বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পাকবাহিনীর সঙ্গে তুলনাঃ গণশুনানির নামে দেশবিরোধী ঔদ্ধত্য

পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চেষ্টাকে সম্প্রতি নতুন গতিবেগ দেয়ার অভিযান শুরু হয়েছে। এ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে ৭ মার্চ রাজধানীতে আয়োজিত গণশুনানির অনুষ্ঠানে। পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিদের ওপর চলমান কথিত নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরাই ছিল গণশুনানির ঘোষিত উদ্দেশ্য।

কিন্তু নামে গণশুনানি হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী ক্ষতিগ্রস্ত কোনো একজন বাঙালিকেই অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। শুধু তা-ই নয়, যাদের জন্য এত মায়াকান্না সেই উপজাতীয় জনগোষ্ঠীগুলোরও কেউ সেখানে ছিল না। অনুষ্ঠানে চাকমাদের মধ্যকার এমন জনাকয়েককেই শুধু দেখা গেছে, যারা সব সময় এখানে-ওখানে বক্তৃতাবাজি করে বেড়ান। তারাই গণশুনানিতে অংশ নিয়েছেন, বক্তৃতাও তারাই দিয়েছেন। বিষয়টি সবার নজর কাড়লেও প্যানেল বিচারকরা কোনো প্রশ্ন তোলেননি। সাংবাদিকদের উপর্যুপরি প্রশ্নের জবাবে আয়োজকরাও বাঙালিদের না ডাকার কারণ সম্পর্কে রা করেননি।
অনুষ্ঠানে বিভিন্নজনের বক্তব্যও ছিল তাত্পর্যপূর্ণ। ভূমি রক্ষা আন্দোলনের স্বঘোষিত নেতা জ্ঞানেন্দ্র চাকমাসহ প্রত্যেকেই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বানিয়ে ছেড়েছেন। তারা বলেছেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী নাকি ‘পাকবাহিনী’র মতোই নিষ্ঠুর আচরণ করছে! তারা নাকি উপজাতীয়দের বাসাবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে! পার্বত্য চট্টগ্রামে নাকি প্রতিনিয়ত নারী ধর্ষণ চলছে! জ্ঞানেন্দ্র চাকমারা দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘এসব পাকিস্তানিকে’ পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। জ্ঞানেন্দ্র চাকমারা প্রশাসনকেও পাকড়াও করেছেন। তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়েছেন গণশুনানির আয়োজকরা।
আমরা মনে করি, গণশুনানির অনুষ্ঠানটিকে পাশ কাটানোর বা হাল্কাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। কারণ, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার এবং ওই অঞ্চলে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র চলছে বহুদিন ধরে। এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চেষ্টা ভয়ঙ্কর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ব্রিটেনের লর্ড এরিক এভবারিসহ আন্তর্জাতিক হিলট্র্যাক্টস কমিশনের নেতারা এর মধ্যেই বার কয়েক সফর করে গেছেন। বাঘাইছড়ির সাম্প্রতিক হত্যা-সন্ত্রাসকেও একই লক্ষ্যে পরিকল্পিত বলে তথ্যাভিজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ্য, লর্ড এভবারির প্রতিনিধিরা যেদিন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরে সাংবাদিক সম্মেলন করছিলেন সেদিনই বাঘাইছড়িতে হঠাত্ হত্যা-সন্ত্রাস শুরু হয়েছিল। এ থেকেও ষড়যন্ত্রের বিষয়টি প্রাধান্যে এসেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে খুনি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে সরকার উল্টো নাচুনে বুড়িকে ঢোলের বাদ্য শোনানো শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের সংসদীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ইউএনডিপির গাড়িতে চড়ে ওই অঞ্চলে বেড়িয়ে এসেছেন। অথচ ইউএনডিপির বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস-সঙ্ঘাতে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে উস্কানি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। লর্ড এভবারিদের পাশাপাশি আদিবাসী বিষয়ক জাতীয় কোয়ালিশন ধরনের সংগঠনগুলোও ইউএনডিপির অঘোষিত দালালের ভূমিকাই পালন করে চলেছে। এসব সংগঠনের পেছনে ইউরোপভিত্তিক বিভিন্ন এনজিও বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে আসছে। ৭ মার্চের গণশুনানিতেও এনজিওদের সংশ্লিষ্টতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
আমরা মনে করি, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে পাকবাহিনীর সঙ্গে তুলনা করার এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে অভিযোগ তুলে ধরার কার্যক্রম শুধু নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্যই নয়, এর মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের সমগ্র অস্তিত্ব ধরে টান দেয়ারই ঔদ্ধত্য দেখানো হয়েছে। কারণ, সুতার টানে গণশুনানিওয়ালারা কোরাস গাইলেও নিরপেক্ষ কোনো তদন্তে কখনোই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম যেহেতু বাংলাদেশেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ সেহেতু দেশের অন্য সকল অঞ্চলের মতো সেখানেও সেনাবাহিনী অবস্থান করতে পারে। এ ব্যাপারে জ্ঞানেন্দ্র চাকমার মতো স্বঘোষিত নেতার এবং গণশুনানিওয়ালাদের কিছুই বলার থাকতে পারে না। তা সত্ত্বেও গণশুনানিতে প্রধানত সেনাবাহিনীকে দায়ী করার বিষয়টিকে আমরা গুরুতর মনে করি। কারণ, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করার মাধ্যমে আসলে বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকারকেই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতেই যেখানে বাঙালিদের হত্যা ও উত্খাত করা হচ্ছে সেখানে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। সুতরাং বিদেশি এনজিওদের অর্থে তত্পর গণশুনানিওয়ালারা যত চিত্কারই করুন না কেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করার চিন্তাও করা চলবে না। সরকারকে বরং ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে তত্পর সব ব্যক্তি ও সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.