গরুর হাট-নগরীর পশুর হাট জমজমাট বেশি বিক্রি হবে আজই by এস এম আজাদ

'ভাই, কত নিল?', 'কত হইছে?', 'কত দাম?', 'গরু কত?'_রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো তো বটেই, অলিগলিতেও এখন এমন প্রশ্ন শোনা যায়। রাজধানীতে এখন সাধারণ একটি দৃশ্য হচ্ছে কোরবানির গরু বা খাসি কিনে হাট থেকে বাড়ি ফেরা। আর পথচারীদের প্রশ্নে বিরক্ত না হয়ে হাস্যোজ্জ্বল উত্তর দিচ্ছেন ক্রেতারাও। জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাটের বেচাকেনা। আর মাত্র এক দিন। তাই রাজধানীর বাসিন্দারা ছুটছেন শহরের পশুর হাটগুলোতে। তবে গতকাল শনিবার হাটগুলোতে ভালো বেচাকেনা হলেও তাতে মন ভরেনি বিক্রেতা ও ইজারাদারদের।


তাঁরা বলছেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে না। এ কারণে গরুর মূল্য শেষ দিন (আজ) কমে যাওয়ার আশঙ্কায়ও আছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি হাট ঘুরে ক্রেতাদের ব্যাপক সমাগমই দেখা গেছে। আলাপকালে বেশির ভাগ ক্রেতাই গরু বা খাসি কিনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তবে গতকালের বাজারে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদাই ছিল বেশি।
গতকাল সকালে বনানী-কাকলী রেলওয়ে হাট থেকে ৪৫ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছেন মহাখালীর বাসিন্দা মহাব্বত আলী। তিনি বলেন, 'বড় গরুর দাম বেশি। তবে মাঝারি গরুর দাম গত বছরের মতোই আছে।' একই হাটের আরেক ক্রেতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'ভাই, দাম গতবারের চেয়ে বেশি চায়। তাই এখনো কিনি নাই। আগামীকাল (রবিবার) কিনতে পারি।'
গতকাল দুপুরে গাবতলী থেকে ৮৫ হাজার টাকায় একটি গরু কিনে ইন্দিরা রোডের বাসায় ফিরছিলেন মোশারফ হোসেন। সঙ্গে ভাগিনা রুবেল। একজন পথচারী জানতে চাইলেন, 'ভাই, কত হইছে?' রুবেল হেসে বলে, 'পঁচাশি।' ব্যাংক কর্মকর্তা মোশারফ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গরু কিনে একটু বেশি দামই মনে হচ্ছে। তবে গতবারের চেয়ে বেশি না।' তিনি বলেন, 'সারা পথেই লোকজন দাম জিজ্ঞেস করবে_এটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এটাই কোরবানির ঈদের একটা আনন্দ। এই দৃশ্য এখন সবখানেই দেখবেন।'
গাবতলী হাটের গরু ব্যবসায়ী রহমত আলী, আবুল সিকদারসহ কয়েকজন জানান, গরু এখনো আসছে। বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে বিক্রির হার কম বলে মন্তব্য করেন তাঁরা। তবে গতকাল বিকেলে গাবতলী হাটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। হাটের গরু ব্যবসায়ী আনোয়ার মণ্ডল, শফিকুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, গতকাল বিক্রি অনেক বাড়লেও বেশির ভাগ গরুই অবিক্রীত রয়ে গেছে। তারপর আরো গরু আসছে। অভিজ্ঞতার আলোকে তাঁরা বলেন, সবচেয়ে বেশি বিক্রি হবে শেষ দিন (আজ)।
তালতলা বাসস্ট্যান্ড হাট থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কেনেন কাজীপাড়ার বাসিন্দা আবুল কাসেম। তাঁর মতে, এবার দাম সহনীয় পর্যায়েই আছে। গত বছর তিনি একই আকারের গরু কেনেন ৫৪ হাজার টাকা দিয়ে। তাই তিনি গরু কিনে খুব খুশি। চুয়াডাঙ্গা থেকে গত সোমবার চারটি গরু নিয়ে তালতলা হাটে আসেন নাজমুল ইসলাম নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি জানান, ৩৮, ৩৯ ও ৩০ হাজার ৫০০ টাকা করে বিক্রি করেছেন তিনটি গরু। তিনটি গরুই বিক্রি করেন গতকাল। এখন বাকি গরুটির দাম হাঁকাচ্ছেন ৪০ হাজার টাকা। নাজমুলের মতে, এবার গতবারের মতোই গরুর মূল্য। তবে শেষ দিন মূল্য কমতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।
কুষ্টিয়া থেকে দুটি গরু নিয়ে তালতলা হাটে এসেছেন জয়নাল হোসেন। একটি গরু ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি। জয়নাল বলেন, 'ছোট গরুর বিক্রিই বেশি। গতবারের থেইকা দাম বাড়লেও আমাগো লাভ হয় নাই।' তিনি জানান, গরুর খাবারের মূল্যসহ সব খরচই এবার বেড়ে গেছে।
তালতলা হাটের ইজারাদার হাজি আবুল বাশারের প্রতিনিধি রিপন জানান, প্রত্যাশা অনুযায়ী গতকালও বিক্রি হয়নি। তবে গতকাল রাত ও আজ দিনে বাজার বেশ ভালো যাবে বলে আশা করেন তিনি। দায়িত্বরত পুলিশের এসআই নাজমুল ইসলাম জানান, একটি কন্ট্রোল রুম ও দুটি চৌকির মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে হাটে। জাল টাকা পরীক্ষার মেশিনও বসানো হয়েছে।
পরিদর্শনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : গতকাল রাজধানীর গাবতলী, আগারগাঁও, তেজগাঁও পলিটেকনিক, নয়াবাজার ও আরমানিটোলার হাট পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। বিকেলে নয়াবাজারের হাট পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী বলেন, 'রাজধানীতে কোনো অবৈধ পশুর হাট নেই। সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের ইজারা নিয়ে হাটগুলো চলছে।' তিনি হাটগুলোর পরিবেশ দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, 'কোথাও চাঁদাবাজি নেই বা জাল টাকার অভিযোগ পাওয়া যায়নি।' নয়াবাজারের পশুর হাটে দক্ষিণাঞ্চলগামী মানুষের দুর্ভোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এই হাটটি ঐতিহ্যবাহী হাট। বিকল্প কোনো রাস্তা বা বড় মাঠ না থাকার কারণে এখানেই হাট থাকবে।' কোরবানির পশুর হাট পরিদর্শনকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার ও র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান।
চাঙ্গা মৌসুমি ব্যবসা : কোরবানির পশু ও পশুর হাটকে ঘিরে কিছু মৌসুমি ব্যবসাও এখন চাঙ্গা। পশুর হাটের পাশে খড়, ভুসিসহ গরুর বিভিন্ন খাবার, দড়ি, লাঠি, বিভিন্ন ধরনের মালাসহ সাজানোর উপকরণ, জবাইয়ের কাজে ব্যবহার করা ছুরি, চাপাতি, গরু কাটার জন্য গাছের গুঁড়িসহ নানা উপকরণ বিক্রি হচ্ছে দেদার। মৌসুমি বিক্রেতারা রাজধানীর হাটগুলোর কাছে এবং ফেরি করে এসব উপকরণ বিক্রি করছেন। গাবতলী হাটের স্থায়ী দোকানদার সোহরাব হোসেন বলেন, হাটে অন্তত ২০০ ফেরিওয়ালা এসব উপকরণ বিক্রি করছেন। সামনে বসেছে কয়েকটি দোকান। বনানী, আগারগাঁও, তালতলা, বনরূপা আবসিক এলাকা, আজমপুর, বাড্ডা নতুন বাজার, আরমানিটোলাসহ বিভিন্ন হাটে এমন ব্যবসায়ী দেখা যায় অসংখ্য।
তালতলা হাটের সামনে খড় বিক্রি করছেন কিশোরগঞ্জের মোর্শেদ আলীসহ তিনজন। মোর্শেদ জানান, চার দিন ধরে হাটের কাছে থাকলেও বিক্রি হয়নি। গতকালই বিক্রি শুরু হয়েছে তাঁদের। খড়ের বড় আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। ছোটটির মূল্য আট টাকা। তালতলা হাটে ফেরি করে মালা ও দড়ি বিক্রি করছেন মো. দিদার। তিনি জানান, ২০ থেকে ৪০ টাকায় বিভিন্ন ধরনের মালা পাওয়া যায়। আর আকার ও ধরনের ওপর দড়ি পাওয়া যায় প্রায় একই মূল্যে।

No comments

Powered by Blogger.