
এদিকে অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কেন্দ্র থেকে হস্তক্ষেপ করতে হবে মনে করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্ভাব্য প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আফজল খান নিজেও।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে বিএনপির সমর্থনপ্রত্যাশী মনিরুল হক সাক্কু ও হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াছিনকে (জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক) বুধবার রাত ৯টায় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে ডেকেছেন। এ জন্য দুজনই গতকাল বিকেলে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। ইয়াছিন বলেন, 'বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি যাবে না, তা আজ জানিয়ে দেওয়া হবে। আমার আশঙ্কা, বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।'
মনিরুল হক সাক্কু ঢাকায় যাওয়ার সময় কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কেন্দ্রীয় বিএনপি কী সিদ্ধান্ত দেবে, তা জানি না। যাওয়ার পর বোঝা যাবে। দলের নেতা-কর্মীদের চাপ রয়েছে নির্বাচন করার জন্য। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তের বাইরে তো যেতে পারব না। তবে স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। এটা নিয়ম না। নেতাদের তা বোঝানোর চেষ্টা করব।' তিনি বলেন, 'বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থান ধরে রাখতে সিটি করপোরেশনের মেয়রের আসনটি প্রয়োজন।' দল নির্বাচনে না গেলেও সাক্কু নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে তাঁর কথাবার্তায় ও ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আফজল খান মেয়র পদে প্রার্থিতার বিষয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সবুজ সংকেত পেলেও স্থানীয় পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেশ চাড়া দিয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্তত আরো তিনজন শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থেকে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা হচ্ছেন বাংলাদেশ কৃষক লীগের সহসভাপতি ওমর ফারুক, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি নুর-উর-রহমান মাহমুদ তানিম ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মিঠু।
স্থানীয় পর্যায়ে দ্বন্দ্ব থাকার কথা স্বীকার করে অধ্যক্ষ আফজল খান বলেছেন, 'নেত্রী যখন বলেছেন, আমি সিগন্যাল পেয়েছি। কেন্দ্রের দায়িত্ব এখন সবাইকে ঠিক করা। আমি নিজে থেকে দলের মধ্যে সমঝোতায় গেলে দাবি-দাওয়া উঠতে পারে।' তিনি জানান, তাঁর বিশ্বাস, সদর আসনের সংসদ সদস্য হাজি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার তাঁর পক্ষে কাজ করবেন। 'বাহার সাহেবকে নির্বাচিত করতে আমরা অনেক পরিশ্রম করেছি। যেহেতু সদরে ভোটার বেশি, সেহেতু তাঁর দায়িত্বও বেশি।' বলেন তিনি। প্রসঙ্গত, আফজল খান ও হাজি বাহারের দীর্ঘদিনের বিরোধ কুমিল্লার রাজনীতিতে আলোচিত ঘটনা।
এদিকে নির্বাচন কমিশন গত দুই দিন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় মাইকিং করে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন নামিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক সম্ভাব্য প্রার্থীকে নির্বাচনী ফেস্টুন ও ব্যানার নামিয়ে ফেলতে দেখা গেছে।
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল বাতেন জানান, নির্বাচনের জন্য ৭৮ জন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। বিনা মূল্যে এ মনোনয়নপত্র দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লায় ইভিএম ব্যবহার হলে দায় ইসির : ফখরুল
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হলে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না সেই সিদ্ধান্ত নেবেন স্থানীয় বিএনপির নেতারা। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বুধবার এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, বিএনপির আপত্তি সত্ত্বেও এই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হলে এর দায়ভার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওপর বর্তাবে।
গতকাল বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির যৌথ সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি জানান, ঢাকা থেকে খুলনা অভিমুখে ২৬ ও ২৭ নভেম্বরের রোডমার্চে চারদলীয় জোটের শরিক ও সমমনা দলের শীর্ষ নেতারাও অংশ নেবেন। রোডমার্চে নেতৃত্ব দেবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
ফখরুল বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততার সুযোগ না থাকলেও দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে কুমিল্লার নির্বাচনের বিষয়ে আমরা কথা বলতে চাই। সেনা মোতায়েন না হলে সেখানে দলীয় সরকারের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ থাকে। একইভাবে ইভিএমের মতো কারচুপির ব্যবস্থায় ভোটারদের রায় পরিবর্তনের সুযোগ থাকে।
যৌথ সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নাজিমউদ্দিন আলম, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি এমপি, সমাজকল্যাণ সম্পাদক আবুল খায়ের ভূঁইয়াসহ দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করীম শাহিন, মহানগর সদস্যসচিব আবদুস সালাম, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, তাঁতী দলের সভাপতি হুমায়ুন ইসলাম খান, ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেক, মহিলা দলের সভানেত্রী নুরে আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক শফিউজ্জামান খোকন, জাসাসের সাধারণ সম্পাদক মনির খান, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.