মৃত্যু হাতে নিয়ে ছাদে চড়ে ঢাকা যাত্রা

‘এই যে ঢাকা, ঢাকা। ছাদ দেড় শ, ছাদ দেড় শ।’ এভাবেই গতকাল শুক্রবার রাজশাহীর শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় ঢাকাগামী নিম্ন আয়ের যাত্রীদের ডেকে বাসের ছাদে তুলছিলেন পরিবহন শ্রমিকেরা। তাঁরা জেলার বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারী লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা বাস এনে ঈদ মৌসুমে ঢাকার যাত্রী পরিবহনের উদ্যোগ নিয়েছেন।


সচেতন নাগরিক কমিটি রাজশাহীর সভাপতি চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘কয়টা টাকা বাঁচানোর জন্য তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসের ছাদে উঠছে। এতে চলার সময় বাস ভারসাম্য হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে। বাস মালিক ও শ্রমিকদের দায়িত্বশীল হতে হবে।’
বাসের ছাদে ভ্রমণ নিষিদ্ধ হলেও ঈদের এক দিন পর থেকে প্রতিদিন এ ধরনের প্রায় ৩০টি বাস ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাজশাহীর যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের পর রাজশাহী থেকে ঢাকা যাওয়ার ট্রেনের টিকিট নিম্ন আয়ের মানুষেরা জোগাড় করতে পারেনি। বাসের টিকিটেরও দাম বাড়ানো হয়েছে। ঢাকা-রাজশাহী সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী কোচগুলো ঈদ উপলক্ষে তাদের ভাড়া ৪০০ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৪০০ টাকা করেছে। ঢাকাগামী লোকাল বাসগুলোর ১৫০-২০০ টাকার ভাড়া এখন সাড়ে ৪০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা কোচগুলোর টিকিট আগেই বিক্রি করা ছিল। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত কোনো যাত্রী তাৎক্ষণিক বাসের টিকিট জোগাড় করতে পারেননি। একই অবস্থা হয়েছে ট্রেনের টিকিটের ক্ষেত্রেও।
যাত্রীরা বলছেন, ট্রেনের টিকিটের মূল্য না বাড়ালেও টিকিট সোনার হরিণ হয়ে গেছে। আগে থেকে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে নিম্ন আয়ের যাত্রীরা কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে বাধ্য হয়ে লোকাল বাসের ছাদে উঠছেন। এ ধরনের বাসের চেইন মাস্টারদের সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন রাজশাহী থেকে প্রায় ৩০টি লোকাল বাস ভেতরে ও ছাদে যাত্রীবোঝাই করে ঢাকায় যাচ্ছে। গতকাল দুপুরে রাজশাহী নগরের শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের ওপরে লাইন ধরে লোকাল বাসগুলো দাঁড়িয়ে আছে। যাত্রী বোঝাই করে চেইন মাস্টারের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে এগুলো ছাড়া হচ্ছে। রাজশাহী-সোনামসজিদ সড়কপথের সাধনা পরিবহনের একটি বাসের ছাদে যাত্রী বোঝাই করা হচ্ছে। চেইন মাস্টার লিটন বলেন, ‘ঢাকার যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ সামাল দেওয়ার জন্য গাড়িগুলো অন্য রুট থেকে আনা হয়েছে। গাড়ির ভেতরের সিটের যাত্রীর ভাড়া সাড়ে ৪০০ টাকা এবং ছাদের ভাড়া দেড় শ করে নেওয়া হচ্ছে।’ তিনি স্বীকার করেন, অন্য সময় ঢাকা-রাজশাহী সড়কে লোকাল গাড়িগুলো ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ভাড়ায় যাত্রী নিয়ে যেত। ঈদের কারণে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
এক ঘণ্টা আগে থেকে ওই বাসের ছাদে উঠে বসে আছেন নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার খড়িবাড়িহাট গ্রামের আলমগীর হোসেন। তিনি ঢাকায় রিকশা চালান। তিনি জানান, ট্রেনে টিকিট পাননি। বাসের ভেতরে উঠতে হলে সাড়ে ৪০০ টাকা লাগবে। কম টাকায় যাওয়ার জন্য বাসের ছাদে উঠেছেন। তাঁর সঙ্গে একই ছাদে যাচ্ছেন তাঁর মা নাদিরা খাতুন। তিনি ঢাকায় একটি জুতার কারখানায় কাজ করেন। একই গ্রামের সখিনা খাতুন শিশু রীতা খাতুনকে নিয়ে বাসের ছাদে চড়েছেন। তাঁরাও ঢাকায় জুতার কারখানায় কাজ করেন।
রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর রহমান বলেন, ‘এখন বাধা দিতে গেলে যাত্রীরা আমাদের কাছে বাসের টিকিট দাবি করে বসবে। এমনকি আমাদের অপদস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গতবার আমি নগরের তালাইমারীতে তাদের ঠেকানোর উদ্যোগ নিয়েছিলাম। ব্যর্থ হয়ে আসতে হয়েছে।’
রাজশাহী মহানগর ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার তৌহিদ আরিফ বলেন, ঈদের সময় এ ব্যাপারে একটু ছাড় দেওয়া হয়। তা ছাড়া তারা নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে যোগদান করতে পারবে না। ঈদের মৌসুম পার হলেই আবার এ ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.