গাজীপুর উপনির্বাচনে তাজউদ্দীনকন্যা

সোহেল তাজের পদত্যাগে শূন্য হওয়া গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন তাঁর বড় বোন সিমিন হোসেন রিমি। দলীয় একাধিক সূত্র এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তবে রিমি বা তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি।


জানা গেছে, নির্বাচন করার ব্যাপারে রিমির আগ্রহ না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আসনে তাজউদ্দীন পরিবারের কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের বিষয়টি বৃহস্পতিবার রাতে তাজউদ্দীন আহমদের পরিবারকে জানানো হয়। আসন্ন উপনির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও জেলা ছাত্রলীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আমানত হোসেন খান বলেন, 'কাপাসিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এলাকাবাসী বরাবরই চাইছিল তাজউদ্দীন আহমদের পরিবারের কেউ উপনির্বাচনে প্রার্থী হোন। বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা হলে গতকাল সকালে উপজেলা চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লাসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোহরা তাজউদ্দীনের বাসায় যান। আমিও তাঁদের সঙ্গে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এলাকাবাসীর ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে আপা (রিমি) নির্বাচন করতে রাজি হয়েছেন। তিনি নির্বাচন করলে আমি প্রার্থী হব না।'
সোহেল তাজের সাবেক এপিএস আবু কাওসার একই কথা জানিয়ে বলেন, 'আপা নির্বাচন করতে রাজি হয়েছেন। এই মুহূর্তে এর বেশি বলতে পারছি না।'
এদিকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র গতকাল কালের কণ্ঠকে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজীপুর-৪ আসনের উপনির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করার ভার আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জোহরা তাজউদ্দীনের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাজউদ্দীন পরিবারের একজন সদস্য গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত হলে রিমি প্রার্থী হতে আপত্তি জানাবেন না। অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, সিমিন হোসেন রিমি নির্বাচন করতে সম্মতি দিয়েছেন এটা নিশ্চিত। তবে এ বিষয়ে কেউই এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।
এদিকে তফসিল ঘোষণার পর পাল্টে গেছে কাপাসিয়ার চিত্র। গত ৭ জুলাই সোহেল তাজের পদত্যাগের পর ডজনখানেক প্রার্থী আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে গণসংযোগ শুরু করেন। রমজান ও ঈদের সময় তাঁরা ভোটারদের কাছে দোয়া ও সমর্থন চেয়ে দিনরাত উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা চষে বেড়িয়েছেন। বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণার পর দলীয় মনোনয়ন পেতে তদবির-লবিং করতে নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে অনেক প্রার্থী ছুটে যান রাজধানীতে। গতকাল ছুটির দিনে কাপাসিয়ায় গিয়ে দেখা গেছে, আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে শিল্পপতি আবদুর রশিদ সরকার, মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুল আলম বেনু, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল আমিন, সাবেক ছাত্রনেতা আমানত হোসেন খান ও আনিছুর রহমান আরিফ, কৃষিবিদ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং ড. মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এলাকায় গণসংযোগ করে চলেছেন। অন্যদিকে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন সোহেল তাজের চাচা সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আফসার উদ্দিন আহমেদ, সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন মেহেদী, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুর রহমান মোল্লা ও শিল্পপতি নাজমুল হাসান চৌধুরী পিন্টু।
সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রিমি প্রার্থী হলে নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না। সে ক্ষেত্রে তাঁর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ারও সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। অন্য কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে একাধিক প্রার্থী বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।
সিমিন হোসেন রিমি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে।
ছাত্রলীগের মিছিল, মিষ্টি বিতরণ
গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের উপ-নির্বাচনে সিমিন হোসেন রিমি প্রার্থী হচ্ছেন এ খবরে গতকাল সন্ধ্যার পর কাপাসিয়া শহরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে ছাত্রলীগ। জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আমানত হোসেন খানের নেতৃত্বে মিছিলে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম দর্জিসহ অন্য নেতারা অংশ নেন। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
এদিকে রিমির প্রার্থী হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে কাপাসিয়ায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.