অভিমত ॥ ইচ্ছে থাকলে সবকিছুরই সমাধান সম্ভব by কেয়া চৌধুরী

কিছুদিন ধরে টিভির পর্দাসহ নানা সংবাদ মাধ্যমে মহাসড়কের বেহাল অবস্থা নিয়ে যেসব খবর পড়ছিলাম তাতে, পাঠক হিসাবে হতাশ হওয়া ছাড়া আর যেন কিছুই থাকে না। তার মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই যখন শুনতে হতো মৃত্যুর মিছিলের অপ্রত্যাশিত দীর্ঘ তালিকার খবর, স্বজনদের বিলাপের করুণ সুর। তখন নিজেকে বড় অসহায় লাগে।


পত্রিকায় বিধ্বস্ত মহাসড়কের সচিত্র প্রতিবেদন পড়ে মনে মনে কয়েকবার ঈদে বাড়ি যাবার ইচ্ছাকে দমিত করার চেষ্টা করেছি। স্থগিত করেছি সকল পরিকল্পনা। স্বাভাবিকভাবেই বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দে ভাটা পরায় মনে দুঃখ বোধ জাগ্রত হতে থাকল তীব্রভাবে। শুধুই ভাবছিলাম, বাংলাদেশের মানুষের স্বস্তি, আনন্দ বিনোদনের জায়গাগুলো কেন এত দ্রুত সঙ্কুুচিত হয়ে যাচ্ছে ! কোথায় এর শেষ। দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে অবশেষে পরিবারের সদস্যদের মুখের দিকে তাকিয়ে, নাড়ির টানে আপনদের মাঝে ফিরে যাবার টান থেকে ঈদের আগের দিন খুব সকালে গন্তব্যের পথে যাত্রা শুরু করলাম। মন চাইছিল যেন বাড়ি পৌঁছে যাই এখনই। পথের ভোগান্তির শঙ্কা আনন্দ অনুভূতিগুলোকে কেন যেন ক্রমে ফিকে করে তুলছিল। কিন্তু পথে বের হয়ে রীতিমতো অবাক ! যেন ভাবতেই পারছিলাম না এমন মেঘবৃষ্টির দিনে ভোগান্তিবিহীন ঈদ যাত্রার সমাপ্তি ঘটবে। টঙ্গির রাস্তা শেষ করে যখন কালিগঞ্জের সড়কে উঠলাম, পিচঢালা সড়কটা যেন অপরিচিত মনে হতে লাগল। আহা! কতদিন এমন ঝাঁকুিনবিহীন যাত্রার স্বাদ পাই না। ছিল না কোন গাড়ির দীর্ঘ লাইনও। সা-য়া , সা-য়া করে দ্রুত গতিতে সব যান কেবলই ছুটছে। গাড়ির চালকের চেহারায় কোন বিরক্তির ছাপ চোখে পড়ছিল না । বৃষ্টিভেজা সকালের বাতাসের দোলা শরীর মন চাঙ্গা করে তুলছিল ক্ষণে ক্ষণে। পাশে বসা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বেশ ফুরফুরা মেজাজের মনে হচ্ছিল। মনে করতে চেষ্টা করছিলাম এমন ক্লান্তিহীন যাত্রা ঠিক কত বছর আগে করতে পেরেছিলাম। মনে মনে ভেবেছিলাম, সত্যি সত্যি তাহলে আমাদের যোগাযোগমন্ত্রী তার কথা রেখেছেন। বোঝা গেল প্রচার মাধ্যমে তার ছোটাছুটি কিছুই লোক দেখানো বা সুভঙ্করের ফাঁকি ছিল না। বরং জনগণকে কথা দিয়ে কথা রাখার এটি হতে পারে একটি দৃষ্টান্ত। শত সীমাবদ্ধতার মধ্যে জনগণকে উন্নত সেবা দেবার সরকারের এই যে মানসিকতা তাকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই।
ভাল কাজের প্রশংসা, মন্দ কাজের নিন্দা সবসময় সবক্ষেত্রে থাকা উচিত। বহুদিন পরে উৎসবে সাধারণের নির্বিঘেœ বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এমন কার্যকর উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসাবে নিজেকে দিয়ে বুঝতে পারি যে, সরকারের কাছে আমাদের চাহিদা খুব বেশি কিছু নয়। আমরা আমাদের জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে কেবল এতটুকু দেখতে চাই। তিনি তার কথায় হবেন সৎ ও নিষ্ঠাবান, আর কর্মে হবেন দায়িত্বশীল। এ দেশের সাধারণ মানুষকে খুশি করতে সরকারকে খুব বেশি কিছু একটা করতে হয় না। জনগণের সেবা প্রদানের চিন্তাকে সর্বাগ্রে মাথায় রেখে কাজ করলেই হলো। তবে তার জন্য দরকার মন্ত্রণালয়ের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ হতে বের হয়ে আসা। জনগণকে সিগন্যালে আটকিয়ে রেখে হুইসেল বাজিয়ে বিশেষ পুলিশী প্রহরায় ফাঁকা রাস্তা দিয়ে চললে সমস্যার প্রকৃত চিত্র চোখে আসবে না। বরং জনসমুদ্রে একাকার হয়ে মানুষের সমস্যা প্রকৃত রূপ চিহ্নিত করতে এলে জনগণই তখন সমস্যার সমাধানের পথটি দেখাতে সাহায্য করে।
সাম্প্রতিক সময়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কিছু পদক্ষেপ সত্যি চমৎকার! আমরা দেখলাম ঈদে অগ্রিম টিকেটকে কালোবাজারির হাত হতে রক্ষা করে যাত্রী সাধারণের হাতে পৌঁছাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে মন্ত্রণালয়। আরও দেখলাম যোগাযোগমন্ত্রীর ঝটিকা সফরে উল্লিখিত মন্ত্রণালয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের কুকর্মের শাস্তি হিসেবে তাৎক্ষণিক বদলি, বরখাস্ত বা বিচারের সম্মুখীন করার সচিত্র দৃশ্য। সরেজমিনে গিয়ে সড়কের বেহাল অবস্থা দেখা ও মেরামতের জন্য কার্যকর ও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে এ বিভাগের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের ঈদের ছুটি বাতিল করা। সত্যি এগুলো ছিল সময় উপযোগী পদক্ষেপ।
আমি এটা বলতে চাই না যে ঈদের সময়টায় সমস্ত বাংলাদেশের সকল সড়কই ষোলোআনা নিরাপদ ও নির্বিঘœ ছিল বা আছে। হয়ত বাস্তব অবস্থায় কম বেশি ভাল ছিল। কোথাও হয়ত বেশি খারাপও ছিল। তবে এটা সত্য, যোগাযোগমন্ত্রী চেষ্টা করেছেন জনগণকে শত সীমাবদ্ধতার মধ্যে ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষকে স্বস্তিকর ও নিরাপদ যাত্রা উপহার দিতে।

লেখক : আইনজীবী ও সমাজকর্মী
Kchowdhury71@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.