যশোরের কোটিপতি ফুড অফিসার সালমা চৌধুরী by নূর ইসলাম

যশোরসহ এ অঞ্চলে খাদ্য বিভাগে পরিচিত নাম সালমা চৌধুরী। অধিদপ্তর থেকে শুরু করে যশোর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সবাই তাকে চেনে কোটিপতি অফিসার হিসেবেই। সদালাপী ও মিষ্টি ভাষিণী এই কর্মকর্তা উপ-খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করলেও বর্তমানে তিনি যশোরের শার্শা উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক। চাকরি জীবনে দৃশ্যমান বড় ধরনের অনিয়ম করেও তিনি রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। খাদ্য বিভাগের চাকরি যেন তার কাছে আলাদিনের চেরাগ। খাদ্য বিভাগের একজন উপজেলা কর্মকর্তা হয়েও রাতারাতি হয়েছেন কোটিপতি। যতবারই তার বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম কিংবা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তিনি ততবারই বিভিন্ন কূট কৌশলী ও কথার মায়াজালে সবাইকে ম্যানেজ করেই আজ এ পর্যন্ত এসেছেন বলে জানান তার সহকর্মীরা। সর্বশেষ মাগুরা জেলার শালিখার আড়পাড়ার খাদ্যগুদামে বড় ধরনের সরকারি অর্থ চাল লোপাটের ঘটনায় ম্যানেজ ফরমুলায় সালমা চৌধুরী রক্ষা পাওয়ায় তিনি এখন যশোরে খাদ্য অধিদপ্তরের আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে।

নির্ভরযোগ সূত্রের দাবি, সালমা চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা। প্রথমে তিনি ঢাকা খাদ্য অধিদপ্তরে চাকরি করেছেন। সে সুবাদে অধিদপ্তরের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সু-সম্পর্ক রয়েছে। আর এটাই তার বড় পুঁজি। তিনি কাউকে তোয়াক্কা করেন না। চাকরি জীবনে নানা অনিয়ম করলেও অধিদপ্তর থেকে বরাবরই তাকে রক্ষা করা হয়েছে। আর এ সুবাদে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েও রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। যশোর শহরের বেজপাড়া কবরস্থানের পাশে নির্মাণ করেছেন ৪ তলা বিশিষ্ট আলিশান বাড়ি। হামিদপুরে রয়েছে তার কয়েক কোটি টাকার সম্পদ।

সূত্র বলছে, বিভিন্ন তদবির ও ম্যানেজ ফরমুলায় সালমা চৌধুরী খুবই পারদর্শী। খাদ্য অধিদপ্তরে রয়েছে তার অদৃশ্য ক্ষমতা। এজন্য পাহাড় সমান অন্যায় করেও তিনি রয়েছেন সব সময় অধরা। তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি ড. বীরেন শিকদারের বিশেষ আস্থাভাজন সালমা চৌধুরী মাগুরা জেলার আড়পাড়া সরকারি খাদ্যগুদামের ইনচার্জ থাকাকালীন এক কোটি ১৫ লাখ টাকা মূল্যের ১৯০ টন চাল ও ২২ হাজার নতুন বড় খালি বস্তা বাইরে বিক্রি করে দেন। এ বিষয়ে সে সময় একাধিক পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে সালমা চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ বিষয়ে বিভাগীয় মামলাও রুজু করা হয় সালামসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে। তদন্তে সালমা চৌধুরী দোষী হলেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে তিনি মামলার দায় থেকে রহস্যজনকভাবে রেহাই পেয়েছেন। বলির পাঠা হয়েছেন গুদাম কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, ২০২৩ সালের ৬ই জানুয়ারি মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া খাদ্য গুদাম থেকে ১৯০ টন চাল ও ২২ হাজার নতুন বড় খালি বস্তা চুরি করে বাইরে বিক্রি করে দেন উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা সালমা চৌধুরী। ওই সময় যার দাম ছিল এক কোটি ১৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ওই সময় মাগুরা-২ আসনের এমপি বীরেন শিকদারের ভাই বিমল শিকদারের সঙ্গে যোগসাজশ করেন সালমা চৌধুরী। রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় স্থানীয় খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী হাজী সবুর, উপ-খাদ্য পরিদর্শক আশালতা ও নিরাপত্তা প্রহরী সুভাষ চন্দ্র সরকারে মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। যার নেতৃত্ব দেন তিনি নিজেই। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গুদাম থেকে সরকারি ধান, চাল ও বস্তা লোপাট করেন তিনি। কিন্তু কথায় আছে, চোরের দশদিন আর গেরস্তের একদিন।’ লুটপাটের টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধ বাধলে চাল চুরির বিষয়টি ফাঁস হয়। এই ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলে বেকায়দায় পড়ে সালমা চৌধুরী। তিনি ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ম্যানেজ কৌশল অবলম্বন করেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। তাকে তাৎক্ষণিক দায়িত্ব থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং এ চুরির ঘটনায় বিভাগীয় মামলা রুজু হয়। খাদ্য অধিদপ্তর থেকে ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। যশোরের ডিসি ফুড সেই তদন্ত কমিটির অন্যতম একজন সদস্য ছিলেন। কিন্তু তদন্ত চলাকালীন তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে দ্রুত মাগুরা থেকে যশোরে বদলির অর্ডার করিয়ে যশোরের শার্শায় চলে যান।  সেই তদন্তে সালমা চৌধুরীকে নির্দোষ সাব্যস্ত করে রিপোর্ট দেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। সে সময় দুর্নীতি দমন কমিশনও সালমা চৌধুরীর এই চাল চুরির ঘটনাটি তদন্ত শুরু করেন। কিন্তু সেই তদন্তের ফলাফল আজও জানা সম্ভব হয়নি। খাদ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাগুরার আড়পাড়া সরকারি খাদ্যগুদাম লোপাটের ঘটনার পুনঃতদন্ত হওয়া দরকার। পুনঃতদন্ত হলে সালমা চৌধুরী এবং জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কোনো ভাবেই পার পাবেন না।
এ ব্যাপারে জানতে সালমা চৌধুরীর মোবাইল ফোনে কয়েক দফা কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। মোবাইলে খুদে বার্তা পাঠিয়ে মেসেজ দিলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

No comments

Powered by Blogger.