মালদ্বীপে সার্ক মঞ্চ প্রস্তুত-হাসিনা-মনমোহন বৈঠক বৃহস্পতিবার

জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বৈঠকের মধ্য দিয়ে মালদ্বীপের আদ্দু নগরীতে আজ শুরু হচ্ছে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) ১৭তম সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে দুই দিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত সার্কের মঞ্চ। স্বাগতিক দেশ মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদের সভাপতিত্বে সম্মেলনের মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সার্কের আটটি সদস্য রাষ্ট্রের সরকারপ্রধানরা।এদিকে শীর্ষ সম্মেলন শুরুর দিন বৃহস্পতিবার সকালে বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং।


গত সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় এই দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে বৈঠকের পর এই প্রথমবারের মতো আলোচনায় সম্পর্কোন্নয়নকে পূর্ণতা দেওয়া এবং 'অমীমাংসিত' ইস্যুগুলো সমাধানের ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। ভারত ছাড়াও অন্য ছয়টি দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বৈঠক করবেন।
সার্ক শীর্ষ সম্মেলন সামনে রেখে গত ৩০ অক্টোবর থেকে মালদ্বীপে শুরু হয়েছে সাংস্কৃতিক উৎসব ও নানা আনুষ্ঠানিকতা। আজ রবিবার সেখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠক (প্রোগ্রামিং কমিটির ৪২তম বৈঠক)। কাল সোম ও পরশু মঙ্গলবার হবে সার্ক দেশগুলোর সচিবপর্যায়ের বৈঠক (স্ট্যান্ডিং কমিটির ৩৯তম বৈঠক)। সার্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হবে বুধবার। ওই দিনই মালদ্বীপের আদ্দু নগরীতে পেঁৗছাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সার্কের সদস্য দেশগুলোর সরকারপ্রধানরা। স্বাগতিক দেশ মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ বিমানবন্দরে তাঁদের স্বাগত জানাবেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে আদ্দু নগরীর হিথাধু কনভেনশন সেন্টারে দুই দিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে সকালে দক্ষিণ এশীয় নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা। এ ছাড়া পরদিন শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠেয় রিট্রিয়েট সেশনেও দক্ষিণ এশিয়ার নেতারা বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয়ে তাঁদের মতপার্থক্য নিরসনে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার সুযোগ পাবেন। শুক্রবার বিকেলে তাঁরা শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে যোগ দেবেন। আগামী শনিবার প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা।
হাসিনা-মনমোহন বৈঠকের আলোচ্যসূচি : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। অন্যদিকে ভারত নিয়মিত ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের বিষয়টি তুলবে বলে বাংলাদেশ ধারণা করছে। সম্ভাব্য আলোচ্যসূচি সম্পর্কে ওই কর্মকর্তা বলেন, 'অবশ্যই দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে আলোচনা হবে। আর তিস্তার পানিবণ্টন যে আলোচনায় বাংলাদেশের প্রধান এজেন্ডা হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা ও ট্রানজিট বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হবে। বৈঠক থেকে এমন ধারণা দেওয়া হতে পারে, তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যুটি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত ট্রানজিট ইস্যুটিরও সুরাহা হতে পারে না।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, স্থল সীমান্ত চুক্তির আওতায় দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল ও অপদখলীয় ভূমি বিনিময়ের বিষয়েও বাংলাদেশ আলোচনা করতে চায়।
এদিকে গতকাল শনিবার ভারতের পররাষ্ট্রসচিব রঞ্জন মাথাই নয়াদিলি্লতে সাংবাদিকদের জানান, দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও আঞ্চলিক সহযোগিতা এগিয়ে নিতে আলোচনা করবেন। এই বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন ও ট্রানজিট নিয়ে আলোচনা হবে কি না জানতে চাইলে মাথাই বলেন, গত সেপ্টেম্বরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় 'অমীমাংসিত' বিষয়গুলো নিয়েও মালদ্বীপে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.