আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা-মিসরে পার্লামেন্টের অধিবেশন বসেছে

মিসরে প্রভাবশালী সামরিক বাহিনী ও বিচার বিভাগের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে গতকাল মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্টের অধিবেশন বসেছে। আদালতের রায়ের পর সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষিত হওয়া এবং প্রেসিডেন্টের ফরমান জারির মাধ্যমে তা পুনরুজ্জীবিত করা নিয়ে চলতি সংকটের মধ্যেই গতকাল ওই অধিবেশন বসে।


পার্লামেন্টের স্পিকার সা’দ আল-কাতানি বলেন, ‘সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালতের রায় পর্যালোচনা করতেই আমরা আজ এখানে সমবেত হয়েছি। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, আমরা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে যাচ্ছি না। মহামান্য আদালত যে রায় দিয়েছেন, তা বাস্তবায়নের একটা পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। আজ আর কোনো আলোচ্যসূচি নেই।’
মিসরের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালত গত মাসে রায় দেন, যে আইনে দেশের পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়েছে, তার নির্দিষ্ট কিছু ধারা অবৈধ ছিল। ওই রায়ের মাধ্যমে নির্বাচিত পার্লামেন্টকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর গণ-আন্দোলনে গত বছর সাবেক স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের পতনের পর মিসরে দায়িত্ব পালনকারী সুপ্রিম কাউন্সিল অব দি আর্মড কাউন্সিল (স্কাফ) ওই পার্লামেন্টকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।
তবে মিসরের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি বিলুপ্ত ঘোষিত ওই পার্লামেন্টকে পুনর্বহাল করতে গত রোববার একটি ফরমান জারি করেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় এই পদক্ষেপ নেন মিসরের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডের সাবেক সদস্য মুরসি। এই পদক্ষেপ দেশটির স্কাফ ও প্রেসিডেন্ট মুরসির মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব প্রকট করে তোলে। মিসরের যারা সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফেরত দেখতে চায়, তারা মুরসির এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে যারা দেশটিকে ইসলামপন্থীদের একতরফা নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার ভয়ে ভীত, তারা মুরসির এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করে। তাদের মতে, এটা একটা ‘সাংবিধানিক অভ্যুত্থান’।
মিসরে ক্ষমতা নিয়ে এই দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে সব পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। ভিয়েতনামে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘একটি পরিষ্কার পথ অনুসরণ নিশ্চিত করার স্বার্থে আমি সব পক্ষকে নিবিড় আলোচনায় বসতে আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, মিসরের জনগণ যে উদ্দেশ্যে গণ-আন্দোলন ও ভোটে অংশ নিল, তা মনে রাখা উচিত।
মিসরে গণতন্ত্র উত্তরণের প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রকাশ করতে হিলারি ক্লিনটন ১৪ জুলাই সে দেশ সফরে যাচ্ছেন।
গতকালের পার্লামেন্ট অধিবেশনে মুসলিম ব্রাদারহুডের ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি এবং আরেক ইসলামপন্থী দল সালাফিস্ট পার্টির পার্লামেন্ট সদস্যরা অংশ নিয়েছেন। তবে উদারপন্থী ও বামপন্থী দলগুলোর পার্লামেন্ট সদস্যরা অধিবেশন বর্জন করেছেন।
অধিবেশনের শুরুতেই স্পিকার কাতানি এক সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী বক্তৃতায় ‘আইন ও বিচার বিভাগের রায়গুলোতে শ্রদ্ধা রাখার’ ঘোষণা দেন। তাঁর বক্তব্য টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.