বেগম জিয়ার বক্তব্য-এমন গঠনমূলক ভূমিকাই কাম্য

বশেষে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে বিএনপি। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গত মঙ্গলবার ধামরাইয়ের জনসভায় টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন। অভিন্ন নদীগুলোতে বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, সরকার এই কাজের প্রতিবাদ করলে বিরোধী দল পাশে থাকবে। এর পাশাপাশি গতকাল বুধবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে


একটি চিঠিও দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেত্রী। সে চিঠিতে তিনি টিপাইমুখ বাঁধের ব্যাপারে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ জরিপের কথা উল্লেখ করেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য থেকে আবারও যেন গঠনমূলক ও দায়িত্বশীল বিরোধী দলকে খুঁজে পাওয়া গেল। কেবল বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা নয়, দেশ ও জাতির প্রয়োজনে সরকারের সঙ্গে পাশাপাশি কাজ করার যে প্রত্যয় বেগম খালেদা জিয়া ব্যক্ত করেছেন, তা ধন্যবাদার্হ। জাতীয় প্রশ্নে সরকার ও বিরোধী দলের অভিন্ন ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কাম্য। দেশের মানুষ বিরোধী দলের কাছ থেকে এমন গঠনমূলক ভূমিকাই আশা করে। চলতি সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় টিপাইমুখ বাঁধ। বাংলাদেশের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর উজানে মণিপুরের বরাক নদের ওপর বাঁধ নির্মাণ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগের কথা কয়েক বছর আগে জানাজানি হওয়ার পর বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ওই বাঁধের কারণে এ দেশে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে শুরুতেই আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকি ভারতেও ওই বাঁধ নিয়ে বিতর্ক আছে। সেই সময় বাংলাদেশ সরকারের তৎপরতায় বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো কিছু না করার আশ্বাস দেয় ভারত সরকার। এর পর হঠাৎ করেই গত শুক্রবার টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে বিনিয়োগ চুক্তির খবর সংবাদ মাধ্যমে ফাঁস হয়। এ খবর প্রকাশের পর বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে দেশে সংগঠিত হচ্ছে জনমত। ভারত সরকারের বক্তব্যের পর বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়েছে। বক্তব্যে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। অন্যদিকে ভারত সরকারও তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া বক্তব্যে বলা হয়েছে, টিপাইমুখ জলবিদ্যুতের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া বক্তব্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের গোচরে এসেছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, 'যৌথ অংশীদারির একটি কম্পানি (জেভিসি) প্রতিষ্ঠার জন্য গত ২২ অক্টোবর মণিপুর সরকার, ন্যাশনাল হাইড্রোপাওয়ার করপোরেশন লিমিটেড (এনএইচপিসি) ও সাটলেজ জলবিদ্যুৎ নিগম লিমিটেডের (এসজেভিএন) মধ্যে সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষরই সাম্প্রতিক সময়ের একমাত্র অগ্রগতি।' ভারতের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বরাকের মতো বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন নদ-নদীগুলোতে হস্তক্ষেপ করার আগে এ দেশের সঙ্গে পরামর্শ করার তাগিদ দিয়েছে ঢাকা। বরাক নদের ওপর টিপাইমুখ এলাকায় প্রকল্প নিয়ে অব্যাহত বিতর্কের মুখে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ উদ্বেগ প্রকাশ করছে বলে সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে।
টিপাইমুখ বাঁধ ইস্যুতে বিরোধীদলীয় নেত্রীর ভূমিকা নতুন এক আশার আলো দেখাচ্ছে। সরকারের সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয়ের পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ার জন্য তাঁকে আমরা অভিনন্দন জানাই। বাংলাদেশের জন্য টিপাইমুখ একমাত্র সমস্যা নয়। আরো অনেক সমস্যা রয়েছে। আমরা আশা করব, জাতীয় সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য হলেও বিরোধী দল সংসদে এসে বিষয়গুলো উত্থাপন করবে এবং সরকারের সঙ্গে একযোগে সব জাতীয় সমস্যা মোকাবিলা করবে।

No comments

Powered by Blogger.