সিরাজগঞ্জ হার্ডপয়েন্টে চিত্তবিনোদন

ঈদে নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষের আনন্দ উল্লাসে সিরাজগঞ্জের গ্রাম, পাড়ামহল্লা মেতে উঠেছিল। মেতে উঠেছিল যমুনাপারের হার্ডপয়েন্টও। লম্বা ১১ দিন ছুটি পেয়ে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীদের অস্থায়ী ঠিকানা ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহর ছেড়ে স্থায়ী ঠিকানা সিরাজগঞ্জে এসে ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছে।
প্রিয়জনও ছিল অধীর আগ্রহে। নিরাপদে সবাই বাড়ি ফিরেছে, আনন্দ উৎসব করেছে। এরা বেশির ভাগ শিশু নারী-পুরুষ আনন্দে মেতেছিল যমুনার হার্ডপয়েন্টে। দেশের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, কুয়াকাটার মতো পর্যটন সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও যমুনাপারের হার্ডপয়েন্ট নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষকে আকর্ষণ করেছে, আনন্দ দিয়েছে।
সিরাজগঞ্জে যমুনাপারে নির্মিত হার্ডপয়েন্ট চমৎকার অবকাশ বিনোদনকেন্দ্র। সন্ধ্যায় হার্ডপয়েন্টে দাঁড়ালে মনে হয়, যমুনার বুকে অসংখ্য তারা জ্বল জ্বল করে জ্বলছে। আসলে এগুলো তারা নয়, দূরে বঙ্গবন্ধু সেতুতে জ্বলন্ত বৈদ্যুতিক বাতি যমুনার পানিতে আকাশের তারার মতোই মনে হয়। পড়ন্ত বিকেলে যমুনার স্বচ্ছ নীল পানিতে অস্তগামী সূর্যের নয়নাভিরাম লাল আভা মানুষকে বড্ড আকর্ষণ করে। শুকনো মৌসুমে জলরাশি আর উত্তপ্ত বালু রাশি একাকার হয়ে মানুষকে আকর্ষণ করে।
ঋতু বৈচিত্র্যের এই দেশে এখন শরৎকাল। বর্ষা শেষে শরতের আগমন ঘটে। কিন্তু আকাশে এখন আর শরতের শুভ্র মেঘপুঞ্জ দেখা যায় না। যমুনার চরে কাশ বনও নেই। নেই কাশ ফুলও। এখনও যেন বিরাজ করছে বর্ষাকাল। যমুনার তর্জন-গর্জন শব্দও কানে বাজে। নদীতে যাত্রীবাহী এবং পাল তোলা নৌকার যাতায়াতও বেড়েছে। তবে তা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ হার্ডপয়েন্টের কাছেই যমুনা ক্রোধে ফুঁসে ওঠছে। প্রচ- গতিতে ঢেউ আছড়ে পড়ছে। ঢেউয়ের তালে পাল তোলা, ছৈউ তোলা নৌকাগুলো দুলছে। কিন্তু যমুনার ক্রোধ হার্ডপয়েন্টে পরাস্ত হয়ে নুয়ে পড়ছে পাড়ে এসে।
যমুনার বিশাল জলরাশি ছল ছল শব্দ করে ঢেউ খেলে মিলিয়ে যাচ্ছে। নির্মল বায়ু গ্রহণ আর অবসর বিনোদনের আমেজে নানা বয়সী মানুষ এসে ভিড় করছে। প্রাকৃতিক এসব দৃশ্য মানুষের মনকে আলোড়িত করে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত অথবা কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের মতো মনোরম চিত্তবিনোদনের মতো হরেক রকম সুবিধা না থাকলেও সিরাজগঞ্জের হার্ডপয়েন্ট অবকাশ যাপনকারী বা ভ্রমণবিলাসী মানুষের চিত্তবিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠেছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের ভিড় জমে যমুনাপারে। শিশু-নারী পুরুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় এই হার্ডপয়েন্ট। পড়ন্ত বিকেলে যমুনার পানিতে অস্তগামী সূর্যের লাল আভা অবলোকন করা, গা জুড়ানো বাতাসে ভিন্ন পরিবেশে কিছুটা সময় অবস্থান করাই হার্ডপয়েন্টে মানুষের মিলনমেলা জমে ওঠার প্রধান আকর্ষণ। প্রতিদিন হাজারো শিশু নারী-পুরুষ আসছে যমুনাপারে হার্ডপয়েন্টে। রিকশা, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল এবং প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস নিয়ে তারা আসে। কিন্তু হার্ডপয়েন্ট স্পর্শকাতর স্থাপনা হিসেবে ঘোষণার পর যানবাহন দূরে রেখে শুধু হেঁটে চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এতে ভ্রমণবিলাসীদের জন্য সুখকর হয়েছে। তবে বিশেষ বিশেষ দিনে ঈদ, পুজো পার্বণ কিংবা নববর্ষে নিয়মকানুন না মেনেই গাড়ি চালিয়ে হার্ডপয়েন্টে মানুষ ঢুকে পড়ে। শহরের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও গ্রাম-গ্রামান্তর থেকে মানুষ আসে। প্রতিদিন বিকেলেই মানুষের ঢল নামে, বসে মিলনমেলা। জেলার বাইরের কোন আত্মীয় কিংবা বন্ধু পরিচিতজনরা এলে সময় কাটাতে তারাও যায় হার্ডপয়েন্টে। এবারের ঈদে টিভি তারকা জাহিদ হাসান-মৌ দম্পতিসহ চলচ্চিত্র ও সাহিত্যাঙ্গনের তারকারাও এসেছিল সিরাজগঞ্জে ঈদ করতে এবং তাঁরাও এসেছিলেন হার্ডপয়েন্টে। আসলে চিত্তবিনোদন কিংবা অবকাশ যাপনের জন্য এই স্থাপনা নির্মাণ করা হয়নি। রাক্ষুসী যমুনার করালগ্রাস থেকে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষার জন্য এই স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে ১৯৯৮ সালে।
-বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ

No comments

Powered by Blogger.