পবিত্র কোরআনের আলো-মারিয়ামকে আল্লাহ নারীকুলের শ্রেষ্ঠ করলেন

৪১. ক্বালা রাবি্বজ্ আ'ললি আ-ইয়াতান ক্বালা আ-ইয়াতুকা আল্লা-তুকালি্লমান্নাসা সালাসাতা আইয়্যামিন ইল্লা-রামযা; ওয়ায্কুর রাব্বাকা কাসিরাও ওয়াছাবি্বহ্ বিল আশিয়্যি ওয়ালইব্কার। ৪২. ওয়াইয্ ক্বালাতিল মালাইকাতু ইয়া মারইয়ামু ইন্নাল্লাহাস্ত্বাফাকি ওয়াত্বাহ্হারাকি ওয়াসতাফাকি আলা নিসায়িল আ'লামিন।


৪৩. ইয়া মারইয়ামুক্ব্নুতি লিরাবি্বকি ওয়াস্জুদি ওয়ার্কায়ী মাআর্রাকিয়িন। [সুরা : আল ইমরান, আয়াত : ৪১-৪৩]
অনুবাদ : ৪১. জাকারিয়া প্রার্থনা জানালেন, হে প্রভু, তুমি আমার জন্য কিছু আলামত নির্ধারণ করে দাও। আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ, তোমার জন্য আলামত দেওয়া হলো, তুমি তিন দিন তিন রাত মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, ইশারা-ইঙ্গিত করতে পারবে। এ অবস্থায় তুমি তোমার প্রভুকে বেশি বেশি স্মরণ করবে এবং সকাল-সন্ধ্যায় তসবিহ পাঠ করতে থাকবে।
৪২. (অতঃপর মারইয়াম যুবতী হলে) আল্লাহর ফেরেশতারা যখন বললেন, হে মারিয়াম, আল্লাহতায়ালা তোমাকে বাছাই করেছেন এবং তোমাকে পবিত্র করেছেন। তিনি বিশ্বের নারীকুলের ওপর তোমাকে বিশেষভাবে বাছাই করেছেন।
৪৩. হে মারিয়াম, সেই বিশেষ সম্মানের যোগ্য হওয়ার জন্য তুমি তোমার প্রভুর অনুগত হও, তাঁর কাছে মাথা নত করো বা সিজদা করো এবং রুকু বা ইবাদতকারীদের সঙ্গে ইবাদত করো।
ব্যাখ্যা : এ আয়াতগুলোও আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এসেছে। প্রথমে আলে ইমরান বা মহীয়সী নারী মারিয়ামের কাহিনীর অবতারণা করা হয়েছিল, পরে প্রসঙ্গত মাঝখানে চলে আসে জাকারিয়া (আ.) ও তাঁর ছেলে ইয়াহিয়ার কাহিনী। বর্তমান আয়াত তিনটির প্রথমটি অর্থাৎ ৪১ নম্বর আয়াতে জাকারিয়া (আ.) ও তাঁর ছেলে জন্মের প্রসঙ্গ বলা হয়েছে। এরপর ৪২ ও ৪৩ নম্বর আয়াতে এসেছে মারিয়ামের বিশেষ সম্মানে আল্লাহর দরবারে মনোনীত হওয়ার প্রসঙ্গ।
৪১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, জাকারিয়া আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানালেন, হে প্রভু, তুমি আমাকে ছেলে সন্তান দানের সুসংবাদ প্রদান করেছ, আমি চাই তুমি আমাকে কিছু নিদর্শন নির্ধারণ করে দাও। আল্লাহর অসীম কুদরতের আস্থা তাঁর আছে, তবু এই বৃদ্ধ বয়সে কিভাবে তিনি বাবা হবেন এর আলামত দেখতে চাইলেন। কথিত আছে, তখন জাকারিয়া (আ.)-এর বয়স ছিল ১০০ বছর এবং তাঁর স্ত্রীর বয়স ছিল ৯৮ বছর। এ বয়সে নারী-পুরুষ কারোই প্রজনন ক্ষমতা থাকে না। জাকারিয়া (আ.) এবং তাঁর স্ত্রীরও তা ছিল না। কিন্তু আল্লাহতায়ালা তাঁর অসীম ক্ষমতাবলে তা-ই করলেন। আর আলামত হিসেবে নির্ধারণ করে দিলেন পুরো তিন দিন অর্থাৎ তিন দিন তিন রাত তিনি মানুষের সঙ্গে কথা বলার ক্ষমতা হারালেন। তবে ইশারা-ইঙ্গিত করতে পারতেন। তিন দিন মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারবে না_এর অর্থ দুই রকম হতে পারে। এক. কথা বলার ক্ষমতাই থাকবে না। দুই. কথা বলার ক্ষমতা থাকবে, তবে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। বেশির ভাগ তাফসিরকারীর মতে, প্রথমোক্ত অর্থটিই অধিকতর গ্রহণযোগ্য। কারণ তিন দিন কথা বলতে না পারাটাই সরল অর্থে আল্লাহর প্রদত্ত আলামত।
৪২ ও ৪৩ নম্বর আয়াতে আবার ফিরে এসেছে মারিয়াম প্রসঙ্গ। মারিয়ামকে আল্লাহ নারীকুলের ওপর বিশেষ সম্মানে মনোনীত করেছেন_এ কথার দ্বারা বয়োপ্রাপ্ত বা যুবতী হওয়ার পরবর্তী সময় বোঝায়। অর্থাৎ এই কথোপকথন হয়েছিল মরিয়ম যুবতী হয়ে ওঠার পর। মহীয়সী মাতা মারিয়ামকে আল্লাহ বিশেষ সম্মানে মনোনীত করেছিলেন এবং পবিত্র করেছিলেন। এই বিশেষ সম্মানে মনোনীত ও পবিত্র করার অর্থ পবিত্র কুমারী অবস্থায় তাঁকে মা বানানো বোঝানো হয়েছে। ৪৩ নম্বর আয়াতে সেই বিশেষ সম্মানে মনোনীত ও পবিত্র নারী হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের কারণে মারিয়ামকে তাঁর প্রভুর প্রতি আরো অনুগত অর্থাৎ সিজদা ও রুকু করার কথা বলা হয়েছে। মারিয়ামের বংশ ইহুদি সম্প্রদায়ে মুসলমানদের মতোই নামাজের বিধান ছিল। মারিয়ামকে মসজিদে আকসায় উপাসনাকারীদের সঙ্গে বা তাদের মতো করে নামাজ আদায় করার কথা বলা হয়েছিল। সে কথাই এখানে উদ্ধৃত করা হয়েছে।

গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.