রাজনীতি-সম্মেলন সামনে রেখে একাধিক বলয় আওয়ামী লীগে by পাভেল হায়দার চৌধুরী

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল সামনে রেখে দলের মধ্যে কয়েকটি শক্তিশালী বলয় তৈরি হচ্ছে। পদ-পদবি নিয়েই মূলত গড়ে উঠেছে এই বলয়। দলের নবীন নেতারা চান গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে। প্রবীণরা চান অবস্থান ধরে রাখতে। অন্যদিকে বাদ পড়া সংস্কারপন্থীরা চান আবারও কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ নিতে।


এসব চাওয়া-পাওয়া নিয়েই একাধিক বলয় গড়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসবতথ্য পাওয়া গেছে।
আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে দলের মধ্যে ব্যাপক তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে। চলছে নানা হিসাব-নিকাশ।
সূত্র মতে, দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে নবীন ও প্রগতিশীলদের একটি, সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নেতৃত্বে আরেকটি এবং সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নেতৃত্বে শেখ পরিবারের আত্মীয়স্বজন নিয়ে আলাদা বলয় গড়ে উঠেছে। যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রীয় নেতা এনামুল হক শামীম ও মির্জা আজমেরও রয়েছে একটি বলয়। সংস্কারপন্থীরা মনে করছেন, গত কাউন্সিলের পর কমিটি থেকে বাদ পড়লেও এবার জায়গা নিতেই হবে তাঁদের। তাই ওই নেতাদের একটি বলয় সক্রিয় হচ্ছে। তবে তাঁদের আর দলে জায়গা দিতে চান না সভাপতিমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্য। সংস্কারপন্থীদের বিরুদ্ধে তাঁরা সুবিধামতো শেখ হাসিনার কাছে নেতিবাচক কথাবার্তা বলেই যাচ্ছেন। আশরাফুল ইসলামের বলয়টি নতুনের জয়গান চায় আগামী কেন্দ্রীয় কমিটিতে। আবার আশরাফের মতেরও চরম বিরোধিতা করছেন সভাপতিমণ্ডলীর প্রভাবশালী দুই সদস্য।
জানা গেছে, দলে আবারও পদ-পদবি ফিরে পেতে তৎপর হচ্ছেন সরকারপন্থীরা। তাই দলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে শুরু করেছেন তাঁরা। দলের অপর একটি সূত্র জানায়, আমু, তোফায়েল ও সুরঞ্জিতকে দলের প্রয়োজন রয়েছে। তাঁদের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে দলের প্রধানও এখন ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন। তাই তাঁদের ডেকে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। আমির হোসেন আমুকে বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে এরই মধ্যে।
একটি সূত্র জানায়, গত বছরের শেষ দিকে তোফায়েল আহমেদকে মন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তোফায়েল আহমেদ তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তিনি মন্ত্রী হতে চান না। দলের জন্য কাজ করতে চান। দলের দায়িত্ব পেলে বেশি খুশি হবেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুর কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। অপর সদস্য তোফায়েল আহমেদও কোনো বক্তব্য দিতে চাননি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কোনো রকম গ্রুপিং বলয় এগুলোতে বিশ্বাসী নই। অভিজ্ঞতার আলোকে রাজনীতি করি। দেশ ও জনগণের কল্যাণে আজীবন রাজনীতি করে যাব।'
দলীয় একাধিক সূত্রের দাবি, সম্মেলন ঘিরে নানা বলয় থাকলেও বেশির ভাগ নেতাই চান আওয়ামী লীগ কিভাবে চলবে, কে নেতা হবেন, না হবেন তা নির্ধারণের এখতিয়ার একমাত্র দলের প্রধান শেখ হাসিনারই থাকা উচিত।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগ বড় দল। বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত থাকতেই পারে। এটা স্বাভাবিক। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কাছে সবই পরাস্ত হয়। সম্মেলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, জাতীয় সম্মেলন করার লক্ষ্য সামনে রেখেই তৃণমূল সম্মেলন শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বছরই জাতীয় সম্মেলন হবে বলে জানান মতিয়া।
সভাপতিমণ্ডলীর অপর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, বলয় থাকতে পারে, তবে তা টিকবে না।

No comments

Powered by Blogger.