হোমনায় ট্রিপল মার্ডার ‘মাত্র ৪৭ হাজার টাকার জন্য খুন করে আক্তার’
বুধবার রাতে ভিকটিমের ঘরে ঢুকে মাহমুদা আক্তার (৩০) ও তার ছেলে শাহাদাত হোসেন প্রকাশ সাহাদ (০৯) এবং ভাতিজি তাইফা সিনহা তিশা (১৫)কে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ ও মাথায় লাঠির আঘাতে হত্যা করে পালিয়ে যায়। বৃহস্পতিবর সকালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্দের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। খুন হওয়া মাহমুদা আক্তারের পিতা মো. আবুল হোসেন বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে হোমনা থানায় মামলা করেন। পুলিশ শুক্রবার বিকালে প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামি আক্তার হোসেনকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। আসামি উপজেলার শ্রীমদ্দি চরের গাঁও গ্রামের হক মিয়ার ছেলে।
লাশের ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার বিকালে উপজেলার বড় ঘাগুটিয়া ঈদগাহ মাঠে জানাজা ও স্থানীয় কবরস্থানে পাশাপাশি ৩টি কবরে তাদের দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। হোমনা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মীর মহসীন মাসুদ রানা বলেন, আসামি আক্তার হোসেন মাহমুদাকে চাচি সম্বোধন করতো।
তিনি গ্রেপ্তার আক্তারের বরাত দিয়ে বলেন, মাহমুদা আক্তার হোসেনের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে সাতচল্লিশ হাজার টাকা ধার নেন। বুধবার তাকে ওই টাকা দেয়ার কথা বলেই মাহমুদা তাকে (আক্তারকে) বাড়িতে নেন। রাত ৮টার সময় সে ওই বাড়িতে যায়। সেখানে আখ, সিঙ্গারা খেয়ে-দেয়ে রাত ১০টার মধ্যে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। আক্তারকেও ঘরের মেঝেতে ঘুমাতে দেন। এর আগে টাকা পয়সার লেনদেন নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও মনোমলিন্য হয়। এরই রাগে ক্ষোভে রাত প্রায় ২টার দিকে প্রথমে মাহমুদা আক্তার প্রকাশ মাহফুজাকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে স্বাশরোধ করে হত্যা করে। পরে একে একে তার ছেলে শাহাদাত হোসেন প্রকাশ সাহাদ এবং ভাতিজি তাইফা সিনহা তিশাকে হত্যা করে। পরে কাঠের একটি লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে থেতলে রক্তাক্ত জখম করে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে ফজরের নামাজের আগেই ঘাতক আক্তার পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ৩ খুনের আসামি আক্তার হোসেনকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছি। ৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তির জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে। থানা সূত্রে জানা যায়, মাহমুদা আক্তার প্রকাশ মাহফুজার একই উপজেলার বড় ঘাগুটিয়া গ্রামের শাহ-পরানের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের বিবাহিত জীবনে শাহাদাত হোসেন প্রকাশ সাহাদের জন্ম হয়। ভিকটিমের স্বামী মো. শাহ-পরান ঢাকায় একটি জুতা কোম্পানিতে চাকরি করেন। স্বামী ঢাকায় চাকরি করার কারণে মাহমুদা তার সন্তানকে নিয়ে রাতের বেলায় ঘুমাতে ভয় পেতো। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভিকটিমের দূরসম্পকের ভাতিজি পার্শ্ববর্তী বাড়ির তাইফা সিনহা তিশাকে সঙ্গে রাখতেন। প্রতিদিনের মতো রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বুধবার রাত ১০টার মধ্যে তাদের দো-চালা টিনের ঘরের পশ্চিম পাশের রুমে ঘুমিয়ে পড়েন।
পরের দিন বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে ভিকটিমের বাড়িতে নিহত তাইফা সিনহা তিশাকে তার ছোট বোন মীম ডাকতে আসেন। এসেই ভিকটিমের বসতঘরের পূর্বপাশের দরজা ও শয়ন কক্ষের দক্ষিণ পাশের জানালা খোলা দেখতে পায়। মীম ওই জানালা দিয়ে ভিকটিম মাহমুদা আক্তার প্রকাশ মাহফুজা ও তার ছেলে শাহাদাত হোসেন প্রকাশ সাহাদ এবং তাইফা সিনহা তিশাকে খাটের ওপর গলায় ওড়না পেঁচানো ও মাথায় রক্তাক্ত জখম অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। এমন অবস্থা দেখে বোন মীম চিৎকার শুরু করেন। চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে তাদের ঘরে ঢুকে মাহমুদা ও তার ছেলে শাহাদাত এবং তিশাকে মৃত অবস্থায় খাটের ওপর ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো এবং তাদের মাথা কাটা রক্তাক্ত জখম দেখতে পায়।
No comments