ঈদের লম্বা ছুটিতে পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় উপচেপড়া ভিড়- দেশী বিদেশী অসংখ্য পর্যটক by আজাদ সুলায়মান

ছুটি পেলেই বাঙালী ছুটে অবকাশ যাপনে। লম্বা ছুটি পেলে তো কথাই নেই । এবার ঘরকুনো মানুষও ঈদে লম্বা ছু্িট পেয়ে কাজে লাগিয়েছে যে যার মতো। যারা সামর্থ্যবান তারা ছুটেছেন দেশের পর্যটনগুলোতে। কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সুন্দরবন, মহাস্থানগড়, জাফলং, হালতিবিল, সোনারগাঁয় ও কিশোরগঞ্জের এগারসিন্ধুর এবং মসুয়ার জমিদার বাড়িতে উপচেপড়া ভিড়।


পর্যটকরা পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ছুটে যান এসব কেন্দ্রে। অন্যবারের মতো এবারও ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় হবে এমন প্রত্যাশা নিয়েই পর্যটন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো সাজানো হয়েছে নানা সাজে। ব্যবসাও জমেছে বেশ। দেশী বিদেশী পর্যটকের সংখ্যাও ছিল অবিশ্বাস্য রকম। এ সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে এবার। তবে আগামীকাল রবিবারের আগেই পর্যটনপ্রেমী মানুষ ঘরমুখো হচ্ছে । পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খানও মনে করেন -এবার পর্যটকের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছড়িয়ে গেছে। তার মূল কারণ দীর্ঘ ছুটি আর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ।
কক্সবাজার
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে এবার রেকর্ডসংখ্যক পর্যটকের ভিড় লেগেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের আগমনে নিরাপত্তাকর্মীরাও বেশ তৎপর। এবার কক্সবাজারকে আগে থেকেই সাজানো হয়েছে অপরূপে। হোটেল-মোটেলের পুরনো জিনিসপত্র পরিবর্তন করা হয়েছে। দেয়ালের পুরনো আস্তর তুলে লাগানো হয়েছে প্লাস্টিক পেইন্ট কিংবা ডিসটেম্পার। রেস্তরাঁসমূহেও ধোয়ামোছা করা হয়েছে ও রঙে রঙে সাজানো হয়েছে। তবে এবার পর্যটকের ভিড় বাড়ায় উৎপাত বেড়েছে ভিক্ষুকেরও সমুদ্র সৈকত এলাকায় ভাসমান ভিক্ষুকের অবাধ বিচরণ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের গাফিলতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এখানে বেড়াতে আসা ঢাকার ফারজানা বলেনÑ ঈদের লম্বা ছুটি কাটাতেই পরিবার নিয়ে ছুটে যাওয়া। তার মতো অনেক পরিবার রাজধানী থেকে আগে থেকেই হোটেল-মোটেল অগ্রিম বুকিং দিয়েই বেড়াতে আসা ঈদের পরদিনই গেছেন কক্সবাজার। ফিরবেন রবিবারের মধ্যেই। সেখানকার ব্যবসায়ীরাও জানান হোটেল-মোটেল কোথাও নেই ফাঁকা।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী আখতারুজ্জামান খান কবির বলেন, ঘরকুনো মানুষ এখন আর অতীতের মতো নেই। তারা সুযোগ পেলেই এখন ঘর থেকে বের হয়। লম্বা ছুটিতে কোথায় বেড়াতে যাবে সেটার পরিকল্পনা করে বছরের শুরুতেই। এমনকি মধ্যবিত্ত মানুষ এখন এ জন্য একটা বাৎসরিক বাজেটও করে ফেলে। এবারকার কক্সবাজারসহ দেশের প্রতিটি কেন্দ্রে ছিল পর্যটকদের নজরকাড়া ভিড়। এটা নিঃসন্দেহে দেশের পর্যটন খাতের জন্য একটা শুভ লক্ষণ।
কক্সবাজারের বিভিন্ন পর্যটকদের সঙ্গে আলাপ করে দেখা যায়Ñ প্রতিবছরই ঈদের ছুটিসহ নানা ছুটিতে ব্যাপক সংখ্যক পর্যটকের ভিড় হয় কক্সবাজারে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। এ জন্য সাজসজ্জার কাজও করা হয়েছে সেভাবেই। প্রস্তুত পর্যটন অপারেটররা। সৈকতের কিটকটেও (ছাতা-চেয়ার) লেগেছে বিভিন্ন রঙের ছোঁয়া।
এখানকার দোকানদার আফজাল বলেন- পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের পর্যটন এলাকা মহেশখালী, হিমছড়ি, ইনানী, দরিয়ানগর, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, টেকনাফ সী-বিচ, সেন্টমার্টিনসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকা সেজেছে নতুন করে। কক্সবাজার শহরের বার্মিজ মার্কেটগুলোতে নানা রকমের বাহারি বার্মিজ পণ্যের সমাহার নিয়ে দোকানিরা বসে আছেন পর্যটকদের আগমনের অপেক্ষায়। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোন গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি ওমর সুলতান জানান, পর্যটক আসবে এমনটাই আশা করা যাচ্ছে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার নাজুক পরিস্থিতির কারণে তার উল্টোও হতে পারে। পর্যটকরা যাতে কক্সবাজার এসে বিভিন্ন পর্যটন এলাকা যেমন, টেকনাফ, হিমছড়ি, ইনানী, সাফারি পার্কে সহজে ভ্রমণে যেতে পারেন, সে জন্য সরকারী উদ্যোগে দ্বিতল বিশিষ্ট বাস সার্ভিসের দাবি জানান তিনি। তবে অভিযোগ রয়েছে, পর্যটন মৌসুমে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ পর্যটক কক্সবাজারে আসার কারণে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। এ সময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ নানাভাবে হয়রানি করা হয় তাদের।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোঃ জয়নুল বারী বলেন-পর্যটক হয়রানি বন্ধে হোটেল-মোটেল ও রেস্তরাঁয় মূল্য তালিকা টাঙানোর নির্দেশসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া সর্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হচ্ছে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সেলিম মোঃ জাহাঙ্গীর বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সজাগ আছে। পর্যটন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সাদা পোশাকে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
এবার বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগমের কারণ কি জানতে চাইলে ট্যুরিস্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান খান কবির বলেন, লম্বা ছুটির আগেই আমরা কিছু পরিকল্পনা করি। যেমন ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে। ট্যুরিস্ট বোর্ডের উদ্যোগে ওয়েবসাইটে দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ঘরকুনো মানুষকে নিজ দেশ সম্পর্কে জানার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আগে দেশকে জানুন পরে বিদেশ -এমন সেøøাগানকে জনপ্রিয় করা হয়েছে। দেশের টাকা দেশে থাকলে জাতীয় অর্থনৈতিক ভিত মজবুত হবে এটা এখন মানুষ উপলব্ধি করতে পারে। যে কারণে মানুষ এখন সহজে আশপাশের দেশগুলোতে না গিয়ে স্বদেশের প্রতি আাগ্রহী হয়ে উঠছে। এজন্য দেশীয় ট্যুর অপারেটরদের পরিকল্পনামাফিক পর্যটক আকৃষ্ট করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যে কারণে মানুষের পযটনপ্রেমী হয়ে ওঠার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
কুয়াকাটা
কক্সবাজারের পর দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা। ঈদের ছুটিতে ভাল ব্যবসা হবে তেমন প্রত্যাশা নিয়েই সাজানো হয়েছে। এখন পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত কুয়াকাটা। আর সে কারণেই হয়ত নতুনরূপে সেজেছে এই সাগরকন্যা। এখানকার প্রতিটি হোটেল-মোটেলে লেগেছে ঈদের ছোঁয়া। বিভিন্ন সড়ক আর বালুকাবেলায় লেগেছে নতুনত্বের ছাপ। যা পর্যটকদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ। ইতোমধ্যে কুয়াকাটার প্রায় প্রতিটি ভিআইপি হোটেল-মোটেলের অর্ধেকেরও বেশি সিট অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। এছাড়া সরকারী ডাকবাংলো অগ্রিম বুকিং হয়েছে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত। ধারণা করা হচ্ছে -গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ঈদের পরিপূর্ণ আনন্দ উপভোগ করতে পারছে পর্যটকরা। অনেক দিনের ভাঙা সড়ক মেরামত, লম্বা ছুটি, সাগরে ভাদ্র্রের উঁচু ঢেউ এবং একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা সবমিলিয়ে এবার কুয়াকাটার পুরো আনন্দটা শুধুমাত্র পর্যটকদের উপভোগের জন্যই। এ ছাড়া রয়েছে স্থানীয় ইলশা জেলেদের দলবেঁধে সাগরে ইলিশ শিকারে ছুটে চলা। আবার ইলিশ নিয়ে দলবেঁধে সাগরপাড়ে ছুটে আসা এক মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য।
এখানকার এক হোটেল ব্যবসায়ী জানান-রাজশাহীর গোদাগাড়ির এক শিল্পপতি তার হোটেলের সব সিট ২৩ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত বুক করে টাকা পরিশোধ করেছে এক সপ্তাহ আগে। পটুয়াখালী জেলা পরিষদের প্রাসনিক কর্মকর্তা পরিমল বলেন, কুয়াকাটা সাগরপাড়ে জেলা পরিষদের অত্যাধুনিক ডাকবাংলোর ৮টি সিটই বুক হয়ে গেছে ৫/৬ দিন আগে। বিলাসবহুল হোটেল কুয়াকাটা ইন এর কেয়ারটেকার সোহরাব জানান, যারা হোটেল বুক করেছে তাদের সঙ্গে প্রায়ই কথা হচ্ছে। হোটেলের আসবাবপত্র কি কি আছে, বাসা থেকে কি কি জিনিসপত্র আনতে হবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে পর্যটকদের কথা হচ্ছে।
সুন্দরবন
কুয়াকাটার পাশেই সুন্দরবনের চিত্রও একই। বিপুলসংখ্যক মানুষ এসেছে দেশবিদেশ থেকে। তারা আগে থেকেই এলাকার সীমিত কয়েকটা মোটেল বুকিং দিয়েই সুন্দরবনে ছুটে আসেন। তবে এবার দেশীয় পর্যটকের সংখ্যা ছিল আশাতীত। অনেকে পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও আসতে পারেননি হোটেল-মোটেলে সিট না পাওয়ায়। এখানে অবশ্য কিছু বাড়তি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে বরিশাল খুলনা এলাকা থেকে লঞ্চ ও বড় নৌকায় করে দলবেঁধে যেসব লোক আসে তাদের পরিবেশ দূষণ করার অভিযোগে এবার নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তারপরও দেখা যাচ্ছে হাজার হাজার পর্যটকের ভিড়।
সিলেট
কক্সবাজার ও কুয়াকাটার পর সবচেয়ে বেশি পর্যটকের ভিড় জমে সিলেটে। এখানকার জাফলং ও মাধবকুন্ড জল প্রপাতের স্পটে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। টানা চৌদ্দ দিনের ছুটির কারণে পর্যটকদের ঢল নেমেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ঈদের দিন থেকে পর্যটকদের আগমন ঘটছে। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক সিলেটের দর্শনীয় স্থানে ভিড় করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জানা যায় এখানকার সৌন্দর্যই মানুষকে আকৃষ্ট করে। প্রাকৃতিক সবুজ সুনিবিড় সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেকেই ঈদের ছুটিতে ছুটে আসেন সিলেটের অনিন্দ্য সুন্দর পর্যটন স্পটে। জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য, জাফলংয়ের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, ভোলাগঞ্জের সারি সারি পাথরের ¯ূÍপ পর্যটকদের টেনে আনে বার বার। নির্জন মনকাড়া লালাখানের স্বচ্ছ নীল জলরাশি আর দুই ধারের অপরূপ সৌন্দর্য, দীর্ঘ নৌ-পথ ভ্রমণের সাধ যেকোন পর্যটকের কাছে এক দুুর্লভ আকর্ষণ। ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচে লালাখালের অবস্থান। চেরাপুঞ্জি থেকে এ নদী বাংলাদেশে প্রবাহিত। সিলেট শহর থেকে লালাখাল যাবার জন্য পর্যটকদের পাড়ি দিতে হয় ৩৫ কিলোমিটার রাস্তা। অনেকভাবে যাওয়া যায়। শহর থেকে বাস, টেম্পো মাইক্রোযোগে পৌঁছা যায়। প্রকৃতির কন্যা হিসেবে সারাদেশে এক নামে পরিচিত সিলেটের জাফলং। খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়ের পাদদেশে জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছে আকর্ষণীয়। সীমান্তের ওপারে ভারতীয় পাহাড় টিলা, ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবহমান জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি, উঁচু পাহাড়ের গহীন অরণ্য ও সুনসান নীরবতার কারণে এলাকাটি পর্যটকদের দারুণভাবে মোহাবিষ্ট করে। এসব দৃশ্যপট দেখাতে প্রতিদিনই দেশী-বিদেশী পর্যটকরা ছুটে আসেন এখানে। প্রকৃতি কন্যা ছাড়াও জাফলং বিউটি স্পট, পিকনিক স্পট, সৌন্দর্যের রানী-এসব নামেও পর্যটকদের কাছে ব্যাপক পরিচিত। ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে জাফলংয়ের আকর্ষণই যেন আলাদা। সিলেটে এসে জাফলংয়ে না গেলে ভ্রমণই যেন অপূর্ণ থেকে যায়। রোপওয়ে, পাথর কোয়ারি আর পাহাড়ী মনোলোভা দৃশ্য অবলোকনের জন্য সিলেটের ভোলাগঞ্জেও এবার আসছেন অসংখ্য পর্যটক। পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল এলাকা চেরাপুঞ্জির অবস্থান ভারতের পাহাড়ী রাজ্য মেঘালয়ে। ধলাই নদীর উজানে এ রাজ্যের অবস্থান। খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় ঘেরা এ রাজ্যের দৃশ্য বড়ই মনোরম। ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে এলাকায় অবস্থান করে পাহাড় টিলার মনোরম দৃশ্যাবলীও অবলোকন করা যায়। সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ৩৩ কিলোমিটার। শহর থেকে ভোলাগঞ্জ সরাসরি কোন যানবাহন সার্ভিস নেই। আগন্তুকরা সিলেট থেকে টুকেরবাজার পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাস অথবা ফোরস্ট্রোকযোগে যাতায়াত করেন। টুকেরবাজার থেকে ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত রয়েছে বেবিট্যাক্সির সার্ভিস। উপমহাদেশের প্রথম চা বাগান মালনীছড়া পর্যটকদের কাছে আরেক বিস্ময়। সিলেটের চায়ের রং, স্বাদ এবং সুবাস অতুলনীয়। বর্তমানে বেসরকারী তত্ত্বাবধানে চা বাগান পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৫০০ একর জায়গার ওপর এ চা বাগান অবস্থিত। চা বাগানের পাশাপাশি বর্তমানে এখানে কমলা ও রাবারের চাষ করা হয়।
মালনীছড়া চা বাগান ছাড়াও সিলেটে লাক্ষাতুরা চা বাগান, আলী বাহার চা বাগান, খাদিম আহমদ টি স্টেট, লালাখান টি স্টেট উল্লেখযোগ্য। ওপরে বড় বড় ছায়া বৃক্ষ। নিচে আধো আলো আধো ছায়ায় দুটি পাতা একটি কুঁড়ির সবুজ চাদর। যেন শৈল্পিক কারুকাজ। এ প্রাকৃতিক দৃশ্য মন ছুঁয়ে যায়। মালনীছড়া এবং লাক্ষতুরা চা বাগান দুটোই সিলেট শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত। এছাড়াও সিলেটের শাহজালাল (র) এবং শাহপরাণ (র) এর মাজার এবং নাজিমগড় রিসোর্ট, জাকারিয়া সিটি, সিলেট নগরীর শেখ ঘাটে ঐতিহ্যবাহী জিতু মিয়ার বাড়িসহ অন্যন্য পর্যটন কেন্দ্রে ইতোমধ্যেই ঢল নামেতে শুরু করেছে পর্যটকদের।
সোনারগাঁও
রাজধানীর অদূরে ঐতিহাসিক সোনারগাঁয়েও চলছে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আনাগোনা। এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলোতে দিবারাত মানুষের ঢল। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন পানাম নগরী ও বাংলার তাজমহলসহ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান হাজার হাজার পর্যটকের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। এখানে সবশ্রেণীর পর্যটকেরই বিনোদনের ব্যবস্থা রযেছে। এবারের লম্বা ছুটিতেও ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের টিপরদী ও মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় লেগেই থাকে যানবাহনের ভিড়। কারণ বিপুলসংখ্যক দেশী-বিদেশী পর্যটকের পদভারে মুখরিত।
হালতিবিল
রাজশাহী এলাকার হালতিবিল ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পর্যটকদের কাছে। নাটোর শহর থেকে হালতিবিলের দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। অটো ও রিকশা ভাড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা। হাজারো মানুষের আগমনে হালতিবিল এখন মুখরিত। লম্বা ছুটিতে এবার এখানেও জমে উঠছে প্রচ- ভিড়। ঢল নামছে নাটোরের হালতিবিলে। ঈদের ছুটিতে প্রিয়জনকে নিয়ে একান্ত সময় কাটাতে সব বয়সের মানুষ চলে আসছে এখানে। এদের মধ্যে তরুণ-তরুণীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। এ বিল এলাকার নাম পাটুল হলেও ভ্রমণবিলাসী মানুষ এর নাম দিয়েছেন মিনি কক্সবাজার, কেউ বলে পতেঙ্গা বা দ্বিতীয় আশুলিয়া। হালতিবিলের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে একটি নতুন রাস্তা। ওই রাস্তায় হাঁটলে সমুদ্র সৈকতের আমেজ পাওয়া যায়। দুপাশে পানি আর পানি। মধ্য রাস্তায় আছড়ে পড়ে ছোট বড় ঢেউ। এখানে আড়াই শ’ থেকে ৩শ’ টাকা একটি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা বিলে ভ্রমণ করা যায় সহজেই। বিলের বুক চিরে ডুবো রাস্তা নির্মাণের ফলে এখন যেন পুরোপুরি বদলে গেছে দৃশ্যপট। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ২০০৪ সালে রাস্তাটি পাকা করার কাজ শুরু করে। পাটুলহাট থেকে খাজুরাহাট পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা নির্মাণে ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। পানির ওপর ভাসমান রাস্তায় যেন হাঁটছে মানুষ! কেউ কেউ দল বেঁধে বা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নৌকায় চেপে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিলের মধ্যে। আনন্দ ভ্রমণের এমন সুযোগ এর আগে আর মেলেনি। হালতিবিলের অন্যতম আকর্ষণ মাছ। বাড়ি ফেরার পথে তারা কিনছেন তাজা মাছ ।
এ ছাড়াও বগুড়ার মহাস্থানগড়, কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক এগারসিন্ধুর, মসুয়ার জমিদার বাড়ি ও জঙ্গলবাড়িতে মানুষের ব্যাপক আগমন ঘটছে।
বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমন সম্পর্কে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান বলেন, লম্বা ছুটি আর ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণেই আশাতীত পর্যটকের সমাগম । সারাদেশেই সরকার প্রতিটি সেক্টরেই বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। যে কারণে পরিস্থিতি ছিল চমৎকার। সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা ছিল নিয়ন্ত্রণে। যেটা পর্যটন খাতের জন্য অপরিহার্য।

No comments

Powered by Blogger.