খাদ্যপণ্যের দাম আরো বাড়বে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ

বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দর বৃদ্ধির ধারা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকতে পারে। এতে আমদানিনির্ভর ও গরিব দেশগুলোর বর্তমান সংখ্যার চেয়ে আরো বেশি মানুষের অনাহারের মুখে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। ফলে অব্যাহত এ খাদ্য সংকট পরিস্থিতি দারিদ্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জন করা ঝুঁকির মুখে পড়ছে বলে সতর্কতা উচ্চারণ করেছে জাতিসংঘ। গতকাল সোমবার প্রকাশিত সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে এ সব কথা বলা হয়েছে।


খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাবি্লউএফপি) ও কৃষি উন্নয়নবিষয়ক আন্তর্জাতিক তহবিলের (আইএফএডি) যৌথ এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনীতির অস্থিরতা, খাদ্যদ্রব্যের অপর্যাপ্ত মজুদ, জ্বালানি ও কৃষির বাজারের মধ্যে গভীর যোগসূত্রের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত ভবিষ্যতে খাদ্যপণ্যের দর বৃদ্ধিতে নাটকীয়তা যোগ করতে পারে। তাদের ভাষ্য, 'দর বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তা আরো বাড়তে পারে। এভাবে খাদ্যপণ্যের দরের অস্থির বৃদ্ধি ছোট কৃষক ও গরিব ক্রেতাদের আরো দারিদ্র্যের কবলে ঠেলে দিতে পারে।' এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'কৃষকের আয় ও গরিব ক্রেতার বাজেট খাদ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই ব্যাপকভাবে দর-পরিবর্তন মানুষের সত্যিকার আয়ের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।'
ভবিষ্যতে দর বৃদ্ধির আশঙ্কার ব্যাপারে জাতিসংঘ বলছে, 'ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশগুলোতে ভোক্তার চাহিদা বাড়বে। বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি জৈবজ্বালানির চাহিদা বৃদ্ধি খাদ্য ব্যবস্থাপনায় (সিস্টেম) অতিরিক্ত চাপ তৈরি করবে।' ফলে আগামী এক দশক খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। পাশাপাশি সীমিতকরণ (রেস্টিক্টটিভ) বাণিজ্য নীতি ও নিরাপত্তা জালের মাধ্যমে কিছু ধনী দেশ নিজেদের খাদ্য সংকট থেকে দূরে রাখতে পারে। ফলে আমদানিনির্ভর দেশগুলো, বিশেষ করে আফ্রিকার অনেক দেশের খাদ্য পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'স্বল্পমেয়াদি দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন যথাযথ পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হতে পারে শিশুরা। এতে ভবিষ্যতে তাদের আয়ের সক্ষমতা চিরস্থায়ীভাবে হ্রাস পাবে। ফলে তাদের দারিদ্র্য দূর না হয়ে বরং পরিস্থিতি একই রকম থাকার আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে অর্থনীতির উন্নয়নের গতিও কমে যাবে।'
জাতিসংঘ মনে করে, হর্ন অব আফ্রিকা অঞ্চলের বর্তমান দুর্ভিক্ষ ও খরা পরিস্থিতি এমডিজি অর্জনকে আরো চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ফলে ২০১৫ সালের মধ্যে অনাহারী মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কৃষিবিষয়ক গবেষণার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পানিসেচ ব্যবস্থা, জমি ব্যবস্থাপনা ও ভালো জাতের বীজ উদ্ভাবনে বিনিয়োগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। তাদের মতে, এ সব খাতে যথাযথ বিনিয়োগ করলে উৎপাদনের ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেকটাই কমতে পারে। পাশাপাশি খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির লাগামও টেনে ধরা সম্ভব হবে। এতে দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা যাবে। সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস, টেলিগ্রাফ, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.