চরাচর-বিপন্ন লজ্জাবতী বানর by আলম শাইন

যেকোনো ধরনের প্রাণী প্রজাতির যদি প্রকৃতি থেকে বছর দশেকের মধ্যে ৫০ শতাংশ বা তারও অধিক বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সাধারণত সে প্রজাতি মহাবিপন্নের তালিকায় স্থান পায়। আমাদের দেশে বেশ কয়েক প্রজাতির প্রাণী আজ মহাবিপন্নের তালিকায় রয়েছে। লজ্জাবতী বানর তার অন্যতম।


প্রাণিবিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এটি দ্রুত হারিয়ে যাবে এ দেশ থেকে। ফলে লজ্জাবতী বানর 'রেড সিগন্যালের' আওতায় রয়েছে। এর অন্যতম কারণ, অবাধে বনভূমি উজাড়। লজ্জাবতী বানরের বাসযোগ্য স্থান হচ্ছে গভীর জঙ্গল। উঁচু গাছের মগডালে থাকতে পছন্দ করে এরা। জনমানবের পদচিহ্ন নেই যেখানে, সেখানে ওদের বাস। সে রকম মানানসই পরিবেশ সংকুচিত হয়ে আসায় লজ্জাবতী বানর টিকে থাকতে পারছে না। অন্য কারণটি হচ্ছে, এদের প্রজননহারও সন্তোষজনক নয়। সন্তোষজনক নয় গড় আয়ুও। মাত্র ১০-১২ বছর বাঁচে। অবশ্য যদি অনুকূল পরিবেশ পায়। বছরে মাত্র একটি বাচ্চা প্রসব করে মাদি বানরটি। প্রাণীটির ইংরেজি নাম (Slow Loris or Flow Loris), বৈজ্ঞানিক নাম (Nyctichebus Coucang)। দেখতে খানিকটা ছোট আকারের পান্ডার মতো। এদের শরীরে সাদা লোমের আধিক্য নজরে পড়ে। পিঠে রয়েছে খয়েরি রঙের লম্বা ডোরা দাগ। পায়ের আঙুল পাঁচটি। লেজ খাটো। লেজ ছাড়া ৩২-৩৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা। এদের অনেকে মুখচোরা বানরও বলে। কারণ লজ্জাবতী বানর মানুষ দেখলে সত্যিকারের লজ্জা পেয়ে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে। এ থেকেই বোধ হয় ওদের নাম হয়েছে 'লজ্জাবতী বানর'। এরা নিশাচর ও চির সবুজ অরণ্যের বাসিন্দা। বৃষ্টিপাত বেশি হয় এমন এলাকা এদের পছন্দ নয়। বলা যায়, এরা বেশ শৌখিন প্রকৃতির। পারতপক্ষে এরা ঝোপ-জঙ্গলে প্রবেশ করে না। ছোট পাখি, পাখির ডিম, পোকামাকড়, গাছের কচি পাতা ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে। স্বভাবে বেশ শান্ত। বেশির ভাগ সময় গাছের ডালে উল্টোভাবে ঝুলে থাকে। ভারত ও মিয়ানমারের গহিন জঙ্গলে ওদের বিচরণ রয়েছে। সেখানে ওরা ভালো রয়েছে কিছুটা। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট অঞ্চলে একসময় বেশ কিছু লজ্জাবতী বানর দেখা যেত। বর্তমানে লাউয়াছড়ার জঙ্গল ও চিড়িয়াখানা ছাড়া আর কোথাও খুব একটা নজরে পড়ে না। এটি অবশ্যই দুঃখজনক ব্যাপার। তাই আমাদের প্রত্যাশা, অভয়ারণ্যের মাধ্যমে এদের বংশবিস্তার ঘটিয়ে প্রজাতিটিকে টিকিয়ে রাখার।
আলম শাইন

No comments

Powered by Blogger.