ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বর কাল

গামীকাল সোমবার ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বর। ১৯৭৫ সালের শেষদিকে নবীন রাষ্ট্র বাংলাদেশে শুরু হয় রক্তাক্ত রাজনৈতিক পালাবদল। এরই ধারাবাহিকতায় সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এই দিনে ক্ষমতা সংহত করেন। এরপর তাঁর হাত ধরেই দেশে সামরিক শাসনের পালা শুরু হয়। এ দিনটিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে থাকে। সে কারণে ভিন্ন ভিন্ন নামে দিবসটি পালন করে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।
জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দিনটিকে 'জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস' হিসেবে পালন করে। আওয়ামী লীগ দিবসটি পালন করে 'মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস' হিসেবে। অন্যদিকে ৭ নভেম্বরের সেনা অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) 'সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান দিবস' হিসেবে পালন করে দিনটি।
দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি ১০ দিনের কর্মসূচি পালন করছে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ৭ নভেম্বরের চেতনায় সব জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষের মৌলিক অধিকার, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।
১৯৭৬ সাল থেকে এ দিনটি জাতীয়ভাবে পালিত হয়ে আসছিল। বিএনপির শাসনামলে ৭ নভেম্বর সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। বিগত আওয়ামী লীগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বাতিল করা হয় এই ছুটি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকার ছুটির তালিকায় দিনটি রাখেনি। এবার ৭ নভেম্বর ঈদুল আজহা। ঈদ উপলক্ষে তিন দিনের সরকারি ছুটি শুরু হচ্ছে রবিবার।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে। এর মধ্য দিয়ে সদ্য স্বাধীন দেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তন ঘটে। এর আড়াই মাস পর ৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটে। কারাগারে নিহত হন জাতীয় চার নেতা। এসব ঘটনার একপর্যায়ে তখনকার সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দি হন। পালাবদলের সেই উত্তাল ঘটনাপ্রবাহে ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতা একসঙ্গে রাস্তায় নেমে আসে। মুক্ত হন জিয়াউর রহমান।
৬ ও ৭ নভেম্বর সংঘটিত অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন জাসদের সঙ্গে যুক্ত মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহের। বন্দিদশা থেকে জিয়াকে মুক্ত করেন তিনি। এরপর অতি দ্রুত নানা ঘটনার মধ্য দেশে শুরু হয় সামরিক শাসন। জিয়াউর রহমান প্রথমে উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদে আসীন হন।
একপর্যায়ে বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ আবু সায়েমকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতি হন জিয়া। অন্যদিকে বন্দিদশা থেকে জিয়াকে মুক্ত করলেও কর্নেল তাহেরকে দেশদ্রোহের অভিযোগে কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি করা হয় এবং ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে।
বিএনপির কর্মসূচি : গত ২ নভেম্বর আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে বিএনপির কর্মসূচি শুরু হয়। ওই দিন বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপি আলোচনা সভার আয়োজন করে। ৪ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে আলোচনা সভা হয়। ৭ নভেম্বর সকালে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১০টায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণের কর্মসূচি রয়েছে।
তবে কোরবানির ঈদের জন্য ৬ নভেম্বর থেকে চার দিন অন্য কর্মসূচি স্থগিত থাকবে। ১০ নভেম্বর থেকে বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলো আলোচনা সভাসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালন করবে। সর্বশেষ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে কর্মসূচির সমাপ্তি টানা হবে। তবে শোভাযাত্রার দিনক্ষণ এখনো ঠিক করেনি দলটি।
বিএনপি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এর মধ্যে নানা কর্মসূচি পালন শুরু করেছে।

No comments

Powered by Blogger.