দক্ষিণাঞ্চলে কোরবানির পশুর হাট, পথে পথে চাঁদাবাজি

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) পরিচালিত নগরীর জোড়াগেটে কোরবানির পশুর হাট শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে। গতকাল দিনভর গরু-ছাগল বিকিকিনি হয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে যারা হাটে গরু নিয়ে এসেছেন, পথে পথে তাদের চাঁদা দিতে হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন। হাটের চারপাশে পুলিশের পাহারা রয়েছে। নগদ অর্থের নিরাপত্তার লক্ষ্যে সোনালী ব্যাংক বুথ স্থাপন করেছে। বিকালের পর থেকে ট্রাক ও পিকআপে বিভিন্ন স্থান থেকে বড় সাইজের গরু আসছে।


নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার পেরুলি এলাকার ইমদাদ জানান, তিনি মিনি ট্রাকে ১৫টি গরু এনেছেন। পেরুলি থেকে জোড়াগেটে গরুগুলো আনতে তিনটি স্থানে তাকে ২০০ এবং ১০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়েছে। একদল যুবক এই চাঁদা নিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। একই এলাকার মোসলেম মিয়া জানান, তিনি একসঙ্গে ১০টি গরু এনেছেন। দুটি স্থানে তাকে ২০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়েছে। চাঁদা না দিলে ট্রাক আটকে রাখা হবে বলে চাঁদা আদায়কারীরা তাকে ভয় দেখায়। উপায়ান্তর না দেখে তিনি চাঁদা দিয়েছেন। নওয়াপাড়ার আফজাল জানান, তিনি একসঙ্গে ২০টি গরু এনেছেন। দুটি স্থানে তার কাছ থেকে ২০০ এবং ১৫০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রতিটি গরুর ট্রাকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। পুলিশও জানে, কিন্তু কিছু বলে না।
খুলনার দীঘলিয়া উপজেলার গাজিরহাটের গরু ব্যবসায়ী আনিছ অভিযোগ করে বলেন, বেলা ১১টায় তিনি ৯টা গরু নিয়ে জোড়াগেটের উদ্দেশে রওনা দিলে খেয়াঘাট এলাকায় তার কাছ থেকে একদল যুবক ২০০ টাকা করে চাঁদা নিয়েছে। রূপসা উপজেলার রামনগর এলাকার শুকুর মৃধা জানান, ৬টি গরু নিয়ে জোড়াগেটে আসার পথে কয়েকজন যুবক তার কাছ থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদা নিয়েছে।
জেলা পুলিশের সূত্র জানায়, এবারের পশুর হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে তেরখাদা উপজেলা সদরের ইখুড়ী কাটেঙ্গাবাজার, রূপসা উপজেলার এলাইপুর মোড়, আইচগাতী আমতলা, রূপসা ডিগ্রি কলেজসংলগ্ন এলাকা, পূর্ব রূপসাবাজার, বটিয়াঘাটা উপজেলার খারাবাদ-বাইনতলা, উপজেলা সদর, ফুলতলা উপজেলা সদর, ডুমুরিয়া উপজেলার শাহাপুর, খর্ণিয়া, আঠারোমাইল, চুকনগর, বানিয়াখালী, দীঘলিয়া উপজেলার কেটলাবাজার, পথের বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ, এমএ মজিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ, দাকোপ উপজেলার বাজুয়াবাজার, চালনাবাজার, পাইকগাছা উপজেলার বাকাবাজার, চাঁদখালীবাজার, কাশিমনগরবাজার, কয়রা উপজেলার ঘুগরাকাটিবাজার, দেউলিয়াবাজার ও খুলনা মহানগরীর জোড়াগেট পাইকারি কাঁচাবাজার।
মহানগরীসহ জেলার ২৪টি কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তার জন্য ৩৮৩ কর্মী নিয়োগ করা হবে। এছাড়া সাদা পোশাকে র্যাব, পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে। জালটাকা অনুপ্রবেশ রোধে জেলার পশুর হাটগুলোতে পুলিশ পর্যায়ে ক্রমে স্ক্যানার মেশিন স্থাপন করা হবে। এ ধরনের উদ্যোগ খুলনায় এই প্রথম। এরই মধ্যে উপজেলা পর্যায়ের পশুর হাটগুলো জমতে শুরু করেছে।
খুলনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম এ প্রতিবেদককে জানান, কোরবানির পশুর হাটে এবং হাটে যাওয়া-আসার পথে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তার দেয়া তথ্যমতে, প্রত্যেক হাটে একজন অফিসারের নেতৃত্বে সাতজন সশস্ত্র সিপাই এবং প্রত্যেক উপজেলায় একজন অফিসারের নেতৃত্বে পাঁচজন সশস্ত্র পুলিশ সদস্য গাড়িযোগে টহল দিচ্ছেন। জেলার গোয়েন্দা পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর শফিউল্লাহ মোল্লা জানান, জালটাকা অনুপ্রবেশ রোধে পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটি হাটে পুলিশের তত্ত্বাবধানে স্ক্যানার মেশিন স্থাপন করা হয়েছে।
র্যাবের সিনিয়র সহকারী সুপার মো. কামরুল ইসলাম জানান, ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তার জন্য র্যাবের গাড়ি টহল দিচ্ছে। সাপ্তাহিক পশুর হাটগুলোতে স্বাভাবিক টহল চলছে। তিনি বলেন, জালটাকা প্রতিরোধে র্যাবের গোয়েন্দা কর্মীরা নজরদারি অব্যাহত রেখেছেন।
খুলনা সিটি করপোরেশনের বাজার সুপার জানান, ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত নগরীর জোড়াগেট পাইকারি কাঁচাবাজারে পশুর হাট বসবে। অন্যান্য বারের মতো এখানেও পুলিশ ক্যাম্প ছাড়া করপোরেশনের ৪০ নিরাপত্তা কর্মী দায়িত্ব পালন করছেন।

No comments

Powered by Blogger.