জকিগঞ্জে সুপারির ফলন কম, দাম বেশি by এম. আব্দুল্লাহ্ আল মামুন,

মাছ-বাঁশ-সুপারি, জকিগঞ্জের বেটাগিরি', 'বাঁশ-সুপারি-ধান, জকিগঞ্জের প্রাণ'_এ দুটি প্রবাদ জকিগঞ্জের জন্য প্রযোজ্য হলেও মাছ ও বাঁশ এখান থেকে ইতিমধ্যে হারিয়ে গেছে। তবে সুপারির জন্য স্থানটি এখনো খ্যাত। এখন চলছে জকিগঞ্জে সুপারি উৎসব। উপজেলার প্রতিটি বাজারে হাটবারে বসে এর বিপুল আয়োজন।জকিগঞ্জের যেদিকেই তাকানো হোক, চোখে পড়বে সারি সারি সুপারি বাগান। বাড়ির আশপাশের খালি জায়গা, উঠান, ক্ষেতের আইল, রাস্তার পাশ, পুকুরপাড়_সর্বত্রই দৃষ্টিনন্দন সুপারিগাছ। মৌসুমি ফসল হলেও বছরের প্রায় সব সময়ই জকিগঞ্জের সুপারি চালান হয় দেশের সর্বত্র।


সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং হবিগঞ্জ ছাড়াও রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, নীলফামারী, চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় জকিগঞ্জের সুপারির রয়েছে বিপুল চাহিদা। সুপারিকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় 'গুয়া'। এই গুয়া অনুন্নত জনপদ জকিগঞ্জের মানুষের মুখে বছরে একবার এনে দেয় হাসির ঝিলিক। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর সুপারির ফলন অনেক কম। তাই দামও বেশি। গত বছর এক 'বি' (৪৪০টি) সুপারির দাম যেখানে ছিল ৩০০-৪০০ টাকা, সেখানে এ বছর তা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকায়।
স্থানীয় সুপারি ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন জানান, ভাদ্র মাসের শুরুতেই বাজারে আসতে শুরু করে নতুন সুপারি। মাঘ মাস পর্যন্ত জকিগঞ্জ অঞ্চলে চলে সুপারির কেনাবেচা। শুধু জকিগঞ্জ বাজারেই হাটবারে ৬০০-৭০০ বস্তা সুপারি কেনাবেচা হয়। রংপুর থেকে আসা সুপারি ক্রেতা আজিজুর রহমান জানান, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে জকিগঞ্জ থেকে সুপারি কিনে রংপুরের আশপাশের জেলাগুলোতে বিক্রি করছেন। তিনি আরো জানান, মানের দিক দিয়ে জকিগঞ্জের সুপারি অন্য যেকোনো জেলার চেয়ে ভালো এবং দামেও সস্তা।
জকিগঞ্জ, কালীগঞ্জ, শাহগলী ও বাবুর বাজারে সুপারির বিশাল হাট বসে। এ ছাড়া শরীফগঞ্জ, ঈদগাহ এবং গঙ্গাজল বাজারসহ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের সব কয়টি হাটে খুচরা ক্রেতা-বিক্রেতার মিলন ঘটে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফড়িয়ারা আসেন বাবুর বাজার ও জকিগঞ্জ বাজারে। আড়তদার আবুল মিয়া জানান, লন্ডন-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশেও কদর রয়েছে জকিগঞ্জের সুপারির। মাইজকান্দি গ্রামের সুপারি ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন জনান, স্থানীয় কাঁচা সুপারি ১১টিতে 'এক গা' এবং প্রতি ৪০ গায় 'এক বি' ধরা হয়। মৌসুমে প্রতি গা ১৮-২২ এবং প্রতি বি ৭০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হয়। অনেক অস্থানীয় বেপারী তাঁদের স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে কমলার বাগানের মতো বসতবাড়ির সুপারি বাগানও অগ্রিম কিনে রাখেন। নবান্নের উৎসবের মতোই অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে পুরো জকিগঞ্জে সুপারির উৎসব বসে। গাছ থেকে সুপারি পাড়া, চাতালে শুকানো, বিভিন্ন গ্রেডে ভাগ করা এবং বাজারে নেওয়ার কাজে নিয়োগ করা হয় শ্রমিক। যাঁদের আয়ের অন্য কোনো পথ নেই, তাঁরাও সুপারি মৌসুমে কিছুটা সুখের মুখ দেখেন। পরিবারের সদস্যদের চোখে-মুখে ফুটে ওঠে অন্য রকম এক প্রাপ্তির ঔজ্জ্বল্য।
উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের হিসাব অনুযায়ী, জকিগঞ্জে ফলবান ও ফলহীন মিলিয়ে ২ লাখ ৮৬ হাজার ৯০০ সুপারিগাছ আছে, যাতে উৎপাদিত হয় বিপুল পরিমাণ সুপারি।
অমৌসুমে দাম বেশি পাওয়া যায় বলে ব্যক্তি উদ্যোগে সুপারি সংরক্ষণ করা হয়। জকিগঞ্জ কৃষি অফিসের হীরালাল বিশ্বাস জানান, উচ্চ ফলনশীল জাত নির্বাচন, সঠিক পরিচর্যা আর উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে জকিগঞ্জে সুপারি উৎপাদন ভবিষ্যতে আরো উজ্জ্বল হবে। এ খাত থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.