পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন স্থগিত

দন্তে ধরা না পড়লেও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করেছে বিশ্বব্যাংক। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে বিশ্বব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে নদী শাসন, পরামর্শক নিয়োগ ও প্রাক-যোগ্যতা যাচাই নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে বিশ্বব্যাংক অভিযোগ করেছে। তারা আপাতত অর্থায়ন স্থগিত করেছে।এদকে বিশ্বব্যাংকের তোলা অভিযোগের বিষয়ে গতকাল দুপুরে নিজ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, এ সরকারের আমলে এ প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি। চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে হওয়া দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে বলেছে বিশ্বব্যাংক। এই তদন্তের কারণে সেতুর নির্মাণকাজ হয়তো পিছিয়ে যাবে।


গতকাল অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের বিষয়গুলো নিয়ে সরকার তদন্ত করবে। ইতিমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কাজ শুরু করেছে। পদ্মা সেতু প্রকল্প তদারকির জন্য প্রাক-নির্বাচনী তালিকায় থাকা কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের দুর্নীতি তদন্তে বিশ্বব্যাংক কানাডা পুলিশকে অনুরোধ করলে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাংলাদেশের পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণ সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে বিশ্বব্যাংক। সেখানে দুর্নীতির বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত ঋণ সহায়তা স্থগিতের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯০ কোটি ডলার। দেশের বড় এই নির্মাণ প্রকল্পে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার জন্য এরই মধ্যে চুক্তিও করেছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক ছাড়াও এডিবি ৬১ কোটি, জাইকা ৪০ কোটি এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ১৪ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে এ সেতু নির্মাণের জন্য। ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে পরিচালিত সমীক্ষায় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতেই অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে দুর্নীতি তদন্তের পর ঋণ সহায়তা মিলবে_বিশ্বব্যাংকের এমন অবস্থানের কারণে পুরো প্রকল্পই ঝুলে গেল। পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা হতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের বলার কিছু নেই।' তাঁর মতে, কালক্ষেপণ না হলে মূল সেতু নির্মাণের কাজ আগামী মার্চ-এপ্রিল থেকে শুরু করা সম্ভব হতো।
প্রসঙ্গত পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলা ঢাকা ও পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এ সেতু বাস্তবায়িত হলে জাতীয় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে, যা দারিদ্র্য নিরসন এবং দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

No comments

Powered by Blogger.