অর্থ পাচারের জন্য আমরাও দায়ী: অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ায় আগামী মাস থেকে রেমিটেন্স পাঠানোর ফি কমিয়ে ন্যূনতম একটি চার্জ নির্ধারণ করবে সরকার। এছাড়া বিদেশে টাকা পাচার রোধে জমির সরকারি দাম পরিবর্তনের চিন্তাভাবনা চলছে। অর্থ পাচারের জন্য আমরাও দায়ী। শনিবার সকালে সিলেটের নাইওরপুলে একটি ফোয়ারা উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান, জাতিসংঘের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আবদুল মোমেনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দুটি কারণে রেমিটেন্স কমতে পারে। প্রথমত, যারা বিদেশে থাকছেন তাদের অনেকেই সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের প্রক্রিয়া করছেন। দ্বিতীয়ত, তাদের অভিযোগ রয়েছে, রেমিটেন্স পাঠানোর ফি অনেক বেশি। অর্থমন্ত্রী বলেন, রেমিটেন্সের ফি আমরা কমিয়ে আনার চিন্তাভাবনা করছি। সম্ভবত আগামী মাস থেকে কমে যাবে। সেটা হবে নামমাত্র একটি ফি। তিনি আশা করেন তাতে রেমিটেন্স প্রবাহে গতি আসবে। সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমার পরিমাণ গত ১ বছরে ৪০.৭২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রতিবেদন সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক প্রকাশ করেছে।
এমন অর্থ পাচার রোধে কী পদক্ষেপ নেবেন এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, পাচার সারা দুনিয়াতেই হয়। তবে রেটস অব গ্রোথ (পাচারের হার) আমাদের একটু বেশি। এজন্য আমরাও দায়ী। আমরা জমির সরকারি মূল্য কমিয়ে রেখেছি। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, কেউ এক কোটি টাকার জমি বিক্রি করে সেখানে সরকারি দাম ৩০ লাখ টাকা উল্লেখ করেন। সেখানে বাকি ৭০ লাখ টাকা হয়ে যায় কালো। অর্থমন্ত্রী বলেন, পাচার বন্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার। শিগগির জমির সরকারি দাম বাড়িয়ে বাজার দর করা হবে। অন্যদিকে প্রায় ২ বছর ধরে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়ের গতি নিম্নমুখী। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেমিটেন্স কমেছে সাড়ে ১৪ শতাংশ। গত ৬ বছরে এটিই সর্বনিন্ম। এতে সরকার, অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন। এদিকে চলতি অর্থবছরেও রেমিটেন্স কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। প্রসঙ্গত, সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে (সুইস ব্যাংক) বাংলাদেশি নাগরিকদের জমা টাকার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এক বছরে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ৪০ দশমিক ৭২ শতাংশ। সুইস ব্যাংকে ২০১৪ সালে বাংলাদেশিদের জমার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ কোটি ৬০ লাখ সুইস ফ্রাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৪ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা (প্রতি সুইস ফ্রাংক ৯০ টাকা হিসাবে)। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালে তা ছিল ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে বেড়েছে ১ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত এবং পাকিস্তানের পরই রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। ১৫ জুন সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

No comments

Powered by Blogger.