তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগকেও আসতে হবে by লোটন একরাম

বারও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই। আওয়ামী লীগকেও সে নির্বাচনে আসতে হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে। তিনি হুশিয়ার করে দিয়ে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবেন না। এ ব্যবস্থা বহাল রাখতে প্রয়োজনে আরও কঠোর আন্দোলনে যাবেন। দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বলেন, এই সরকারের পক্ষে এ সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়। ইনশাল্লাহ বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতিমুক্ত থেকে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। শুধু আওয়ামী লীগ-বিএনপি নয়, ছোট-বড় সব দলের মতামত নিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানান তিনি। গতকাল সোমবার সিলেট অভিমুখে বিএনপির রোডমার্চে বিভিন্ন পথসভায় খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। প্রথম দিনে ২৬৫ কিলোমিটার পথ রোডমার্চের নেতৃত্ব দেন বিএনপি চেয়ারপারসন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জনসভার মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম রোডমার্চ। গতকাল ছয়টি পূর্বনির্ধারিত পথসভায়_ নারায়ণগঞ্জের তারাবো, নরসিংদীর ইটাখোলা, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোট্টাপাড়া, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের শেরপুরে বক্তব্য রাখেন তিনি। এছাড়া কয়েকটি অনির্ধারিত স্থানে গাড়িতে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন। পুলিশ বিএনপির এ কর্মসূচিতে সার্বিক নিরাপত্তা দিয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে ২৭ সেপ্টেম্বর নয়াপল্টনে চার দলের সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া। আগামী ১৮, ১৯ ও ২০ অক্টোবর রাজশাহী অভিমুখে দ্বিতীয় রোডমার্চে যাবে দলটি। এর আগে ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে
রোডমার্চ করে বিএনপি।
সরকার পতনের আন্দোলনে সবাইকে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। '৭৪-এর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। তাই আন্দোলনের মাধ্যমে এদের হটাতে হবে। এ জন্য আমি রাস্তায় নেমে এসেছি। মা-বোনদের অনুরোধ করব, আপনারাও রাস্তায় নেমে আসুন। তাহলে সরকারকে দ্রুত পদচ্যুত করা যাবে।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করতে গতকাল রোডমার্চ শুরু হয়। কর্মসূচিতে জোট শরিক, সমমনা দল ও নতুন মিত্রসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে সিলেট অভিমুখে রোডমার্চ কর্মসূচি শুরু করেন খালেদা জিয়া। ঢাকা থেকে বের হওয়ার প্রতিটি রাস্তায় অসংখ্য মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ছিল অগণিত সাজানো তোরণ। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নির্বিঘ্নে রোডমার্চের প্রথম দিন অতিবাহিত হয়েছে। রোডমার্চ নির্বিঘ্ন করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহযোগিতা করেছে। তবে বিএনপির 'অব্যবস্থাপনা' লক্ষ্য করা গেছে। কর্মসূচিতে ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) একটি টিম তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত ছিল।
খালেদা জিয়া গাড়িবহর নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার হাইওয়ে ইন রেস্ট হাউসে যাত্রাবিরতি নেন। সেখানে খালেদা জিয়াসহ দলীয় নেতারা মধ্যাহ্নভোজ করেন। এরপর হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের শেরপুরে জনসভার পর রাত ১১টা ২০ মিনিটে সিলেট সার্কিট হাউসে পেঁৗছান তিনি। সেখানে সিলেট বিএনপি নেতারা তাকে স্বাগত জানান। সার্কিট হাউসে রাতযাপন করেন তিনি। আজ মঙ্গলবার দুপুরে হজরত শাহজালালের (রহঃ) মাজার জিয়ারত করবেন তিনি। তারপর জনসভা শেষে রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি অগ্রবর্তী দল প্রতিটি পথসভাস্থলে আগে গিয়ে সেখানকার প্রস্তুতি দেখভাল করে। এ দলে রয়েছেন যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লা বুলু, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, যুগ্ম সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু প্রমুখ।
এ রোডমার্চে চারদলীয় ঐক্যজোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রেদোয়ান আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধানসহ সমমনা দল ও পেশাজীবী নেতারা অংশ নেন।
এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামুসজ্জামান দুদু, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লা বুলু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতারা রোডমার্চে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জের তারাবো : খালেদা জিয়া দুপুর ১২টায় ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের তারাবো পেঁৗছান। স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডে প্রথম পথসভায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবি জানান তিনি। বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।
খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। তাদের ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে। তারা ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসেনি। তাদের যেসব প্রভু ক্ষমতায় বসিয়েছে, তারাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নয় দাবি করে তিনি বলেন, এ কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ কমিশন। তারা এ ধরনের কমিশন মানবেন না। তাদের মেয়াদও শেষ। এখন শুধু আওয়ামী লীগ, বিএনপি নয়, সব ছোট-বড় দলের মতামত নিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।
এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপি নেতা কাজী মুনীরুজ্জামান। কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার বক্তব্য রাখেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলায় তাঁত শিল্পের নাজুক অবস্থার জন্য সরকারের নীতিকে দায়ী করেন তিনি। বলেন, সরকারের ভুল নীতির কারণে বস্ত্র ও তাঁত শিল্প ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। শ্রমিকরা বেকার হয়েছে।
নরসিংদীর ইটাখোলা : 'সরকার সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিয়েছে' বলে স্থানীয় জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, তারা এখন দেব- দেবীতে বিশ্বাস করে। এরই মধ্যে তারা পূজা-পার্বণও শুরু করে দিয়েছে। আমরা আল্লাহর ওপর ইমান রেখে দেশের মানুষের মঙ্গল ও কল্যাণে কাজ করতে চাই। পূর্বনির্ধারিত রোডমার্চ রুটের দ্বিতীয় পথসভায় বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।
মিনিট দশেকের বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, এ নরসিংদী ছিল তাঁতপ্রধান এলাকা, শিল্পপ্রধান এলাকা। কিন্তু গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে না। সরকার মূলত অন্যদের মালিক বানিয়ে আপনাদের শ্রমিক বানিয়ে রাখতে চায়।
দ্রব্যমূল্যের বাড়তি টাকা এমপি-মন্ত্রীদের পকেটে চলে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় আসে তারা শুধু দুর্নীতি ও লুটপাট করে। তাদের লুটপাটে দেশ দেউলিয়া হতে চলেছে।
এর আগে বিকেল পৌনে ৩টায় খালেদা জিয়া নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার ইটাখোলা বাসস্ট্যান্ডে বক্তব্য রাখেন। দল থেকে বহিষ্কৃত মহাসচিব প্রয়াত আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে মান্নান ভূঁইয়ার বৃহৎ প্রতিকৃতি দেখা গেছে। সেখানে লেখা ছিল_ শিবপুরের মাটি, মান্নান ভূঁইয়ার ঘাঁটি।
জেলা বিএনপি সভাপতি খায়রুল কবির খোকনের সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা শিরীন সুলতানা প্রমুখ। এছাড়া নরসিংদীর মাধবদী ও পলাশে দুটি অনির্ধারিত পথসভায় বক্তব্য রাখেন তিনি।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব : খালেদা জিয়া বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন এদেশে হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগকেও আসতে হবে। সোমবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে এক পথসভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিকেল ৪টায় খালেদা জিয়া ভৈরবের আবেদিন হাসপাতালের কাছে বালুর মাঠে মঞ্চে আসেন। সেখানে তিনি বক্তব্য রাখেন।
খালেদা জিয়া বলেন, সরকার কারচুপি করে ক্ষমতায় আসতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন চালু করতে চায়। এ মেশিনে ধানের শীষে ভোট দিলে নৌকায়, আবার নৌকায় দিলে ধানের শীষে করা যায়। সে জন্য ইভিএম দিয়ে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
বিএনপি ভৈরব থানার সভাপতি রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুক, জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শরীফুল আলম প্রমুখ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্বরোড : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্বরোড মোড়ে জনসভায় খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার 'অবৈধ' ও 'স্বৈরাচারী'। প্রতিবেশী একটি দেশের বস্তাভর্তি টাকায় ক্ষমতায় এসে তারা তাদের খুশি করতে ব্যস্ত।
পথসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপি সভাপতি হারুন আল রশীদ। পরে খালেদা জিয়া আশুগঞ্জে খড়য়ালা বাসস্ট্যান্ডের কাছে সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমানের স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় যাত্রাবিরতি করেন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার হাইওয়ে ইন রেস্ট হাউসে। সেখানে তিনিসহ দলীয় নেতারা মধ্যাহ্নভোজ করেন।
নির্ধারিত পথসভা ছাড়াও নরসিংদীর হাটখোলা, পলাশ, হবিগঞ্জের মাধবদীসহ কয়েকটি অনির্ধারিত পথসভায় বক্তব্য রাখেন তিনি।
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ : হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের পথসভায় খালেদা জিয়া পাজেরো জিপ থেকে বক্তব্য রাখেন। এ পথসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়সল।
মৌলভীবাজারের শেরপুর : রাতে মৌলভীবাজারের শেরপুরের সর্বশেষ পথসভায় খালেদা জিয়া বলেন, রোডমার্চ কর্মসূচির পর সরকার হটাতে আন্দোলনের 'ফাইনাল' কর্মসূচি দেওয়া হবে। ওই কর্মসূচির জন্য সবাইকে প্রস্তুত হতে হবে। এ সরকারকে হটিয়ে দেশপ্রেমিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে 'ব্যর্থ' আওয়ামী লীগ আগামীতে আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। জনগণ চার দলকেই বিজয়ী করবে। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সরকার তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, এখনও সময় আছে, জনগণকে আর কষ্ট দেবেন না। ক্ষমতা ছেড়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। বিএনপি আন্দোলন চায় না, চায় শান্তিপূর্ণ পথে ক্ষমতা হস্তান্তর হোক।
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি আয়োজিত এ পথসভায় কয়েক হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক উপস্থিত ছিলেন। রাত ১০টায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের পথসভা থেকে শেরপুর এসে পেঁৗছে। অনেক রাত পর্যন্ত মহাসড়কের দু'পাশে হাজারো নেতাকর্মী দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে করতালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগের দাবি ছিল। এখন সেই নির্দলীয় সরকার খারাপ কেন? যে অজুহাত দেখিয়ে সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করার কথা বলছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল না। তারা ছিল অবৈধ অসাংবিধানিক সরকার। তাই ওই সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলা যায় না।
সিলেট ও মৌলভীবাজারের উন্নয়নের পেছনে সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের অবদানের কথাও স্মরণ করেন খালেদা জিয়া। সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছেলে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি নাসের রহমানের সভাপতিত্বে সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ : বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের বালুর মাঠে পথসভা শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর রওনা হলে বিশ্বরোড বাসস্ট্যান্ডের কাছে মহাসড়কের ওপর কয়েক কর্মী-সমর্থক কাফনের কাপড় গায়ে শুয়ে পড়েন। তারা দল থেকে বহিষ্কৃত ভৈরব থানা সভাপতি গিয়াস উদ্দিনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন। পরে বিরোধীদলীয় নেতার পুলিশ স্কোয়াড তাদের সরিয়ে দেয়।
বেলাবতে দু'গ্রুপে সংঘর্ষ : নরসিংদীর বেলাবতে বিএনপি দু'গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ধুকুন্দি চিপাঘাট ও বারৈচা বাসস্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হন। জানা গেছে, সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত সাবেক সাংসদ সাখাওয়াত হোসেন বকুল সমর্থক এবং গত নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীনের সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। সংস্কারপন্থি নেতা হয়েও রোডমার্চে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে আসায় ক্ষুব্ধ জয়নালের সমর্থকরা প্রতিবাদ জানালে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
অব্যবস্থাপনা : সিলেট অভিমুখে খালেদা জিয়ার রোডমার্চে অব্যবস্থাপনায় সোমবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দীর্ঘ গাড়িজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের তারাব এলাকায় রোডমার্চ সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বহনকারী গাড়ি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জানা গেছে, ছাত্রদলের একটি মাইক্রোবাস খন্দকার মোশাররফের গাড়িটিকে চাপা দেয়। পরে ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার গাড়িতে করে খন্দকার মোশাররফ রোডমার্চে অংশ নেন।
এছাড়া মিডিয়া টিমের গাড়িগুলোকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে সঙ্গে যুক্ত না করায় সাংবাদিকরা কয়েক কিলোমিটার পেছনে গাড়িজটের মধ্যে পড়েন। ফলে নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রভৃতি স্থানের পথসভায় সাংবাদিকরা খালেদা জিয়া বক্তব্য দেওয়ার সময়ে পেঁৗছাতে পারেননি। অব্যবস্থাপনার কারণে ঢাকা থেকে আসা বেসরকারি টিভি চ্যানেলের গাড়িগুলো মূল বহরের পেছনে পড়ে যায়।
এ ব্যাপারে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সাংবাদিকরা অবশ্যই পুলিশ প্রটেকশনের বাইরে থাকবে। তারা কীভাবে সংবাদ সংগ্রহ করবেন, তা তাদের নিজস্ব বিষয়।
এরকম বক্তব্যে সাংবাদিকরা ক্ষুব্ধ হন। তারা এ বিষয়টি দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান ও বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে টেলিফোনে জানান।
আজ সিলেটের জনসভায় ভাষণ : লিয়াকত শাহ ফরিদী, সিলেট ব্যুরো জানান, খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সিলেটের চারদলীয় জোট। আজ দুপুর ২টায় সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বক্তব্য রাখবেন তিনি। সমাবেশের নিরাপত্তায় মাঠে থাকবে ৫ শতাধিক দলীয় নিরাপত্তা কর্মী। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে সমাবেশ ও আশপাশ এলাকায় লাগানো হয়েছে ১২৫টি মাইক। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয়েছে বড় পর্দার ৫টি প্রজেক্টর। ঢাকার নেতাকর্মীদের জন্য ভাড়া করা হয়েছে ৫টি আবাসিক হোটেল ও ৭টি কমিউনিটি সেন্টার।
সমাবেশ উপলক্ষে নতুন সাজে সজ্জিত করা হয়েছে গোটা সিলেট নগরী। নগরীর মোড়ে মোড়ে তোরণ, ব্যানার, বিল বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। সমাবেশে লোকজনের সমাগম ঘটাতে পার্শ্ববর্তী জেলা-উপজেলাগুলোর নেতাকর্মীদের জন্য কয়েক হাজার যানবাহন ভাড়া করা হয়েছে। ভাড়া করা যানবাহনের মধ্যে রয়েছে বাস, মিনি বাস ও ট্রাক। প্রায় ৫ লাখ মানুষের সমাগম ঘটিয়ে এ সমাবেশকে স্মরণীয় করে রাখতে চায় সিলেট বিএনপি।
জানা গেছে, ঢাকা থেকে আসা নেতাকর্মীদের জন্য ভাড়া করা হয়েছে হোটেল রোজভিউ, মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল, ফরচুন গার্ডেন, সুপ্রিম ও গার্ডেন ইন। এছাড়া সানরাইজ কমিউনিটি সেন্টার, সাজিদ আলী কমিউনিটি সেন্টার, শ্যামলী, আগ্রা, সোনারগাঁও ও শাহজালাল কনভেনশন সেন্টার ভাড়া করা হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা উঠবেন রোজভিউ হোটেলে। আজকের সমাবেশের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী জনসভার প্রস্তুতি সম্পর্কে সমকালকে জানান, সিলেটে স্মরণকালের মহাসমাবেশ করার সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আশা করি সমাবেশে ৫ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে।
সমাবেশে নিরাপত্তা প্রসঙ্গে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার অমূল্যভূষণ বড়ূয়া সমকালকে জানান, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সমাবেশস্থলসহ সিলেট নগরীতে মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি র‌্যাব সদস্য ও গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারি থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.