শেষ মুহূর্তে দা-বঁটি শান দেয়ার হিড়িক

জ দিন শেষে রাত পোহালেই ঈদ। ঈদের নামাজের পর আল্লার সন্তুষ্টির আশায় গবাদিপশু কোরবানি করবেন লাখো মানুষ। কোরবানির জন্য প্রয়োজন ধারালো ছুরি, বঁটি, দা, চাপাতি, কুড়ালসহ অনেক কিছু। দরকার খাইট্টা ও হোগলার পাটি। নগরীর দৈনন্দিন দৃশ্যপট থেকে এই দৃশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। খাইট্টা-হোগলার পাশাপাশি খড়, সবুজ ঘাস, কাঁঠাল পাতা, ভুসি, কুঁড়ার দোকানও ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশাল চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে রাজধানী ঢাকার কামারপাড়াগুলোতে এখন শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। কেউ পুরনো দা-বঁটি ও ছুরি-চাপাতিতে শান দিয়ে নিচ্ছেন।


কেউ আবার নতুন কিনছেন। গতকাল রাজধানীর খিলগাঁও, নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, পুরান ঢাকার বংশাল, নবাবপুর রোড, জনসন রোড, শান্তিনগর বাজার, আজিমপুর, গুলিস্তান, ইংলিশ রোড, যাত্রাবাড়ী, কারওয়ানবাজার ও পলাশী বাজার ঘুরে দা, ছুরি, চাপাতি ও কুড়ালের দোকানে ক্রেতা-বিক্রেতার এ ভিড়ও ছিল লক্ষণীয়।
কারওয়ানবাজারে দা-বঁটি প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতা মোহাম্মদ সেলিম জানান, কিছু দা-বঁটি, ছুরি, চাপাতি, কুড়াল বিক্রি হচ্ছে কেজি হিসেবে। আবার কিছু বিক্রি হচ্ছে পিস হিসেবে। কেজি হিসেবে প্রতিকেজি চাপাতির দাম কাঁচা লোহা ৩০০ টাকা, পাকা লোহা ৪০০ টাকা। একটি চাপাতির ওজন আধা কেজি থেকে দুই কেজি পর্যন্ত হয়। বঁটি প্রতিকেজি ৩০০, দা ৪০০, কুড়াল ২৪০ টাকা কেজি। একটি বঁটির ওজন এক কেজি থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত হয় বলে জানান মোহাম্মদ সেলিম। এছাড়া চীনের তৈরি বড় ছুরি ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা, চাইনিজ কুড়াল সাইজভেদে ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
পাশের দোকানি অরুণ কর্মকার জানান, তাদের দোকানে প্রতিটি দা ১৫০ থেকে ৩৫০, দা ২০০ থেকে ৪০০, ছুরি ৫০ থেকে ২৫০, চাকু ৪০ থেকে ১২০, লোহার কিরিচ ১৪০ থেকে ৩০০, স্টিলের কিরিচ ২৫০ থেকে ৭০০, চামড়া ছাড়ানোর পাতলা চাকু ১২০ থেকে ২৫০, বঁটি ১০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্ডার দিয়ে পাকা লোহায় তৈরি প্রতিটির দাম নেয়া হচ্ছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি। এছাড়া ক্রেতারা লোহা এনে দিলে সেটি দিয়েও ছুরি, চাপাতি, দা, বঁটি তৈরি করে দিচ্ছেন কর্মকাররা।
খিলগাঁও বাজারের কামারের দোকানের অনিমেশ জানান, নতুন কেনার চাইতে মানুষ পুরনো দা-বঁটি শান ও মেরামত করছে বেশি। এক্ষেত্রে ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি নিচ্ছেন তারা।
আজিমপুর কাঁচাবাজারে বঁটির দোকানদার সাইদুল হক বলেন, এখন আর অর্ডার নিচ্ছি না। কাজের চাপে এক সপ্তাহ আগে অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছি। আগে অর্ডার দিয়ে তৈরি করাগুলোই এখন সাপ্লাই দিচ্ছি। তৈরি করাগুলো বিক্রি করছি। আর জরুরি ভিত্তিতে ও পরিচিত ক্রেতাদের পুরনো দা-বঁটিগুলো শান দিয়ে দিচ্ছি।
ইংলিশ রোডের আল্লার দান ছুরি, চাকু, দা ঘরের কারিগর আব্দুল বাতেন গামছা দিয়ে ঘামে ভেজা শরীর মুছতে মুছতে বললেন, আমাগো তো ব্যস্ততা বছরে ওই একবারই হয়। এবার এট্টু বেশি কাস্টমার আইতাছে। তাই ব্যস্ততাটাও বেশি। এলিফ্যান্ট রোডের দোকানি আবু তাহের বলেন, নতুন দা, ছুরি কেনার সঙ্গে কেউ কেউ পুরনোগুলোতেও শান দিতে আসছেন। তাই ব্যস্ততা একটু বেশি।
কারওয়ানবাজারের দোকানি সুকুমার জানান, গতকাল দুপুরের পর হাটে কিছু ক্রেতা নেমেছে। হাতে আর একদিন সময়। সাধারণত মানুষ দা-বঁটি কেনে চান রাইতে। ক্রেতা নামলে এক দিনেই সব মাল শেষ হয়ে যায়। আবার অনেক সময় মাল অবিক্রীতও থেকে যায়। এবার তারা যে হারে দা-বঁটি তৈরি করেছেন সে হারে এখনও বিক্রি শুরু হয়নি। তাই অপেক্ষায় আছে চান রাতের।
খাইট্টা ও হোগলা পাটি : নগরীর ফুটপাত, কাঁচাবাজার, রাস্তা ও মহল্লায় মহল্লায় এখন বসেছে খাইট্টার দোকান। কোরবানির সময় মাংস কাটার জন্য কাঠের যে গুঁড়ি ব্যবহার করা হয় সেটিকে কেউ মুগুর, কেউবা খাইট্টা বলেন। দোকানি ও কসাইরা জানান, তেঁতুল কাঠের খাইট্টা সবচাইতে ভালো। আঁশ খুব শক্ত ও মজবুত হওয়ায় তেঁতুল গাছের গুঁড়ি দিয়েই সাধারণত খাইট্টা বানানো হয়। প্রতিটি খাইট্টার দাম নেয়া হচ্ছে আকার ও স্তরভেদে ১০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত। কারওয়ানবাজারের খাইট্টার দোকানি রহিম বক্স জানান, এখনও বেচাবিক্রি তেমন শুরু হয়নি। তারা আছেন চান রাতের অপেক্ষায়।
খাইট্টার মতোই নগরীর মোড়ে মোড়ে এখন দেখা যায় হোগলা পাতার পাটির দোকান। প্রতিটি পাটি ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস এসব পাটিতে রাখা হয় বলে জানান দোকানিরা।

No comments

Powered by Blogger.