চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ ‘দাবি পূরণের নিশ্চয়তা না পেলে আন্দোলন চলবে’

আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের দাবি পূরণের নিশ্চয়তা না পেলে আন্দোলন চলমান থাকবে বলে জানিয়েছে সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলনকারীরা। গতকাল বিকালে রাজধানীর শাহবাগে ৩৫ প্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দদের সমন্বয়ক রাসেল আল মাহমুদ এমনটাই জানান। বলেন,  বিকাল ৩টা পর্যন্ত শাহবাগে আমাদের অবস্থান কর্মসূচি ছিল। কিন্তু আমাদের দাবি মেনে নেয়া হয়নি। আমাদের বলা হয়েছে- আমাদের জন্য একটি বৈষম্যহীন কমিটি গঠন করে দেয়া হবে। আমরা আমাদের সব সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা বলেছি, সুস্পষ্টভাবে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একটি কমিটি আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে আসবে। আলোচনার মাধ্যমে দাবি পূরণের নিশ্চয়তা দিলে আমরা সমাবেশ শেষ করবো। না হয় আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।

এর আগে সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে গতকাল সকাল ১১টায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘৩৫ প্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ শুরু করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা ‘বয়স না মেধা-মেধা মেধা’, ‘আর নয় কালক্ষেপণ-এবার দাও প্রজ্ঞাপন’, ‘৩৫ এর শৃঙ্খল-ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা দেড়টা নাগাদ সেখানে শত শত মানুষের জমায়েত হয়ে যায়। সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় আন্দোলনকারীরা বলেন,  বাংলাদেশের সব পর্যায়ে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আজ থেকে ৩৩ বছর আগে ১৯৯১ সালে ২৭ বছর থেকে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়। যখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছরে এসে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা যৌক্তিক। গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ২০১১ সালে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি করে ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হয়। কিন্তু, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি না করে সেটি ৩০ বছরেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়, যার কারণে দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। তারা বলেন, বিশ্বের প্রায় ১৬২টি দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা কমপক্ষে ৩৫ বছর, তার মধ্যে কিছু দেশে বয়সসীমা উন্মুক্ত। ভারতসহ বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো অনেক গবেষণা করেই চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে ন্যূনতম ৩৫ বছর করেছে। কিন্তু আমাদের মাত্র ৩০ বছর। নতুন বাংলাদেশে আমরা এই বৈষম্য মানি না।

এদিকে আন্দোলন চলাকালে শাহবাগে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কতো অনিয়ম চালু আছে, সে কথা বলতে গেলে একটা ডিকশনারির মতো হয়ে যাবে। কতো যে অস্থায়ী নিয়োগ আছে, যখন তখন একজনকে কান ধরে বের করে দেয়া যায়, এমন নিয়মেরও হিসাব নেই। এসবের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ পর্যন্ত নেই। তিনি  বলেন, আমরা যে আন্দোলন করেছি এটা শুধু সরকার পতনের কোনো আন্দোলন ছিল না। আমরা বলেছি, এটা দেশ বদলের আন্দোলন, অপশাসন বদলের আন্দোলন। দেশ থেকে বৈষম্য দূর করাই আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার সবকিছু সুন্দরভাবে সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন। আমি মনে করি, আমাদের দেশটা বদলে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.