অপ্রতিরোধ্য প্রবৃদ্ধির পথে চীন by কামরুল হাসান

একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম অর্থনীতিক পরাশক্তি চীন মন্দার সুনামি সামলে আবারও দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরেছে। মন্দার কবলে পরে চীনের দুই অঙ্কের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি দীর্ঘ সময়ের পর বাধাগ্রসত্ম হলেও সম্প্রতি দেশটি আবার ফিরে এসেছে তাদের ডবল ডিজিট প্রবৃদ্ধিতে।
২০০৯ সালের শেষ প্রানত্মিকে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে দেশটি। তবে পুরো বছরের বিচারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান বু্যরো সম্প্রতি এই ঘোষণা দেয়।
বর্তমানে চীন বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি জাপানকে পেছনে ফেলে বিশ্ব অর্থনীতির দ্বিতীয় অবস্থানে নিজেদের অবস্থানে সুসংহত করেছে। অন্যদিকে ২০০৯ সালে মন্দার ফলে জাপানের অর্থনীতি ৬ শতাংশ হারে সঙ্কুচিত হয়। আমেরিকা এবং বিশ্বের অন্যান্য ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের অবস্থা মোটামুটি একই রকম। মন্দার কবলে উন্নত বিশ্বের প্রায় প্রত্যক রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ঋণাত্মক। এদিকে ইউরোপের ব্যবসা এবং অর্থনীতি বিষয়ক শীর্ষ পরামর্শক সংস্থা প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস (পিডবিস্নউসি) পূবার্ভাস দিয়েছে চীনের বর্তমান প্রবৃদ্ধির হার যদি অব্যাহত থাকে তবে ২০২০ সালের মধ্যেই চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। ২০০৮ সালের নবেম্বরে মন্দার আভাস পাওয়ার শুরম্নতেই চীন অত্যনত্ম দ্রম্নত এবং আক্রমণাত্মক মুদ্রানীতি গ্রহণ করে।
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান বু্যরোর প্রধান মা জিয়ানতাং বলেন "২০০৯ সালে চীন চরম প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হয়। বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২০০৮ সালের তুলনায় কিছুটা কম।" কিন্তু প্রবৃদ্ধির এই হার সরকারী হিসাবের চেয়ে কিছুটা বেশি। ২০০৮ সাল শেষে এবং ২০০৯ সালের শুরম্নতে মন্দার কবলে চীনের উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং প্রচুর শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটে। কিন্তু সরকারের ঘোষিত উদ্দীপনা প্যাকেজ এই যাত্রায় রৰা করে রম্নগ্ন প্রতিষ্ঠানসমূহকে।
তবে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মাইকেল পেটিস বলেন, চীনের প্রবৃদ্ধি সত্যিই বিস্ময়কর তবে প্রবৃদ্ধির মান নির্ভর করবে উদ্দীপনা প্যাকেজ বন্ধ ঘোষণা করার পর। আপাতত চীনের অন্যতম গুরম্নত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো উদ্দীপনা প্যাকেজের পরবতর্ী সময়কাল।
উদ্দীপনা প্যাকেজের পরবতর্ী বিনিয়োগ পরিস্থিতি চীনের জন্য অত্যনত্ম গুরম্নত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশটির একজন কর্মকর্তা। চীন রাষ্ট্রীয় সংস্থা অর্থনীতিকে যে কোন হুমকি থেকে রৰা করার উদ্দেশ্যে গুরম্নত্বপূর্ণ কিছু পদৰেপ গ্রহণ করে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো সুদের হার বৃদ্ধি পাবে। ইতোমধ্যে ব্যাংকসমূহকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে রিজার্ভ বৃদ্ধি করার। পাশাপাশি জানুয়ারিতে ঋণ বন্ধেরও পরামর্শ দেয়া হয় এই সকল প্রতিষ্ঠানকে। পরিসংখ্যান বু্যরোর প্রধান মা জিয়ানতাং বলেন "রেকর্ড সংখ্যক রফতানি আয়, ভোক্তা ব্যয়ের সূচক দুই অঙ্কের কোটায় পেঁৗছানো, গাড়ি বিক্রি ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু কারণে গত বছরের শেষ প্রানত্মিকে আশাব্যঞ্জক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে।"
ভাল প্রবৃদ্ধির ফলে চীন একমাত্র রাষ্ট্র যারা মন্দার ধকল কাটিয়ে উঠেছে, কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতিতে এখনও কিছু অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
২০০৯ সালে চীনের জিডিপির আকার ছিল ৪ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার।
শহুরে লোকদের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭০০ ডলার এবং গ্রামের মানুষের মাথা পিছু আয় ৭৫২ ডলার। চীন সরকারের বর্তমান চ্যালেঞ্জ হলো শহর এবং গ্রামের মানুষের আয়ের অসঙ্গতি দূর করা। চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের অবদান হবে ১৩ শতাংশ। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবদান হবে ২০ শতাংশ। এছাড়া বিশ্ব জিডিপির ২১ শতাংশ আসবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন।
চীন অতি সম্প্রতি জার্মানিকে পেছনে ফেলে রফতানিকারক দেশ হিসেবে এক নম্বর স্থান দখল করেছে।
পাশাপাশি বিশ্বের দ্বিতীয় আমদানিকারক হিসেবে চীনের অবস্থান নিজেদের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধি করেছে। গত ত্রিশ বছর ধরে চীনের ডবল ডিজিট প্রবৃদ্ধি এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি দেশটির জীবনমানেও ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে। ১৯৮১ সালে দারিদ্র্যের হার ৫৩ শতাংশ থেকে নেমে বর্তমানে ২৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। ১৯৪৯ সালের বিপস্নবের পর ১৯৭৮ সালের অর্থনৈতিক সংস্কার মূলত দেশটির আজকের অবস্থানের মূল ভিত্তি।
চীনের প্রবৃদ্ধির এই অবস্থানের পেছনে প্রধান দুটি খাত হলো কৃষি এবং শিল্প। মোট দেশজ প্রবৃদ্ধির ৬০ শতাংশ আসে এ দুটি খাতে। তাছাড়া রফতানি বৃদ্ধির লৰ্যে সরকার পৃথক রফতানি জোন সৃষ্টি করে বিদেশী কোম্পানির জন্য।
রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতি। এই বিষয়টি সঠিক সময়ে বুঝতে পেরেছিল চীনারা। তাই তাদের সঠিক সিদ্ধানত্ম গ্রহণে কোন অসুবিধা হয়নি। সে কারণেই বহিরাক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য যে চীনকে প্রাচীর নির্মাণ করতে হয়েছে। আজ তারাই পৃথিবীর অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি।
জিএনপি, জিডিপি, এনএনপি, এনআই, জিআই অর্থনীতির প্রত্যেকটি ভিতকেই মজবুতভাবে গড়ে চীন আজ অপ্রতিরোধ্য।

No comments

Powered by Blogger.