যুক্তিবাদী মানুষের খোঁজে... by শাকিল মাহবুব

সত্যকে মেপে নিই যুক্তির নিক্তিতে, বিতর্ক বাকিশল্পের মূর্ত প্রতীক... এমন সুন্দর সুন্দর কথামালায় সাজানো ফেস্টুন দিয়ে ঘেরা রুমটি বেশ সাজানো-গোছানো পরিপাটি। নতুন দেয়ালে এখনো রঙের লেশমাত্র লাগেনি, তবু রুমে প্রবেশ করেই বোঝা যায়, কী হতে যাচ্ছে এখানে। পিনপতন নিস্তব্ধতা অথচ মানুষ ৬০ জনের ওপরে।


একটু অবাক হলাম, কেন এত নিস্তব্ধতা? বিতর্কের কর্মশালা আর একটুও আওয়াজ নেই। এ কী করে সম্ভব? আসলে শাহান আরা ম্যাডাম বসে আছেন অনেকক্ষণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে। একটু অবাক হলাম, যখন শুনলাম বিতর্ক ওয়ার্কশপের জন্য আগ্রহী ১৫০ জন থেকে অতি উৎসাহী ৬০ জন এখানে।
দিনব্যাপী বিতর্কের নানা কৌশল, প্রশ্ন, উত্তর আর আলোচনার মধ্য দিয়ে বিতর্ক কর্মশালা চলছিল। বন্ধুসভা বিতর্ক দল এর আগেও আরও কয়েকটি বিতর্ক কর্মশালার আয়োজন করে। কিন্তু এবারের কর্মশালাটি ছিল একটু ব্যতিক্রম। এবার সংসদীয় বিতর্কের নিয়মকানুন সবকিছু পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা হয়। ফলে ক্লাসটি অনেক বেশি শিক্ষার্থীর কাছে উপভোগ্য হয়ে ওঠে। একদিকে যেমন ছিল বিতর্কের নিয়মকানুন জানানো, অন্যদিকে বিভিন্ন তত্ত্ব, তথ্য, উপাত্ত দিয়ে বিতর্কের বিভিন্ন বিষয়ের ওপরে নানাবিধ উদাহরণসহ বিষয়ভিত্তিক আলোচনাও ছিল। আমার সঙ্গে কর্মশালা পরিচালনা করেন ভিকারুননিসা নূন কলেজ ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি সিলভিয়া সানজানা।
বিপত্তি ঘটে তখনই, যখন শুনলাম সবাই পরের দিনের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চায়। বাধ্য হয়ে সবাইকে নিয়েই দল তৈরি করতে হলো। কোনো দলে পাঁচজন আবার কোনো দলে ছয়জন। বিতর্ক করবে তিনজনই, অন্যরা সবাই দলকে সাহায্য করবে। সব মিলিয়ে আটটি দল তৈরি হয়ে গেল। কর্ণফুলী, সূর্যমুখী, ধূপছায়া, স্বরবর্ণ, কিরণ, হায়না, বার্নাস, প্ল্যানচ্যাট এমন নানাবিধ নাম দিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নিজেদের দল তৈরি করল। সবার মধ্যে প্রচণ্ড আগ্রহ, কোন দল চ্যাম্পিয়ন হয়?
পড়ালেখার পাশাপাশি এমন সব সহশিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে ইমপিরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা যেন একজন আদর্শ, সৎ মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে—এমন আশাবাদ কলেজের অধ্যক্ষ মাহফুজুর রহমানের। দুই দিনের বিতর্ক আসরের সমাপনী দিনে উপস্থিত ছিলেন বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আব্দুন নূর তুষার।
বিতর্ক করে চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ হয় যথাক্রমে স্বরবর্ণ ও হায়না। অনুষ্ঠান শেষে বিতার্কিকদের মধ্যে বই ও সনদ বিতরণ করা হয়। শিশির, রাইয়ানা, তোফা, আরিফ, সোহান ও তামজিদ বিচারকাজে সহযোগিতা করেন। এমনভাবে একজন যুক্তিবাদী আদর্শ মানুষ খোঁজার অভিযান বন্ধুসভা বিতর্ক দলের চলতে থাকবে—এ প্রত্যাশা সবার।

No comments

Powered by Blogger.