অপরাধীদের তথ্যভাণ্ডার তৈরি হচ্ছে by ওমর ফারুক

কারাগারে থাকা সন্ত্রাসী, জঙ্গিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধীর 'ডেটাবেইস' তৈরি করছে র‌্যাব। কারাগারে থাকা পাঁচ শতাধিক অপরাধীর ডেটাবেইস এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তথ্যভাণ্ডার তৈরি শেষ করার পর র‌্যাবের দল যাবে দেশের বিভিন্ন কারাগারে।


শুধু হাতের আঙুলের ও তালুর ছাপই নয়, চোখও স্ক্যান করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা আধুনিক প্রযুক্তিতে এই ডেটাবেইস তৈরি করা হচ্ছে। পৃথিবীর উন্নত দেশে অনেক আগে থেকেই এ প্রযুক্তি ব্যবহার হলেও বাংলাদেশে প্রথম এ নিয়ে কাজ শুরু হলো বলে র‌্যাব সূত্রে জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিভিন্ন দেশে পলাতক বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে হাতের আঙুলের ছাপ বদলে ফেলেছে- এমন তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। এ পর্যন্ত চোখের ভেতর এবং বাইরের কিছু সূক্ষ্ম ছাপ পরিবর্তনের খবর পাওয়া যায়নি। এ কারণে নতুন পদ্ধতির ডেটাবেইসে আইরিশ স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে র‌্যাবের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন।
আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আশরাফুল ইসলাম খান গত বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কিছুদিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা এসেছে ক্রিমিনাল ডেটাবেইসের ব্যাপারে। এরপর র‌্যাবকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে কারাগারে ক্রিমিনাল ডেটাবেইস করার জন্য। ইতোমধ্যে তারা কাজ শুরুও করে দিয়েছেন।'
র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের প্রধান কমান্ডার এম. সোহায়েল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অত্যাধুনিক এই ডেটাবেইসে ইতোমধ্যে ২৯ হাজার অপরাধীর তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। কারাগারে যেসব অপরাধী রয়েছে তাদের হাতের আঙুল, তালুসহ চোখ স্ক্যান করে এই ডেটাবেইস তৈরি করা হচ্ছে।'
র‌্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, আধুনিক যুগে বৈজ্ঞানিক প্রমাণাদি ছাড়া মামলার তদন্ত ও আসামির সাজা নিশ্চিত করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে ক্রিমিনাল ডেটাবেইসের গুরুত্ব বহুগুণ বেড়ে গেছে। সে সঙ্গে ফরেনসিক ল্যাব ও ডিএনএ টেস্ট সিস্টেম উন্নত করা জরুরি।'
র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরো জানান, এই ডেটাবেইস কিভাবে তৈরি করা হবে, কিভাবে ব্যবহৃত হবে সে ব্যাপারে র‌্যাবের বেশ কিছু সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই ডেটাবেইসের মূল সার্ভারের সঙ্গে ইতোমধ্যে র‌্যাবের ১২টি ব্যাটালিয়ন ও ৪৮টি ক্যাম্পের সংযোগ গড়ে তোলা হয়েছে। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করছে র‌্যাব। র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও নানা শ্রেণীর অপরাধী দিন দিন যেভাবে নাম-ঠিকানা, বেশ-ভূষা অদল-বদল করছে তাতে ডেটাবেইস তৈরি করা ছাড়া তাদের ধরা দুরূহ হয়ে পড়বে। দেশ যতই উন্নত হোক না কেন অপরাধ ঘটবেই। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান কাজই অপরাধীকে শনাক্ত করা। র‌্যাব মানবাধিকারের বিষয়টি সামনে রেখেই কয়েকটি পদ্ধতিতে ক্রিমিনাল ডেটাবেইস তৈরি করছে।
র‌্যাব সূত্র জানায়, ২০০৫ সাল থেকেই এএফআইএস পদ্ধতিতে সন্ত্রাসীদের ডেটাবেইস তৈরির কাজ চলছিল। কিন্তু বর্তমানে ওই ডেটাবেইস খুব একটা কার্যকর নয়। ফলে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে উন্নত প্রযুক্তি আনা হয়েছে। ওই কর্মকর্তা জানান, বর্তমান প্রযুক্তিতে কেবল বৃদ্ধাঙুলির ছাপ নয়, হাতের ১০ আঙুল ও তালুর ছাপ রাখা হচ্ছে। এমনকি আইরিশ স্ক্যানও করে রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া ডিজিটাল ছবিসহ পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্ত ধারণ করা হচ্ছে এই ডেটাবেইসে।
কারা সূত্র জানায়, সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে ছুটির দিন ছাড়া অন্য দিনগুলোতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে র‌্যাবের একটি টিম গিয়ে অপরাধীদের তথ্য সংগ্রহ করছে। নাম-ঠিকানাসহ হাত, আঙুল ও তালুর ছাপ ও চোখের (আইরিশ) স্ক্যান করা হচ্ছে যন্ত্রের মাধ্যমে। র‌্যাবের কর্মকর্তারা দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা সফটওয়্যারের মাধ্যমে যে ডেটা তৈরির কাজ চলছে, তা সম্পন্ন হলে এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বাধুনিক ক্রিমিনাল ডেটাবেইস।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সংগঠনগুলো বিশ্বের অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি ব্যবহার করলেও দেশে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কার্যকর ক্রিমিনাল ডেটাবেইস নেই। ফলে অনেক সন্ত্রাসী ভুয়া নাম পরিচয় দিয়ে পার পাওয়ার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে র‌্যাব উন্নত বিশ্বের আদলে ক্রিমিনাল ডেটাবেইস তৈরির কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ২৯ হাজার অপরাধীর বৃত্তান্ত ধারণ করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, জাতীয় পরিচয়পত্র ও মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট দেওয়ার সময় তথ্য নেওয়া হচ্ছে। তবে এসব তথ্য ক্রিমিনাল ডেটাবেইস তৈরির জন্য যথেষ্ট নয়।
কমান্ডার এম. সোহায়েল জানান, র‌্যাবের শুরু করা ক্রিমিনাল ডেটাবেইস সম্পন্ন হলে এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা, বিমানবন্দর ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হবে, যা অপরাধীকে শনাক্ত করতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে।

No comments

Powered by Blogger.