বাসভবনে চিকিৎসক খুন-প্রশ্নবিদ্ধ জননিরাপত্তা

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে দ্রুত অবনতি হচ্ছে, এ কথা এখন আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। ঈদের ছুটিতে সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চিত্র থেকেই প্রতীয়মান হয়, কতটা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আমাদের বাস। ঈদের ছুটিতে রাজধানীতে বড় কোনো অঘটন না ঘটায় স্বস্তি ও সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।


কিন্তু সেই রাতেই রাজধানীতে ঘটেছে এক মর্মান্তিক ঘটনা। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে স্বস্তি প্রকাশের কোনো সুযোগ যে আদৌ নেই, এই একটি ঘটনা থেকেই তা স্পষ্ট হয়।
মাত্র এক সপ্তাহ আগে পরিবেশগত দিক থেকে রাজধানী ঢাকা বিশ্বের শীর্ষ বাস-অযোগ্য শহর হিসেবে বিবেচিত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতার দিকটিও যদি বিবেচনা করা যায়, তাহলে ঢাকার অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? এই মহানগরীতে বাইরে বেরিয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরে আসার গ্যারান্টি নেই। জীবনের নিরাপত্তা নেই শয়নকক্ষেও। গত বৃহস্পতিবার ভোররাতে রাজধানীতে নিজের বাসায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিষদের সদস্য ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই। চুরি কিংবা ডাকাতি নয়, ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার বলে মনে করছেন তাঁর পরিবারের এক সদস্য। দেশের দিকে তাকালে দেখা যাবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চিত্র মোটেও সুখকর নয়। গত বৃহস্পতিবার মাঝরাতে রাজবাড়ী জেলা বিএনপির নেতা ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি এস এম শামসুল আলম বাবলুকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রাত ১টার দিকে স্থানীয় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা বাবলুকে গুলি করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। একই দিন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্বশত্রুতার জের ধরে যশোর সদরে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যে ঈদের ছুটিতে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে স্বস্তি ও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সেই ঈদের ছুটিতেই বগুড়ায় পৃথক ঘটনায় তিন ব্যক্তি খুন হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জে এক রাতে তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে নরসিংদীতে। সংবাদমাধ্যমে আসা খবরের বাইরে আরো অনেক খবর থেকে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।
রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা না হয় বাদই দিলাম, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে স্বস্তি প্রকাশের কোনো সুযোগ এরপর থাকে কি না- সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। রাজধানীতে এর আগে একের পর এক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলেও কোনোটিরই কিনারা হয়নি। ফলে অপরাধীচক্র উৎসাহিত হয়েছে। রাজধানীর পাশাপাশি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও সন্তোষজনক নয়। সর্বত্রই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ক্রমাবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের কোনো লক্ষণ স্পষ্ট নয়। উল্টো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপারে দায়িত্বশীলদের স্বস্তি ও সন্তোষ প্রকাশ অপরাধীদের অনেকটাই আশকারা দেয় বলে মনে করা যেতে পারে। ঈদের আগে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছিল, আইনের ফাঁকফোকর গলে অপরাধীরা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এই অপরাধীরা আবারও নিজেদের একটা বলয় তৈরি করে অপরাধ জগতের সঙ্গে যে মিশে যাচ্ছে না, এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে না। কাজেই জননিরাপত্তা শত ভাগ নিশ্চিত করা গেলেই স্বস্তি প্রকাশ করা যাবে।
ডা. নিতাইয়ের মতো একজন চিকিৎসকের মৃত্যু শুধু তাঁর পরিবারের জন্যই নয়, দেশের জন্যও একটি বড় ক্ষতি। এই ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়। ডা. নিতাইয়ের ঘাতকরা যেন ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে না যায়, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহলকে সচেষ্ট হতে হবে। আমরা আশা করব, সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন ও জননিরাপত্তা বিধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথোপযুক্ত ভূমিকা পালন করবে।

No comments

Powered by Blogger.