চরাচর-বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস by এম হোসেইন

বিশ্বে এখন ৭০০ কোটি মানুষের বসতি। জন্মহার কমিয়ে আনতে না পারলে এই জনসংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে নিঃসন্দেহে। ৭০০ কোটি মানুষের চাপ সইতে গিয়ে পৃথিবী নাকাল। সেখানে যদি আরো ১০০ কোটি যোগ হয়, তাহলে কেমন অবস্থা হবে এই দুনিয়ার? অথচ অর্ধশতাব্দীকাল আগেও এই সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫০ কোটি।


সংগত কারণেই ভাবনার বিষয়। অপরিকল্পিত পরিবার, পিছিয়ে পড়া সমাজব্যবস্থা, শিক্ষার ঘাটতি, কোথাও কোথাও ধর্মীয় অন্ধত্ব, সামাজিক কুসংস্কার ও আর্থিক টানাপড়েনের মতো কারণগুলোই লোকসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। অন্যদিকে এই সমস্যাগুলোকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। তাহলে কী হবে আমাদের আগামী? ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতে হলে তাই জনসংখ্যাকে পৃথিবীর ধারণ ক্ষমতার মধ্যে সীমিত রাখার প্রয়োজন অতি জরুরি। তার জন্য সবার আগে চাই জনসচেতনতা সৃষ্টি। ওই লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে এসেছে জাতিসংঘ। তারই আলোকে ১৯৮৯ সালে ইউএনডিপি ৮৯/৪৬ নম্বর মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেয়, বিশ্বসমাজে পৌঁছে দিতে হবে জনসংখ্যা সীমিত রাখার আহ্বান। বলা হয়, প্রতিবছর ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস হিসেবে পালিত হবে। আর প্রতিবছরই একেকটি বিষয়কে সামনে এনে এ দিবসটি পালনের রেওয়াজও তৈরি হয়েছে সেই থেকে। পরিকল্পিত পরিবার গঠনের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে মানুষকে ধারণা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। নারী-পুরুষভেদে বৈষম্যকে ঘুচিয়ে আনার ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। দারিদ্র্য নিরসনের ব্যাপারে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেই পথ বের করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটিও প্রাধান্য পেয়েছে। বলা হয়েছে, গর্ভবতীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা আমাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রসূতির প্রাণহানি ঘটছে আশঙ্কাজনকভাবে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, প্রসবকালীন জটিলতার কারণে পৃথিবীতে দৈনিক প্রায় ৮০০ নারী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে তাদের এই পরিবর্তনের সঙ্গে প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানার পরিবর্তন হচ্ছে না। তাঁরা জানেন না কিভাবে নিজেকে সুস্থ রাখতে হবে, কিভাবে তিনি সুস্থ সন্তানের মা হতে পারবেন। পৃথিবীর ভারসাম্য অক্ষুণ্ন রাখার ক্ষেত্রে যে তাঁরও বিশাল ভূমিকা আছে, সে বিষয়েও তাঁর কোনো ধারণা নেই। এ পরিস্থিতিতে দৈনিক ৮০০ নারীর মৃত্যুঝুঁকি কমিয়ে আনতে হলে এই অন্ধত্বকে দূর করার কোনো বিকল্প নেই। ২০১৫ সালের মধ্যে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করার যে বিশ্বব্যাপী কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছিল, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই লক্ষ্য অর্জনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অস্বাভাবিক জনসংখ্যাধিক্য সংগত কারণেই উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আজকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি বলা হয়। বর্তমান জন্ম হার ১ দশমিক ৩৪ অব্যাহত থাকলেও আগামী ২০৫০ সালে জনসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ২৪ কোটি ২৯ লাখে। প্রতি হাজারে ৫০ নবজাতকের মৃত্যুও আমাদের অগ্রগতিকে টেনে ধরে। এ পরিস্থিতির উন্নতি করতে না পারলে আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না। তাই এ বছরের বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসে আমাদের লক্ষ্য হোক পরিকল্পিত পরিবার গঠন, মাতৃত্বকালীন মৃত্যু কমিয়ে আনা, শিশুমৃত্যু রোধ করা, কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গঠন করা, সর্বোপরি শিক্ষা বিস্তার ও দারিদ্র্য নিরসন করা।
এম হোসেইন

No comments

Powered by Blogger.