চীন-ভারত যুদ্ধ হলে কে কতটা প্রস্তুত

সিকিম সীমান্তে উত্তেজনা দিন দিন চরমে উঠছে। রোজ একটু একটু করে সুর চড়াচ্ছে চীন। ভারত-ভুটান-চীন সীমান্তবর্তী এলাকা ডোকা লা থেকে নয়াদিল্লি সেনা না সরালে সামরিক পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং। কখনও চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আবার কখনও চীনের কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের মাধ্যমে হুমকি আসছে। তবে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি পাল্টা জানিয়েছে, ১৯৬২ সালের ভারতের সঙ্গে ২০১৭ সালের ভারতকে গুলিয়ে ফেললে চীন ভুল করবে। ২০১২ সালে চীন ও ভারতের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল, বেইজিং তা শর্ত ভঙ্গ করেছে বলে দাবি নয়াদিল্লির। চুক্তির শর্ত ছিল, ভারত, চীন এবং অন্য দেশের সীমান্ত যেখানে মিলেছে, সেসব এলাকায় সীমান্তসংক্রান্ত বিতর্কের মীমাংসা তিনটি দেশের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে করতে হবে। কিন্তু ডোকা লায় বেইজিং একতরফা সিদ্ধান্তে রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করে বলে অভিযোগ নয়াদিল্লির। অঞ্চলটি ভুটানের এলাকা বলে থিম্পুর দাবি। ভারতও সেই দাবিকে সমর্থন করছে। ভুটানের সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা আদান-প্রদানসংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে। ফলে ডোকা লায় বিশাল বাহিনী পাঠিয়েছে ভারত। চীনও পাল্টা সেখানে সেনা পাঠিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৬২ সালের মতো আরও একটা সামরিক সঙ্ঘাতের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদি শেষ পর্যন্ত সত্যিই চীন-ভারত যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে ফল কী হতে পারে? দুই দেশের সামরিক শক্তি : এশিয়ার পরমাণু অস্ত্রধারী দেশ ভারত ও চীন। এছাড়াও দুই দেশের সামরিক বাহিনী জনবল ও অত্যাধুনিক অস্ত্রসম্ভারে সমৃদ্ধ। সিআইএ, দুই দেশের পাবলিক ডোমেইনগুলো, সংবাদ মাধ্যম এবং উইকিপিডিয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে দুই দেশের সমরশক্তির তুলনামূলক চিত্র তৈরি করেছে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ডটকম। যুগান্তরের পাঠকদের জন্য সেই চিত্র তুলে ধরা হল-
সামরিক বাহিনী : সেনাবাহিনীর আকারে ভারতের চেয়ে চীন অনেকটা এগিয়ে। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের (জিএফপি) তথ্যানুসারে, চীনের সেনাসদস্যের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩৫ হাজার এবং ভারতের সেনা সংখ্যা ১৩ লাখ ২৫ হাজার। চীনের আধা-সামরিক বাহিনী বা রিজার্ভ ফোর্সের সংখ্যা ২৩ লাখ এবং ভারতের ২১ লাখ ৪৩ হাজার। কিন্তু চীনের ভৌগোলিক সীমা ভারতের চেয়ে অনেক বড়, তাই স্বাভাবিকভাবেই বড় বাহিনী প্রয়োজন তাদের। সামরিক শক্তিতে জিএফপির সূচিতে প্রথম স্থানে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় স্থানে রাশিয়া। তিন ও চারে রয়েছে যথাক্রমে চীন এবং ভারত।
ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান: চীনের চেয়ে ভারতের ট্যাংকের সংখ্যা কিছু কম। কিন্তু সাঁজোয়া যানের (আর্মার্ড ফাইটিং ভেহিকল) সংখ্যায় ভারত অনেকটা এগিয়ে। জিএফপির তথ্যানুসারে, চীনের ট্যাংকের সংখ্যা ৬৪৫৭টি এবং ভারতের ৪৪২৬টি। অন্যদিকে, চীনের সাঁজোয়া যানের সংখ্যা ৪৭৮৮টি এবং ভারতের রয়েছে ৬৭০৪টি।
গোলাবর্ষণের সক্ষমতা: স্থলসীমান্তে যুদ্ধের জন্য গোলাবর্ষণের সক্ষমতা অত্যন্ত জরুরি। দু’দেশের হাতেই বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম রয়েছে। চীনের হাতে সেল্ফ প্রপেলড আর্টিলারি রয়েছে ১৭১০টি এবং ভারতের রয়েছে ২৯০টি। টোড আর্টিলারি চীনের কাছে ৬২৪৬টি এবং ভারতের কাছে ৭৪১৪টি। চীনে মাল্টিপল রকেট লাঞ্চার রয়েছে ১৭৭০টি এবং ভারতের রয়েছে ২৯২টি।
বিমান বহর: জিএফপির পরিসংখ্যান বলছে, চীনের যুদ্ধবিমানের সংখ্যা ১২৭১টি এবং ভারতের ৬৭৬টি। চীনের হাতে অ্যাটাক বিমানের সংখ্যা ১৩৮৫টি এবং ভারতের রয়েছে ৮০৯টি। চীনের পরিবহন বিমান রয়েছে ৭৮২টি এবং ভারতের রয়েছে ৮৫৭টি। এছাড়া চীনের প্রশিক্ষণ বিমান রয়েছে ৩৫২টি এবং ভারতের হাতে রয়েছে ৩২৩টি।
অ্যাটাক হেলিকপ্টার: ভারতের কাছে অ্যাটাক হেলিকপ্টারের সংখ্যা ৫৯টি এবং চীনের কাছে রয়েছে ২০৬টি। ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের ব্যাখ্যা, তাদের হাতে সুখোই-৩০ এমেকেআই’র মতো প্রবল শক্তিশালী যুদ্ধবিমান পর্যাপ্ত সংখ্যায় থাকায়, অ্যাটাক হেলিকপ্টারের প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি নেই।
পরমাণু অস্ত্র: ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা ভারতের চেয়ে চীনের হাতে অনেক বেশি রয়েছে। চীনের কাছে পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা ২৬০টি এবং ভারতের কাছে রয়েছে ১১০টি। (যেসব অস্ত্র নির্মাণাধীন বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার স্তরে রয়েছে, সেগুলোর পরিসংখ্যা এখানে দেয়া হয়নি)।

No comments

Powered by Blogger.