জাতীয় বৌদ্ধ মহাসম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী-ধর্মীয় সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করে। তাই তারা ক্ষমতায় এলে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করে। গতকাল শনিবার রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান ও জাতীয় বৌদ্ধ ধর্মীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। তিনি বলেন, তার সরকার বাংলাদেশকে উদারপন্থি, গণতান্ত্রিক এবং অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনার দেশে প্রতিষ্ঠা করেছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ শান্তি এবং ভ্রাতৃত্ববোধের দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী অভিমত প্রকাশ করেন।


বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জিয়ানয়ি উপস্থিত ছিলেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগেরবার তার সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে (১৯৯৬-২০০১) আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ মঠের জন্য এক বিঘা জমি বরাদ্দ করেছিল। একই উদ্দেশ্যে আবার এক বিঘা জমি দেওয়া হচ্ছে। তার মন্ত্রিসভায় দু'জন বৌদ্ধ
ধর্মাবলম্বী মন্ত্রী রয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, তার সরকার বাংলাদেশের সব ধর্মের মানুষের জন্য কাজ করছে। মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, '৭১-এ সব ধর্মের মানুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছিল। বাংলাদেশে সব সম্প্রদায়ের নাগরিক স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে।
বাংলাদেশের সংবিধানে সব ধর্মের অধিকার রক্ষা করে ধর্মনিরপেক্ষতা রাখা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'মাঝে এ অধিকার ছিল না। মৌলবাদকে উস্কে দেওয়া এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য জিয়াউর রহমান সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করেন।'
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা সংবিধানের সংশোধন করে আগের চেতনায় ফিরিয়ে এনেছি।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমাদের সংবিধান দিয়ে গিয়েছিলেন। সে সংবিধানে তিনি সব ধর্ম পালনের সমান অধিকার দিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও মাঝখানে একটু গোলমাল হয়েছিল। এবার আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংবিধান সংশোধন করে সব ধর্ম পালনের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, 'আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি। গ্যাস উৎপাদনও বৃদ্ধি করেছি। চাহিদা প্রতি বছর বেড়ে যাচ্ছে। তাই সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা গ্যাসকূপ খনন করছি। তা ছাড়া ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত করতে ইতিমধ্যে আমরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ফ্লাইওভার নির্মাণ করে এ শহরকে যানজটমুক্ত করার চেষ্টা করছি।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'ধর্মেরই মূল মন্ত্র হচ্ছে শান্তি। আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে এ উপমহাদেশেই মহামতি গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাব হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসে বাংলাদেশ একটি অনন্য স্থান। আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বৌদ্ধ ধর্ম দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছে। পণ্ডিত অতীশ দীপংকর, শীলভদ্র, কমলশীল এ বাংলাদেশেরই সন্তান এবং আমরা তাদের জন্য গর্বিত। তিনি বলেন, এখানে একটি দৃষ্টিনন্দন বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করা হবে যার ফলে ধর্মচর্চা ও সমাজকর্ম পরিচালনার পথ সুগম হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট ফান্ডে এক কোটি টাকা দিয়েছিল এবং থাইল্যান্ড থেকে ৩৫৩টি বুদ্ধ মূর্তি বিনাশুল্কে এখানে আনার ব্যবস্থা করেছিল। তিনি বলেন, এবারও তার সরকার ৭৩৩টি বৌদ্ধ বিহার, ক্যাং এবং প্যাগোডার উন্নয়ন ও সংস্কার এবং বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের স্থায়ী আমানত হিসেবে দেড় কোটি টাকা প্রদান করেছে।
বৌদ্ধ ধর্মীয় মহাসম্মেলনের সাফল্য কামনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহামতি বুদ্ধের অহিংসার বাণী অনুসরণ করে দেশের অগ্রগতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
পরে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ধম্মাসেন মহাথেরোর কাছে আন্তর্জাতিকভাবে কঠিন চীবর হস্তান্তর এবং বাংলাদেশ বৌদ্ধ ফেডারেশনের ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে তাকে মহামতি বুদ্ধের একটি মূর্তি উপহার দেওয়া হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ফলক উন্মোচন করে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

No comments

Powered by Blogger.