সাফল্য-মিষ্টি জাতের আঙুরের জন্য সংগ্রাম by ফখরে আলম

গাছপাগল নুরুস সালাম। দেশ-বিদেশ থেকে তিনি সংগ্রহ করেছেন অসংখ্য ফলের গাছ। তাঁর সংগ্রহে রয়েছে পাঁচ কেজি ওজনের ফজলি ক্লক টাইম ম্যাংগো অর্থাৎ ঘড়ির কাটার মতো ১২ মাসের আম। এ ছাড়া রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের বিভিন্ন জাতের আম। চীনের কমলা, তিউনিশিয়ার ছড়া খেজুর, থাইল্যান্ডের পেয়ারা, ৯ রকম জামরুলসহ ব্যতিক্রমধর্মী আরো কয়েক ধরনের ফলের গাছ।


সড়ক ও জনপথ বিভাগের কম্পিউটার অপারেটর নুরুস সালাম ঢাকার উত্তর বাড্ডার সাঁতারকুলের বাসায় গড়ে তুলেছেন দুষ্প্রাপ্য এ ফলের বাগান। পাশাপাশি দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ উপজেলার উত্তর-রামপুর পাবনাপাড়ায় তাঁর রয়েছে 'নর্থ বেঙ্গল গার্ডেন' নামের আরেকটি ফলের বাগান। এখন তিনি আঙুরকে মিষ্টি করতে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। গবেষণা করে দেশীয় জাক্কাউ জাতের আঙুরকে মিষ্টি করে ফেলেছেন তিনি। অন্যদিকে বিদেশ থেকে আঙুরের চারা এনে মিষ্টি জাতের আঙুরের জন্য তিনি গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে এ কাজে অনেকটা সফলও হয়েছেন নুরুস সালাম।
সাঁতারকুলে নুরুস সালামের বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, চারপাশে শুধু গাছ আর গাছ। পা ফেলার স্থানটুকুও যেন ফাঁকা নেই। মিনারেল ওয়াটারের ছোট-বড় বোতল কেটে তিনি তাতে গাছের চারা রোপণ করেছেন। কোনোটিতে ফুল, কোনোটিতে ফল। তাঁর পুরো বাড়িটিই ঘিরে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছে।
নুরুস সালাম বলেন, '১৭ বছর আগে মহাখালী ওয়ারলেস গেটে একটি পত্রিকার দোকানে বই ঘাটতে গিয়ে আঙুর বাগানের ছবি দেখি। কিন্তু টাকার অভাবে তখন বইটি কিনতে পারিনি। ১৯৯৯ সালে দিনাজপুরের একটি নার্সারি থেকে দুটি আঙুরের চারা সংগ্রহ করি। হাড়ের গুঁড়া, লোহার গুঁড়া, ডিমের খোসার গুঁড়া অনেক কিছু দিয়েছি। কিন্তু আঙুরকে মিষ্টি করতে পারিনি। এরপর ইন্টারনেটে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর গিরিহিল আঙুর বাগানের ছবি দেখে মুগ্ধ হই। ভারতে আঙুর হলে, আমাদের দেশে কেন হবে না? আমি নতুন উদ্যোমে আঙুর নিয়ে কাজ শুরু করি। ২০০০ সালে কৃষি বিভাগের
দুটি জাক্কাউ আঙুরের চারা রোপণ করি। তাতে ফলও হয়। কিন্তু তার খোসা ছিল মোটা, ভেতরে বিচি ও টক। এতে আমার মন খারাপ হয়ে যায়। ২০০৩ সালে ওই জাতের আঙুরগাছের গোড়ায় দুই ভাগ সিলেটের বালি, দুই ভাগ গোবরের সার, ডিমের খোসা মিশিয়ে ময়শ্চারাইজার নিয়ন্ত্রণ করে আমি সফল হই। আঙুরের স্বাদও মিষ্টি হয়। এরপর প্রকৌশলী রহুল ইসলামের কাছ থেকে আমি অস্ট্রেলিয়ার সাদা মেনিনডি সিডলেস ও লাল ক্রিসমন সিডলেসের কয়েকটি চারা সংগ্রহ করি। অস্ট্রেলিয়ার পদ্ধতিতে এই জাতের আঙুর মাটি তুলে পাথর ফেলে চাষ করতে হয়। যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আমি মাটি তুলে বালি ও গোবরসার ভরাট করে ওই আঙুরের চারা লাগিয়েছি। ময়শ্চারাইজার নিয়ন্ত্রণ করে এই আঙুর মিষ্টি করা সম্ভব।'
নুরুস সালাম আরো বলেন, 'আমি মধ্যপ্রাচ্য থেকে উন্নত জাতের আঙুরের চারা সংগ্রহের চেষ্টা করছি। এর জন্য কৃষি বিভাগের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি মনে করি, বাংলাদেশে মিষ্টি জাতের আঙুর চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।'
এ ব্যাপারে যশোর হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ আমিনুল ইসলাম বলেন, 'আমার জানা মতে, দেশে মিষ্টি জাতের আঙুর নেই। মিষ্টি জাতের আঙুরের জন্য গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। কেউ মিষ্টি জাতের আঙুর চাষ করতে পারলে দেশের জন্য তা আশার আলো বয়ে আনবে।'

No comments

Powered by Blogger.