নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজে নাখোশ বীমা ব্যবসায়ীরা

বীমা আইনের আওতায় জরিমানা আদায়সহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে নবগঠিত নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বলছে, বীমা খাতে শৃঙ্খলা আনার জন্য এসব কাজ জরুরি। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকাণ্ড বীমা কম্পানিগুলোর মনোপূত হচ্ছে না। তারা বলছে, প্রচলিত বীমা আইন বীমা খাতের প্রসারের সহায়ক নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অদক্ষতায় বীমা কম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারাও মনে করছেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে বীমা আইন সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে।


গতকাল সোমবার ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন ও বীমা কম্পানির পক্ষে এই দাবি উত্থাপন করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষস্থানীয় সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ। একই সঙ্গে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সাম্প্রতিককালে জারি করা সব সার্কুলার স্থগিত করার দাবিও জানান তিনি।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবসম্মত নয় উল্লেখ করে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, 'আইডিআরএর চেয়ারম্যান শেফাক আহমেদ কাজে যোগদানের পরে বেশ কিছু সার্কুলার জারি করেছেন, যেগুলো মোটেই বাস্তবসম্মত নয় এবং ব্যবসাবান্ধব নয়। তিনি বলেন, যে সময়ে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারছে না, দেশের শিল্প-কারখানা_বিশেষ করে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে_সে সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থার এসব সিদ্ধান্ত মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।'
বস্ত্র খাতে বীমা .৭০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩.৮০ শতাংশ করা হয়েছে উল্লেখ করে এ কে আজাদ বলেন, বীমার দাম বাড়ানোর পাশাপাশি বীমা আইনের অন্যান্য বিষয়ের কারণে কম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বীমা আইনে আছে_একই ব্যক্তি বীমা কম্পানির পরিচালক থাকলে তিনি অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকতে পারবেন না, বীমা কম্পানির কোনো পরিচালকের নিজের বা স্ত্রী অথবা সন্তানের কোনো ব্যবসার বীমা নিজের প্রতিষ্ঠানে করা যাবে না_এগুলো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে এ কে আজাদ বলেন, 'বীমা আইন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান সার্কুলার জারি করেছেন ঠিকই; কিন্তু আইনটি বীমা অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন ট্রেড বডির সঙ্গে আলোচনা করে প্রণয়ন করা হয়নি। এ আইন নিয়ে প্রথম থেকেই আমাদের দ্বিমত ছিল। তাই আমরা এ আইন সংশোধনের প্রস্তাব করছি।'
আইনে যে বীমার যে হার নির্দিষ্ট করা আছে, তার কম হার ধরলে জরিমানার বিধান রয়েছে_এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, 'যে আইনেই জরিমানা করা হোক না কেন, আমাদের এখানে বীমা অ্যাসোসিয়েশন আছে, তারা ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব করে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে আমাদের কোনো আপত্তি থাকত না।'
বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, 'বীমা কম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর নানা ধরনের পদক্ষেপ এ খাতের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করেছে আইডিআরএ, যা বীমা অ্যাসোসিয়েশন কোনোভাবেই যৌক্তিক মনে করে না।' তিনি আইডিআরএর জারি করা এ নীতিমালা স্থগিতের দাবি করেন।
এ বিষয়ে আইডিআরএর চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বীমা কম্পানির জারীকৃত সার্কুলারে শেয়ারহোল্ডার, পলিসিহোল্ডার ও স্টেকহোল্ডারসহ বীমা শিল্পের সকলের স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এতে দেশের সকল পর্যায়ের বীমা গ্রহীতার ৯০ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিডেন্ড পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।' তা ছাড়া আইন অমান্য করলে জরিমানার বিধান রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে পূর্বেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল।' তবে আলাপ-আলোচনার সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনের আগে বিআইএ নেতারা দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিইএ সভাপতি শেখ কবির হোসেনের আমন্ত্রণে এ বৈঠকে অংশ নেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আওয়াল মিন্টু, সার্ক চেম্বারের সভাপতি আনিসুল হক, ঢাকা স্টক এঙ্েেচঞ্জের প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী। বৈঠকে আরো অংশ নেন ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএর নেতারা এবং বিভিন্ন বীমা কম্পানির প্রতিনিধিরা।

No comments

Powered by Blogger.