ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা-ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে তিন স্থানে আটজনের মৃত্যু

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা। মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাদেই পেঁৗছে যাবেন বাড়ি। দেখা হবে প্রিয়জনদের সঙ্গে। তারপর সবাই মিলে মেতে উঠবেন ঈদের আনন্দে। কিন্তু কে জানত, এ যাত্রাই হবে তাঁদের শেষ যাত্রা_ সবার ঈদ মাটি করে দিয়ে বাড়ি ফিরবেন লাশ হয়ে।গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত ঈদে বাড়ি ফেরার পথে দেশের তিন স্থানে পৃথক তিনটি ঘটনায় ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন আট হতভাগ্য যাত্রী। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার দেওডোবা তেলুলিয়া নামক স্থানে ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে চারজন নিহত ও তিনজন আহত হন। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।


একইভাবে গতকাল সকালে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার নিকটবর্তী হলহলিয়া নামক স্থানে ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছেন তিনজন। এ ছাড়া গতকাল নওগাঁর রানীনগর রেলস্টেশনের কাছাকাছি জায়গায় ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
জিআরপি থানার এসআই হারুন অর রশিদের বরাত দিয়ে টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, তেলুলিয়ায় রেললাইনের এক পাশ থেকে আরেক পাশে পল্লী বিদ্যুতের লাইনের নিচে নিরাপত্তা শেড ছিঁড়ে ঝুলে ছিল। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া রাজশাহীগামী সিল্কসিটি ট্রেনটি সেখানে পেঁৗছলে ছাদে বসা যাত্রীদের গলায় ঝুলে থাকা ওই শেডের আঘাত লাগলে সাতজন নিচে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত ও বাকি তিনজন আহত হন। নিহত চারজন হলেন সিরাজগঞ্জের সাদতপুর গ্রামের আবদুল মোতালেবের ছেলে মিন্টু মিয়া (১৮), পাবনার ফরিদপুর উপজেলার বেয়েলবাড়ী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মামুন মিয়া (২২) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলারহাট উপজেলার জানে আলমপুর গ্রামের ইমারত হোসেনের ছেলে জহিরুল ইসলাম (২৫)। আরেকজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
আহতদের মধ্যে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া গ্রামের আ. আজিজ মিয়ার ছেলে আবদুর রহিম (২০) ও পাবনা জেলার বরগুনা উপজেলার বড়বিসাকড় গ্রামের ইব্রাহিম মিয়ার ছেলে আনিসুর রহমানকে (৩০) মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আবদুর রহিম বাড়ি চলে গেলেও আনিসুর রহমান আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন। বাকি একজন প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আগেই চলে যান।
বগুড়া অফিস জানায়, থানা পুলিশ ও নিহতদের স্বজনদের বিবরণ থেকে জানা গেছে, গতকাল সকালে ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী নীলসাগর এঙ্প্রেস নামের যাত্রীবাহী ট্রেনটি বগুড়ার সান্তাহার রেলওয়ে জংশন অতিক্রম করার পর জয়পুরহাটের হলহলিয়া নামক স্থানে পেঁৗছলে ছাদে থাকা যাত্রীদের মধ্যে তিনজন নিচে পড়ে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুরে তিনজনই মারা যান। তাঁরা হলেন দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার পানিশাল এলাকার সোনা মিয়ার ছেলে দুলাল হোসেন (৩০), পার্বতীপুর উপজেলা সদরের রওশন আলীর ছেলে উজ্জ্বল (৩০) ও নীলফামারীর ডোমার উপজেলার নিজভাগ ডাবনী এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে জুলফিকার রহমান (৩২)। তাঁদের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) লাল মিয়া জানান, নিহত তিনজনই ঢাকায় রিকশা চালাতেন। ঈদে বাড়ি ফেরার জন্য ট্রেনের ছাদে চড়ে রওনা দিয়ে এ দুর্ঘটনার শিকার হন।
নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর রানীনগর রেলস্টেশনের উত্তর পাশে রেললাইনের ওপর থেকে গতকাল সকালে হারুনুর রশিদ (২৭) নামের এক গার্মেন্ট কর্মীর লাশ উদ্ধার করেছে জিআরপি থানা পুলিশ। নিহত হারুন গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার জবরজানি গ্রামের বাবু মিয়ার ছেলে। তিনি নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি গার্মেন্টে চাকরি করতেন। ঈদ করতে শুক্রবার রাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে যাত্রী হয়ে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। রানীনগর রেলস্টেশনের মাস্টার মোজাফফর হোসেন জানান, 'সকালে লাইনের ওপর একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী খবর দিলে জিআরপি থানা পুলিশ এসে তা উদ্ধার করে। মৃতদেহের প্যান্টের পকেটে পাওয়া মোবাইল ফোন থেকে পরিবারের লোকজনকে খবর দেওয়া হয়েছে।' স্টেশনমাস্টারের ধারণা, রাতের কোনো এক সময় স্টেশনের ওভারব্রিজের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে হারুন নিহত হতে পারেন। এ ব্যাপারে জিআরপি পুলিশ ফাঁড়িতে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু (ইউডি) মামলা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.