বিশ্লেষণ- সিরিয়া সংকট সংঘাত বাড়াচ্ছে লেবাননে

লেবাননের সুন্নি মুসলমানেরা সিরিয়ার সরকারবিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন করছে। অন্যদিকে দেশটির শিয়া মুসলমানেরা প্রেসিডেন্ট আসাদের সমর্থক। সিরিয়ার রক্তক্ষয়ী সহিংসতা প্রতিবেশী দেশ লেবাননেও সশস্ত্র সংঘাত উসকে দিয়েছে।


গত সোমবার থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত দেশটির ত্রিপোলি শহরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের সমর্থক ও আসাদবিরোধীদের মধ্যে লড়াইয়ে ১৩ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন মুসলিম সুন্নি নেতা শেখ খালেদ আল-বারাদি।
সিরিয়ার সরকারবিরোধী আন্দোলন প্রথমদিকে রাজনৈতিক আন্দোলন থাকলেও ধীরে ধীরে এর সঙ্গে জাতিগত ও গোষ্ঠীগত বিভেদ এবং বৈষম্যের কারণে সৃষ্ট ক্ষোভের বিষয়টি যুক্ত হয়েছে। সিরিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সুন্নি মতাবলম্বী হলেও দেশটির শাসন-ক্ষমতা কার্যত শিয়াদের নিয়ন্ত্রণে। সামাজিক অবস্থান ও প্রভাব প্রতিপত্তির বিবেচনাতেও শিয়ারা সুন্নিদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। সুন্নি-শিয়াদের এই বিরোধই মূলত লেবাননে জাতিগত বিভেদ সৃষ্টি করছে।
লেবাননের সুন্নি মুসলমানেরা সিরিয়ার সরকারবিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন করছে। অন্যদিকে দেশটির শিয়া মুসলমানেরা প্রেসিডেন্ট আসাদের সমর্থক।
লেবাননে সাম্প্রতিক সহিংসতা প্রসঙ্গে সুন্নি ধর্মাবলম্বীদের নেতা আবু হামিদ (৪৫) বলেন, ‘এই সংঘাত কেবল সিরিয়ায় সরকারের পতন হলেই বন্ধ হবে। আমরা আসাদের বিদায়ের অপেক্ষায় আছি।’
প্রেসিডেন্ট আসাদ সিরিয়ার প্রভাবশালী আলাবি গোষ্ঠী থেকে উঠে এসেছেন। আলাবি গোত্রটি প্রতিবেশী দেশ লেবাননেও বেশ প্রভাবশালী। প্রেসিডেন্ট আসাদের প্রতি স্পষ্টতই তাদের সমর্থন রয়েছে।
লেবাননের আলাবিদের প্রধান রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র আলি ফেদ্দাহ বলেন, সিরিয়ার বিদ্রোহীরা লেবাননের ত্রিপোলি শহরে এসে সহিংসতার জন্ম দিচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, স্থানীয় সুন্নিরা আলাবি এলাকায় এসে নানাভাবে উসকানি দিচ্ছে। এ কারণেই উত্তেজনা বাড়ছে। আলি ফেদ্দাহর আশঙ্কা, ‘পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে।’
লেবাননের ত্রিপোলি থেকে সড়ক পথে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক মাত্র আড়াই ঘণ্টার পথ। লেবাননের সুন্নি নেতারা অভিযোগ করছেন, দেশটির শিয়া জঙ্গি সংগঠন হিজবুল্লাহর শত শত যোদ্ধা প্রেসিডেন্ট আসাদের পক্ষে সিরিয়ায় গিয়ে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই করছেন।
তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, সিরিয়ার বিক্ষোভ লেবাননকেও গ্রাস করবে, এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। সিরিয়া ও লেবানন—প্রতিবেশী এই দুই দেশের অস্তিত্ব পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। শত বছর আগে দামেস্কের একটি বন্দর ছিল ত্রিপোলি। দীর্ঘ সময় ধরে সিরিয়ায় এমন একটি ধারণার প্রচলন ছিল ইউরোপীয় উপনিবেশবাদের কারণেই লেবাননের সৃষ্টি হয়েছে। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে লেবাননের অস্তিত্বকে একটা সময় পর্যন্ত মেনে নিতে চাইতো না সিরিয়ার মানুষ।
সিরিয়ার সংকট যে লেবাননের জন্য ঘোরতর বিপদ ডেকে আনছে তা বোঝা যাবে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর মন্তব্যেও। তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হোক।’ নিউইয়র্ক টাইমস।

No comments

Powered by Blogger.