স্ত্রীর দাবি নিয়ে কলেজছাত্রীর অনশন!

তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুরে নিজেকে এক আইনজীবীর সহকারীর স্ত্রী দাবি করেছেন কলেজছাত্রী। একইসঙ্গে স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে ওই সহকারীর বাড়িতে অনশনও করছেন তিনি। উপজেলার শ্রীপুর উওর ইউনিয়নে প্রেমিক জয়নাল আবেদীন জুয়েলের চারাগাঁও মাইজহাটির বাড়িতে শনিবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে অবস্থান নিয়ে অনশন করছেন ওই ছাত্রী। সূত্র জানায়, উপজেলার কলাগাঁও বাজারের পল্লী চিকিৎসক বরজু ওরফে বশিরের ছেলে জয়নাল আবেদীন জুয়েলের (সুনামগঞ্জ আদালতের আইনজীবী সহকারী) সঙ্গে পাশের শ্রীপুর কুঁড়েরপাড়া গ্রামের প্রাক্তন ইউপি সদস্য শাহনুর মিয়ার মেয়ে কাঁকলী আক্তার রত্নার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৫ সালে উভয়ের সম্মতিতে বিয়েও হয়। বিয়ের পর জেলা শহরে ভাড়াটিয়া বাসায় প্রায়ই স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে মেলামেশা করে আসছিলেন তারা। অপরদিকে জুয়েল আগামীকাল সোমবার বিশ্বম্ভরপুরের শাহপুরে ফের দ্বিতীয় বিয়ে করতে যাচ্ছে জানতে পেরে স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে  শনিবার রাতেই কাঁকলী জুয়েলের বাড়িতে এসে অনশনে বসে। এ ঘটনা জানাজানি হলে উৎসুক এলাকাবাসীও রাতে এমনকি রোববার সকাল থেকে ভিড় জমান ওই পল্লী চিকিৎসকের বাড়িতে। সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী কাঁকলী আক্তার রত্না যুগান্তরকে বলেন, আমি রাতে জুয়েলের বাড়িতে আসার পর তার বড় ভাই জাভের আহমদ আমাকে হুমকি দেয়। তিনি ছাত্রলীগের বড় নেতা পরিচয় তুলে ধরে আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেবে বলে হুমকি ও গালমন্দ করে কয়েকবার মারতেও আসেন। পরে রাতে তিনি দফায় দফায় আমাকে ও আমার অভিভাবকদের থানা পুলিশকে দিয়ে চাপ দিচ্ছে। তাদের বাড়ি থেকে চলে না গেলে আমাকে নাকি রোববার সকালে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হবে। কাঁকলী আরও বলেন, জুয়েল প্রথমে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ২০১৪  সালে আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার পর এলাকার কয়েকজনকে সাক্ষী রেখে সুনামগঞ্জে ২০১৫ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করে আমার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। এখন সেই বিয়ে এবং প্রেমকে  তিনি অস্বীকার করছে। এ ব্যাপারে জয়নাল আবেদীন জুয়েল মোবাইলে যুগান্তরকে বলেন, দেখেন তো ভাই আমি কী মুশকিলে পড়লাম, আর মাত্র  একদিন পর বিশ্বম্ভরপুরের শাহপুরে আমার বিয়ের দিনক্ষণ ঠিকঠাক করা হয়ে গেছে। এখন দেখি রাতে হঠাৎ করে এক মেয়ে আমাদের বাড়িতে এসে আমার কাছে স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবি করছেন। কাঁকলীর সঙ্গে প্রেম ও বিয়ের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জুয়েল তা অস্বীকার করে বলেন, আমি তাকে চিনিই না। এখন দূরে মোটরসাইকেলে লং ড্রাইভে আছি পরে কথা হবে বলেই জুয়েল তার মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। উপজেলার কলাগাঁও মাইজহাটির বুরুজ ওরফে বশির ডাক্তার মোবাইলে যুগান্তরকে বলেন, সোমবার জুয়েলের অন্যত্র বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলেছি। কেনাকাটাও প্রায় শেষ, লোকজনকে দাওয়াত করেছি বরযাত্রী ও বৌভাতের অনুষ্ঠানে থাকার জন্য। এখন হঠাৎ করে রাতে কাঁকলী নামের এক মেয়ে আমার বাড়িতে এসে আমার ছেলে জুয়েলের কাছে স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবি করছে, এটি ষড়যন্ত্র  ছাড়া আর কিছুই না।
শ্রীপুর উওর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য চারাগাঁও’র বাসিন্দা মো. হাসান আলী যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে আমি ও এলাকার লোকজন রাতেই  ঘটনাস্থলে যাই। এসময় কাঁকলী উপস্থিত লোকজনকে জানায়, জুয়েল সুনামগঞ্জে তার বন্ধুদের সহায়তায়  মৌলভী ডেকে একটি কাগজে নিজ হাতে অঙ্গীকার নামা লিখে তাকে বিয়ে করে। এমনকি সে সময় জুয়েল আদালতে ইন্টার্নিশিপ শেষ করে ওই কলেজছাত্রীকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেয়। কাঁকলী এখন স্ত্রীর স্বীকৃতি না পেলে আত্মহুতির কথাও প্রকাশ্যে লোকজনকে জানিয়ে দিয়েছেন বলেও জানান ওই ইউপি সদস্য। উপজেলার শ্রীপুর উওর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ মো. খসরুল আলম খসরু যুগান্তরকে বলেন, জয়নাল প্রতারণার মাধ্যমে কাঁকলীর সঙ্গে প্রেম এবং পরবর্তী সময়ে বিয়ে করেছে এ কথা সত্য। তাদের বিয়ের বিষয়টি বেশ কিছুদিন ধরেই এলাকায় জানাজানি হয়, এমনকি পরিবারের অভিভাবকরা পর্য্যন্ত বিষয়টি জানেন।  এ ধরনের প্রতারণা প্রতিরোধে ওই ছাত্রী যেন ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়  সেজন্য পুলিশি তদন্তের মাধ্যমে এর সুষ্ঠু আইনি সমাধানও চেয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তাহিরপুর থানার ওসি (তদন্ত) মো. আসাদুজ্জামান হাওলাদার যুগান্তরকে বলেন, শনিবার রাতে জুয়েল নামের এক যুবকের বাড়িতে জোর করে কাঁকলী নামে এক তরুণী উঠেছে বলে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।’ জুয়েলের বাড়ি ত্যাগ করতে কাঁকলী ও তার অবিভাবকদের থানা পুলিশের পক্ষ্য থেকে চাপ দেয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসি বলেন, বিয়ের ডকুমেন্ট থাকলে তা থানায় নিয়ে আসার জন্য বলেছি। কোনো ধরনের চাপ দেইনি। এদিকে রোববার বেলা ১০টার দিকে তাহিরপুর থানার পিএসআই মো. ইমাম হোসেন বশির ডাক্তারের বাড়িতে গিয়ে কাঁকলীর বক্তব্য রেকর্ড করেন। ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের পিএসআই মো. ইমাম হোসেন যুগান্তরকে বলেন, জুয়েলের সঙ্গে তার প্রেম ও বিয়ের সম্পর্কে কাঁকলী পুলিশকে বিস্তারিত জানিয়েছে। এরপর পুলিশের পিএসআই কাঁকলীকে আইনি ব্যবস্থা নিতে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়ার কথা বলেন।

No comments

Powered by Blogger.