আওয়ামী লীগ নির্বাচন টার্গেট করে দলের ভিত্তি গড়তে চাইছে- এগোচ্ছে সেই লক্ষ্যেই ॥ বিরোধী দলের আন্দোলনের হুমকিকে গ্রাহ্যে নিচ্ছে না

বিরোধী দলের আন্দোলনের হুমকিতে মোটেও উদ্বিগ্ন নয় শাসক দল আওয়ামী লীগ। বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবেলার পরিবর্তে সাংগঠনিক তৎপরতা আরও জোরদারের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিকে এগিয়ে নিতে চায় দলটি।


দলের নীতিনির্ধারকরা নিশ্চিত, বিরোধী দল রাজপথে কঠোর আন্দোলনের যতই হুমকি-ধমকি দিক, জনসমর্থন আদায়ের মতো কোন বড় ইস্যু তাদের হাতে নেই। আর অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতেও বিরোধী দল আন্দোলনে গেলে জনগণের সমর্থন পাবে না বলেও মনে করছেন তাঁরা। তাই সময় নষ্টের পরিবর্তে এখন থেকেই আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের নীতিনির্ধারক নেতাদের মতে, মুখে যতই বলুক প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অধিকাংশ নেতাই চান না তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা আবার ফিরে আসুক। নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের অংশীদারিত্ব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে প্রস্তাব দিয়েছেন বিএনপি সে প্রস্তাব মেনে নিয়ে নির্বাচনে আসবে বলেই মনে করছেন তাঁরা। আর বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে অতীতেও বহুবার আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে। এমনকি দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি এক দফার আল্টিমেটামও দিয়েছিল। কিন্তু দাবির সমর্থনে রাজপথে আন্দোলন দূরের কথা, ন্যূনতম জনসমর্থনও আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে তারা। তাই এবারও বিরোধী দলের আন্দোলনের হুমকি-ধমকিকে বিরোধী দলের রাজনৈতিক বক্তব্য এবং তাদের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখার প্রয়াস ছাড়া আর কিছুই নয় বলেই মনে করছেন শাসক দলের নেতারা।
এ প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুব-উল-আলম হানিফ শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, জনসম্পৃক্ততা না থাকার কারণেই বিএনপি তাদের আন্দোলন থেকে সরে এসেছে। জনমত সৃষ্টির জন্য তারা সম্প্রতি যে চেষ্টা চালাচ্ছেন বক্তৃতা দিচ্ছেন তাতেই প্রমাণিত হয় তাদের আন্দোলনের সঙ্গে সাধারণ জনগণ নেই। তিনি বলেন, বিএনপির এসব আন্দোলনের কর্মসূচীতে আমরা চিন্তিত নই। বিগত তিন বছরে তাদের আন্দোলন কর্মসূচীতে কোন জনসম্পৃক্ততা ছিল না। ভবিষ্যতেও তারা জনসম্পৃক্ততা পাবে না ভেবেই আন্দোলন থেকে সরে এসেছে।
দলের নীতিনির্ধারক একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবেলার পরিবর্তে সাংগঠনিক তৎপরতা আরও জোরদারের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিকে এগিয়ে নিতে চায় আওয়ামী লীগ। সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদার এবং ধারাবাহিক কাউন্সিলের মাধ্যমে সারাদেশে সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে আগেই নানা কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক থেকে। আগামী মাস থেকে শুরু করে ধারাবাহিক কাউন্সিলের মাধ্যমে তৃণমূলে সংগঠনকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য দলকে এখন থেকেই প্রস্তুত করে তোলার টার্গেট নিয়েই মাঠে নামছেন দলটির নীতিনির্ধারক নেতারা।
ইতোমধ্যে তৃণমূল সম্মেলন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয়ে দলের ১২ টিমও গঠন করা হয়েছে। আগামী মাসের শুরু থেকেই তাঁরা সারাদেশে সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে জনমত গঠনের পাশাপাশি তৃণমূল সম্মেলনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার কাজে তদারকি করবেন। এ লক্ষ্যে জেলায় জেলায় বর্ধিত সভা, কর্মিসভা এবং সমাবেশ আয়োজন করার জন্যও কেন্দ্রীয় তরফে সারাদেশের নেতাদের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী মাস থেকে শুরু করে ডিসেম্বরের মধ্যেই সারাদেশের জেলা, মহানগর ও উপজেলা কাউন্সিল শেষ করে সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে চায় শাসক দলের হাইকমান্ড। সে লক্ষ্যে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে জোরেশোরে তৃণমূল পর্যায়ের সম্মেলন প্রক্রিয়া শুরু হবে। ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রাম, ওয়ার্ড, থানা ও পৌরসভা শাখার সম্মেলন সম্পন্ন হলেও শোকের মাস হওয়ায় আগস্টে কোন সম্মেলন হয়নি। ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা পর্যায়ের সম্মেলন শেষ করে জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে চান দলটির সিনিয়র নেতারা।

No comments

Powered by Blogger.