শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বোমাং রাজাকে বিদায় by প্রণব বল ও বুদ্ধজ্যোতি চাকমা

শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, নানা ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বোমাং রাজা অংশৈপ্রু চৌধুরীর শেষকৃত্যানুষ্ঠান গতকাল শুক্রবার সম্পন্ন হয়েছে। রাজবাড়ি প্রাঙ্গণ ও রাজার মাঠে আয়োজিত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়িসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক আদিবাসী যোগ দেন।


সাধারণ বাঙালি ও পর্যটকেরাও শেষকৃত্যানুষ্ঠানে ভিড় করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে রাজবাড়ি ঘিরে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। সকাল নয়টার দিকে রাজার মৃতদেহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধার জন্য রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে উন্মুক্ত করা হয়। এ সময় লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে পুরো মাঠ। রাজাকে শেষশ্রদ্ধা জানান দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন। ছিলেন বিদেশিরাও।
রাজার মরদেহে ফুল দিয়ে শেষশ্রদ্ধা জানান শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সাংসদ বীর বাহাদুর উশেচিং, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার পক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক দীপেন দেওয়ানসহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তি।
রাজার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বক্তারা বলেন, বোমাং সম্প্রদায়ের ১৫তম রাজার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। তার পরও এই ন্যায়নিষ্ঠ রাজার কীর্তিকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে আমাদের এগিয়ে চলতে হবে।
বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, সাংসদ বীর বাহাদুর উশেচিং, চাকমা সার্কেলের রাজা দেবাশীষ রায়, মং সার্কেলের রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী, বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা, ইউএনডিপির সিএইচটিডিএফের প্রকল্প পরিচালক হেনরিক লারসেন, বান্দরবান পৌরসভার চেয়ারম্যান জাবেদ রেজা প্রমুখ।
বোমাং রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য কে এস প্রু চৌধুরী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘মৃত্যু অমোঘ। তবু রাজার মৃত্যুকে মেনে নিতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে। শ্রদ্ধেয় রাজা আমাকে যে আশীর্বাদ ও পরামর্শ দিয়েছেন, ভবিষ্যতে চলার ক্ষেত্রে তা কাজে আসবে।’
রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য হিসেবে প্রয়াত রাজার পদে কে এস প্রু চৌধুরীর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার কথা।
বেলা একটার দিকে মরদেহ রাজার মাঠে নেওয়ার পর বিভিন্ন মৌজার জনসাধারণ রাজাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। পাশাপাশি শোকগাথার সুরে সুরে ঐতিহ্যবাহী সইং নাচ (শব নাচ) পরিবেশিত হয়। একটি ম্রো আদিবাসী ও একটি নারী সইং দলসহ ১০টি দল মরদেহ বৌদ্ধমন্দিরশোভিত কাঠের ঘর নিয়ে নাচ পরিবেশন করে। এ সময় মারমা ও ম্রো ভাষায় শোকগাথার করুণ সুর বাজানো হয়।
পরে মঞ্চে ধর্মীয় দেশনা ও বক্তৃতা শেষে রথযাত্রার মাধ্যমে রাজাকে নেওয়া হয় মহাশ্মশানে। মৃতদেহের কফিন ও রথটি ঢাকা পড়ে ফুলে ফুলে। রথচক্রযানে শবযাত্রা শুরুর আগে হাজারো মানুষ দুই দলে বিভক্ত হয়ে শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে রাজার মরদেহ রক্ষিত পুষ্পরথ টানেন।
বোমাং রাজা অংশৈপ্রু চৌধুরী ৮ আগস্ট ৯৮ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।

No comments

Powered by Blogger.