কাল ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর : জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস

গামীকাল ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সিপাহী-জনতার মিলিত বিপ্লবে নস্যাত্ হয়ে যায় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী ষড়যন্ত্র। আধিপত্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসন থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশ। এদিন সিপাহী-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঢাকা সেনানিবাসের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে আনেন তত্কালীন সেনাপ্রধান ও স্বাধীনতার ঘোষক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে। জাতীয় ইতিহাসের এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।


৭ নভেম্বর সংঘটিত হওয়ার পর প্রতিটি সরকার দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেছে। কিন্তু ড. ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ দিনের সরকারি ছুটি বাতিল করে এবং দিবসটি পালন করা থেকে
বিরত থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারও তা পালন করছে না। এর আগে ’৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারও দিবসটি পালন করা থেকে বিরত ছিল। বাতিল করেছিল সরকারি ছুটি।
এবার জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস এমন এক সময় পালিত হচ্ছে যখন দেশ নানামুখী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জালে জড়িয়ে পড়েছে। আগ্রাসী শক্তি তাদের থাবা বিস্তারে অনেকটাই সফল হয়েছে। ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্টের নামে অবাধ করিডোর দিয়ে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে।
দিনটি উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদসহ জাতীয় নেতারা বিবৃতি দিয়েছেন। ৭ নভেম্বরের গুরুত্ব এবং তাত্পর্য তুলে ধরে গণমাধ্যমে বিশেষ অনুষ্ঠান, ক্রোড়পত্র প্রচার ও প্রকাশ করেছে। দিবসটি ঈদের দিন হওয়ায় বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন এর আগেই তা পালন করেছে।
১৯৭৫ সালের ৩ থেকে ৬ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর অনিশ্চিত অবস্থা বিরাজ করছিল। হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীর একটি উচ্চাভিলাষী দল সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে বন্দি করে এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটালে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনা সাধারণ জনগণ ও সিপাহীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে। জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর সর্বমহলে, বিশেষত সিপাহীদের কাছে ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। ফলে তারা পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ ও জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ৬ নভেম্বর মধ্যরাতে ঘটে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ এক বিপ্লব, যা ইতিহাসে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে স্থান লাভ করেছে। দেশবাসী সেদিন জিয়ার হাতেই তুলে দিয়েছিল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও মহাসচিবের বাণী : ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে বিএনপি চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, ৭ নভেম্বর জাতীয় জীবনের এক ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সৈনিক-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল জাতীয় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় বুকে নিয়ে। তাই ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিপ্লব অত্যন্ত তাত্পর্যমণ্ডিত। স্বাধীনতাউত্তর রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, তত্কালীন ক্ষমতাসীন মহলের নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে দেশের স্বাধীনতা বিকিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা এবং ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য মানুষের বাক-ব্যক্তি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে গলাটিপে হত্যা করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়। ফলে জনমনে চরম অশান্তি ও হতাশা নেমে আসে। বাকশালী সরকার চরম অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী পন্থায় মানুষের ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদকে দমন করে। দেশমাতৃকার এই চরম সঙ্কটকালে ’৭৫-এর ৩ নভেম্বর আধিপত্যবাদের এদেশীয় এজেন্টদের কূটকৌশলে মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে সপরিবারে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করা হয়। এই অরাজক পরিস্থিতিতে স্বজাতির স্বাধীনতা রক্ষায় অকুতোভয় দেশপ্রেমিক সৈনিক এবং জনতার ঢল রাজপথে এক অনন্য সংহতির স্ফুরণে ৭ নভেম্বর জিয়া মুক্ত হন। এই পটপরিবর্তনে রাষ্ট্রপতি জিয়ার নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত হয় ও গণতন্ত্র অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়। মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে আসে। আধিপত্যবাদী শক্তি ও তাদের এদেশীয় অনুচররা উদ্দেশ্য সাধনের পথে কাঁটা মনে করে ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াকে হত্যা করে। জিয়া শাহাদাত বরণ করলেও তার আদর্শে বলীয়ান মানুষ দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় এখনও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। বর্তমানে আবারও আধিপত্যবাদী শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় শিখণ্ডি বসিয়ে দিয়ে একের পর এক গোপন চুক্তি সম্পাদন করে গোটা দেশকে গ্রাস করতে চাচ্ছে। তাই আমি মনে করি ৭ নভেম্বরের চেতনায় সব জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং আধিপত্যবাদী আগ্রাসন প্রতিরোধ করে জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি। এই দিবসে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অপর এক বিবৃতিতে ৭ নভেম্বরের দিনে দেশবাসীসহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে তাদের সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। তিনি বলেন, আজকের এই দিনে দেশবাসী সবাইকে আহ্বান জানাই, যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭৫ সালে আমরা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, সেই একই চেতনাকে বুকে ধারণ করে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় আবার সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমিরের বাণী : যথাযোগ্য মর্যাদায় ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনে এ দিবসটির গুরুত্ব ও তাত্পর্য অপরিসীম। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশের সিপাহী-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে হেফাজত করেছিল। সেদিন এদেশের সিপাহী-জনতা আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল তা চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে। ৭ নভেম্বরের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশবাসী ভবিষ্যতেও এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে হেফাজত করবে ইনশাল্লাহ।
৭ নভেম্বর উপলক্ষে এছাড়া বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ ভাসানী), বাংলাদেশ ন্যাপ, জাসদ ইত্যাদি সংগঠন।

No comments

Powered by Blogger.