গণভবন পরিদর্শনে তিন উপদেষ্টা: জাদুঘর স্থাপনে দ্রুত কমিটি
গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর প্রাথমিক পরিদর্শনে গিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিন উপদেষ্টা। এ সময় তারা জানান, জাদুঘরে রূপান্তরের লক্ষ্যে দ্রুতই কমিটি গঠন করা হবে। এ ছাড়াও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নানা ঘটনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৬ বছরের নিপীড়নের চিত্রও থাকবে এ জাদুঘরে। গতকাল এ পরিদর্শন করেন সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। প্রায় এক ঘণ্টা পরিদর্শন শেষে গণভবনের গেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমাদের কেবিনেট মিটিং ছিল। সেখানে গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে জনগণের ওপর যে অত্যাচার, গুম, খুন, নিপীড়নের স্মৃতি সংরক্ষণ করে গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে। এই জাদুঘর জনগণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আজ আমরা সেই উদ্দেশ্যেই প্রাথমিকভাবে গণভবন পরিদর্শনে এসেছি। গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর করতে স্থাপত্যশিল্পী, স্থপতি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন করে কার্যক্রম শুরু করবো। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে আমাদের কেবিনেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে গণভবন নামে প্রধানমন্ত্রীর যে বাসভবনটি ছিল, সেটিকে জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে। যেহেতু ৩৬ জুলাই বা ৫ই আগস্ট জনগণ এটি জয় করেছে। অনেক রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে ৫ আগস্টের মুহূর্তটি পেয়েছি। সেটি জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া এবং জনগণের বিজয়কে ধারণ করে রাখার উদ্দেশ্যেই এই জাদুঘর। তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, আমরা পৃথিবীর বুকেই এই জাদুঘরকে একটি নিদর্শন করে রাখতে চাই যে, স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট, খুনি রাষ্ট্রনায়কদের আসলে কী পরিণতি হয় এবং জনগণই যে ক্ষমতার মালিক; সে বিষয়টিকে একটি নিদর্শন হিসেবে সারা পৃথিবীর বুকে তুলে ধরতে আমরা গণভবনটিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই উদ্দেশ্যেই আমরা আজ প্রাথমিক পরিদর্শন করেছি। ইতিমধ্যেই গণপূর্ত ও স্থাপত্য বিভাগের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা তাদের কাছ থেকে প্রাথমিক পরামর্শ নিয়েছি এবং আমাদের আকাক্সক্ষার কথাও তাদের জানিয়েছি। এরই মধ্যে একটি কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হয়তো আগামীকালের মধ্যেই কমিটি গঠন হয়ে যাবে। কমিটি হলে হয়তো আগামী সপ্তাহ থেকেই আমরা কাজ শুরু করবো। যাতে দ্রুত এটি উদ্বোধন করা যায়, সে জন্য দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কমিটিতে কারা থাকবেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য উপদেষ্টা জানান, যারা জাদুঘর বিশেষজ্ঞ, স্থাপত্যের সঙ্গে যুক্ত আছেন তারাই কমিটিতে থাকবেন। সেই সঙ্গে বিদেশ থেকেও জাদুঘর বিশেষজ্ঞ বা এমন অভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘর করার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাদেরও পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে। জাদুঘরে কী ধরনের স্মৃতি ধরে রাখা হবেÑ জানতে চাইলে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, এখানে প্রথমত ৩৬ দিনের অভ্যুত্থানের স্মৃতি, দিনলিপি থাকবে। যারা এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন, তাদের স্মৃতি থাকবে, তালিকা থাকবে এবং এই আন্দোলন ছাড়াও গত ১৬ বছরে যে নিপীড়ন হয়েছে, যারা গুম হয়েছেন, যাদের বিচার-বহির্ভূত হত্যা করা হয়েছে তাদের তালিকা থাকবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, গণভবন যে ভগ্নাবশেষ অবস্থায় রয়েছে, সেটিকে সর্বোচ্চ সেই অবস্থায় রেখে জাদুঘরটি করা হবে। এখানে কিছু ডিজিটাল রিপ্রেজেন্টেশন থাকবে। আসলে গত ১৬ বছরের একটি চিত্রই সেখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে। পরবর্তী সময়ে কেউ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে তিনি কোথায় থাকবেন, জানতে চাইলে উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, সেটা পরবর্তী সময়ে চিন্তা করে দেখা যাবে। আপাতত সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যেখানে (রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা) আছেন, সেখানেই থাকবেন। সাম্প্রতিক সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে? জানতে চাইলে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, এই ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য উদ্যোগ নিচ্ছি এবং বার বার আমরা এই ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজ করার জন্য বলছি। আমরা প্রথম দিন থেকে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। আমরা বার বার বলেছি, আমাদের প্রতি যে আচরণ করা হয়েছিল ফ্যাসিবাদী শাসনের পক্ষ থেকে, সেই ধরনের আচরণ যেন কারও প্রতি না হয়, সেটাই নিশ্চিত করছি।
No comments