গ্রেফতার হয়নি লিটন : দুই আসামি রিমান্ডে

সাভারে দুই তরুণীকে ধর্ষণের মূল আসামি লিটন আলী মণ্ডলকে শনিবার পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মডেল ও অভিনেত্রী বানানোর লোভ দেখিয়ে ওই তরুণীদের গাজীপুর থেকে সাভারে ডেকে আনে সে। লিটন ডিবি পুলিশের সোর্স। আর এর প্রভাব খাটিয়েই ওই দুই তরুণীকে লিজেন্ড কলেজে নেয় সে। এ নিয়ে মামলায় লিজেন্ড কলেজের দুই দারোয়ানকে শুক্রবার আটক করেছিল পুলিশ। রাতে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে তুলে পাঁচ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালত দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সাভার মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. সারওয়ার্দী হোসেন শনিবার দুই দারোয়ানকে রিমান্ডে নেয়ার কথা যুগান্তরকে জানান।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য দুই তরুণীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। তারা এখনও সেখানেই আছে। পরীক্ষা সম্পন্ন হতে আরও দু’এক দিন লাগবে। এ ধর্ষণের ঘটনায় শুক্রবার ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি এএফএম সাঈদ জানিয়েছিলেন, এক তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আরেকজনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হলে তার চিৎকার শুনে লোকজন তাকে উদ্ধার করেন। থানায় এ প্রতিবেদকের কাছেও এক তরুণী দাবি করেছিলেন- তিনি ধর্ষণের শিকার হননি। তার বান্ধবী শিকার হয়েছেন। সে হিসেবে যুগান্তর প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কিন্তু পরে পাওয়া মামলার এজাহার ঘেঁটে দেখা গেছে, এতে উল্লেখ করা হয়েছে, দুই তরুণীই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণকারী কারা ও কয়জন, প্রকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কিনা, প্রকৃত অপরাধীদের বাঁচাতে দারোয়ান ও কেয়ারটেকারকে ফাঁসানো হয়েছে কিনা- ইত্যাদি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, শুক্র ও শনিবার কলেজ বন্ধ থাকে। আর রাতে সাধারণত কলেজের কোনো ক্লাস-পরীক্ষা থাকে না। এ সময় মাঝেমধ্যেই কলেজের কক্ষ নানা কাজে ব্যবহার হয়। এমনকি ডিবি পুলিশের কয়েকজন সদস্যও কখনও কখনও ব্যবহার করেন। তাই পুলিশের কেউ জড়িত আছে কিনা সেটিও দেখা উচিত। এসব নিয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা মো. সারওয়ার্দী হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে বলে প্রাথমিক তদন্তে আমরাও পেয়েছি। তবে তারা কারা এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এ নিয়ে তদন্ত চলছে।
রিমান্ডে কী পাওয়া যায় সেটিও দেখার বিষয়। আশা করছি, এ অপরাধে যুক্ত সবাইকেই আমরা শনাক্ত করতে পারব। তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, তরুণীদের করা এজাহারের ভিত্তিতেই দু’জনকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত তরুণীদের কোনো স্বজন পুলিশ ও ভিকটিমদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। দুই ভিকটিমই বিবাহিত এবং এক ভিকটিমের একটি সন্তান রয়েছে বলে জানা গেছে। সারওয়ার্দী হোসেন বলেন, মূল হোতা লিটনকে গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করার কারণে সোবহানবাগ এলাকায় লিটনের বেশ দাপট রয়েছে। ডিবির সোর্স হিসেবে প্রভাব খাটিয়েই লিজেন্ড কলেজের ভেতরে তরুণীদের নেয় সে। আর তাকে সহায়তা করে ভবনের নিরাপত্তাকর্মী মোকাররম ও কেয়ারটেকার মিজান। ডিবির ওসি এএফএম সাঈদ যুগান্তরকে জানান, লিটন আগে পুলিশের সোর্স ছিল। তার অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছিলাম। দেড় মাস আগে তাকে ৫০ বোতল ফেনসিডিল ও এক কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার করে চালান দেয়া হয়েছিল। যার মামলা নং-৪১(১)(১৭)। কিন্তু সে জামিনে বেরিয়ে আসে। সে ঝিনাইদহ থেকে চার বছর আগে সাভারের সোবহানবাগ এলাকায় কাজের সন্ধানে আসে। এর পর থেকেই ডিবি পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতে থাকে। শুরুতে ডিবির এসআই জহিরুলের সোর্স হিসেবে কাজ করার কারণে পুলিশের অন্যান্য বিভাগের সদস্যদের কাছেও সে পরিচিত হয়ে ওঠে। এসআই জহিরুল বদলি হয়ে যাওয়ায় পর ঢাকা জেলা উত্তরের বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তার সোর্স হিসেবে কাজ করে। একপর্যায়ে মাদক ব্যবসা শুরু করে লিটন। ডিবি অফিসের পাশে বি/১১৮ সোবহানবাগ কবীর হোসেনের বাড়ির প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় লিজেন্ড কলেজ। দ্বিতীয় তলায় যে ফ্ল্যাটে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে তা কর্তৃপক্ষ কমন রুম হিসেবে ব্যবহার করত। শনিবার ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে দরজায় তালা মারা। আর ঘটনার পর থেকে ভবনটির মালিক কবীর হোসেন পলাতক। যদিও এই মামলায় তাকে আসামি করা হয়নি। এ মামলায় রিমান্ডে থাকা ব্যক্তিরা হচ্ছেন ভবনের দারোয়ান দিনাজপুর জেলার বিরল থানার সৈয়দপুর এলাকার ছফি উল্লাহর ছেলে মোকাররম (১৭) ও ভবনের কেয়ারটেকার কুড়িগ্রাম জেলার বুড়িমাড়ী থানার সখিপুড়ী গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান (২৭)।
এজাহারে যা আছে : বৃহস্পতিবার লিটন ফোন করে সাভারে আসতে বলে। টঙ্গী থেকে বাসে আমি ও আমার বান্ধবী রাত ১০টার দিকে সাভার কাঁচাবাজার ফুটওভারব্রিজের নিচে আসি। ফোন দিলে লিটন এসে দেখা করে। তার সঙ্গে থাকা একটি ছেলেকে দিয়ে সোবহানবাগ লিজেন্ড কলেজের দ্বিতীয় তলায় কলেজের কমন রুমে নিয়ে আসে। কমন রুমের পাশের রুমে আমাকে বসিয়ে রাখে। ১০টা ২০ এর দিকে লিটন এসে কমন রুমে বান্ধবীকে নিয়ে গিয়ে রুমের দরজা ভেতর থেকে লক করে দেয়। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে বলে বান্ধবী পরে আমাকে জানায়। বান্ধবী রুমের দরজা খোলার চেষ্টা করলেও লিটন তাকে দরজা খুলতে দেয়নি। এজাহারে আরও বলা হয়, পাশের রুমে থাকা অবস্থায় মোকাররম ও মিজানুর রহমান এসে চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আমাকে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে আমি দরজা বাইরে থেকে ধাক্কাধাক্কি করি। শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন বিল্ডিংয়ের নিচে গেটে ভিড় করে হইচই করে। শব্দ শুনে লিটন রুমের দরজা খুলে দিয়ে সু-কৌশলে পালিয়ে যায়।

No comments

Powered by Blogger.