বাজিতপুরে যুবলীগকর্মী ৮ টুকরো

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার সরারচর ইউনিয়ন যুবলীগকর্মী ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. আলম সবুজকে (৩০) দুর্বৃত্তরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। গতকাল শুক্রবার ইউনিয়নের নূরপুর বিলে কচুরিপানার নিচ থেকে সবুজের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।


পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
পুলিশ বলেছে, সবুজকে হত্যার পর দুর্বৃত্তরা তাঁর লাশ আট টুকরো করে কচুরিপানার নিচে পুঁতে রাখে। তবে বস্তাবন্দি লাশের গলার নিচ থেকে কোমরের নিচ পর্যন্ত তিনটি টুকরো পাওয়া গেছে। সবুজের মাথা, দুই হাত ও দুই পা গতকাল সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি।
গতকাল দিনভর বিলজুড়ে মাথাসহ সবুজের শরীরের বাদবাকি অংশ খোঁজা হয়।
ঈদের পরদিন মঙ্গলবার সবুজ সরারচর বাজার থেকে নিখোঁজ হন। পরদিন তাঁর প্রথম স্ত্রী হ্যাপী আক্তার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
সবুজ সরারচর ইউনিয়নের খালেকারভাণ্ডা গ্রামের প্রয়াত মাহতাবউদ্দিন ভুঁইয়ার ছেলে।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পেশাদার খুনিরা এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে। প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে।'
ছাত্রলীগ নেতা সবুজের হত্যার প্রতিবাদে গতকাল সন্ধ্যায় সরারচর বাজার ও বাজিতপুরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীসহ এলাকাবাসী আলাদা বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করে খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সরারচর রেলগেটে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সবুজের খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বলেছেন, অন্যথায় দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
পুলিশ জানায়, বিলের পাশের গ্রাম জুমাপুরের আট বছরের শিশু সমির গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বিলে মাছ ধরতে গিয়ে একটি মানিব্যাগ কুড়িয়ে পায়। ওই মানিব্যাগের ভেতর সবুজের মায়ের ছবি ছিল। জুমাপুর গ্রামে সবুজের এক খালাতো বোন মানিব্যাগটি দেখে গতকাল সকালে সবুজের পরিবারকে জানায়। এর সূত্র ধরেই সবুজের আত্মীয়স্বজন গতকাল সকাল থেকে বিলে লাশ খোঁজা শুরু করে। তাঁর পরনে থাকা আন্ডারওয়্যার দেখেই পরিবার সবুজের লাশ শনাক্ত করে।
গতকাল দুপুরে নূরপুর বিলে গিয়ে দেখা যায়, শত শত নারী-পুরুষ সবুজের লাশ দেখতে ভিড় জমায়। বিলের পারে আত্মীয়দের কান্নার রোল পড়ে যায়। দুপুরেই সবুজের টুকরো লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
সরেজমিন সবুজদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, মা মোস্তফা খাতুন বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। জ্ঞান ফিরতেই বুক চাপড়ে বিলাপ করে করে ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাইছেন। প্রথম স্ত্রী হ্যাপী আক্তারও স্বামীর শোকে পাথর হয়ে গেছেন।
গতকাল সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাজিতপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়নি। তবে গতকাল দুপুরেই পুলিশ সবুজের প্রতিবেশী ও সহপাঠী বাদলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
সবুজের ভাই সমাজ আহমেদ জানান, দুই সপ্তাহ আগে সরারচর বিআরটিসি বাস কাউন্টার থেকে ভাণ্ডা গ্রামের এক সচিবের ভাতিজার মোবাইল ফোনসেট খোয়া যায়। সবুজ বাস কাউন্টারে গিয়ে সেটটি উদ্ধার করেন। এ নিয়ে দিদার নামের একজনের সঙ্গে সবুজের ঝগড়া হয়। এর জের ধরেই সবুজ খুন হয়ে থাকতে পারে বলে সমাজ দাবি করেন।
সমাজ আরো জানান, সরারচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি রোকনুজ্জামান বাতেন ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মো. আলমগীর তাঁকে জানিয়েছেন, গত বুধবার সবুজকে ভৈরবে দেখা গেছে। ওই সময় তাঁর সঙ্গে যুবলীগকর্মী সুজনসহ স্থানীয় দুই যুবক ছিল। সমাজ জানান, এ তথ্যের সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ সরারচরের সুজনকে এলাকাবাসী আটক করে মারধর করে ছেড়ে দেয়।
অন্যদিকে সরারচর বাজারের ব্যবসায়ীরা জানায়, মোবাইল ফোনসেট খোয়া যাওয়ার ঘটনা ছাড়াও বাজারে চাঁদাবাজি, মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জের ধরে সবুজ খুন হয়ে থাকতে পারেন।
দুই সপ্তাহ আগে সবুজ নিজেও স্থানীয় সংবাদকর্মীদের ফোন করে মাদক কারবার বন্ধের উদ্যোগ নিতে এবং মাদক কারবারিদের তৎপরতা প্রকাশের অনুরোধ করেছিলেন।
তবে পুলিশ জানিয়েছে, সবুজের বিরুদ্ধে বাজিতপুর থানা ও রেলওয়ে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
বাজিতপুর থানার ওসি মো. আমজাদ হোসেন জানান, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় এজাহার দেওয়া হয়নি। এজাহার পেলে হত্যা মামলা নথিভুক্ত করা হবে। সবুজের নিখোঁজ মাথা ও হাত-পা পাওয়া যায়নি।
ওসি জানান, কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, তবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এসব তথ্য প্রকাশ করা যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.