দাম বাড়ানোই কি সমাধান?

রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস বা সিএনজির দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়ানোর চিন্তাভাবনা চলছে। ইতিমধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। ফলে প্রতি ঘনমিটার সিএনজির দাম পড়বে ২৫ টাকা, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬ টাকা ৭৫ পয়সায়।


এদিকে সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মালিকরা এর বিরোধিতা করে বলেছেন, পরিবেশবান্ধব এ খাতটি ধ্বংস করতে একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এ কাজ করছে। পেট্রোবাংলার মতে, দেশে সিএনজির দাম পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় ৩৫ শতাংশ এবং তরল জ্বালানির তুলনায় প্রায় ৮০ শতাংশ কম। যেহেতু এ খাতে দৈনিক প্রায় ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস ব্যবহৃত হয়, তাই পেট্রোবাংলার ক্ষতির অঙ্ক বিশাল।
আশির দশকের শেষ দিকে দেশে যানবাহনে সীমিত আকারে সিএনজির ব্যবহার শুরু হয়। আমাদের স্মরণ করা দরকার, সে সময় রাজধানী ঢাকা রীতিমতো একটি গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছিল। সিসা-দূষণের দিক থেকে ঢাকা এক নম্বরে চলে গিয়েছিল। তরল জ্বালানিচালিত পুরনো ও দুই স্ট্রোকবিশিষ্ট যানবাহনের সংখ্যা বেশি থাকায় হাইড্রোকার্বন নির্গমনের হার ছিল অনেক বেশি। টু স্ট্রোক ইঞ্জিন তুলে দেওয়ায় এবং তরল জ্বালানির পরিবর্তে সিএনজির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই দূষণের পরিমাণ অনেকটাই কমেছে। তার পরও গত বছর বিশ্বের ১৪০টি বড় শহরের ওপর দ্য ইকোনমিস্টের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, বসবাস অনুপযোগী বা নিকৃষ্ট শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। এ অবস্থায় এমন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়াই ভালো, যাতে ডিজেলচালিত যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যায়। আবার সিএনজির দাম কম হওয়ায় রাস্তাঘাটে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে বলে যে যুক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে, সেটিও একটি খোঁড়া যুক্তি। মানুষ বাড়ছে, যানবাহনও বাড়বে_এটাই স্বাভাবিক। সেভাবেই রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করতে হবে।
তবে এটাও ঠিক, পার্শ্ববর্তী দেশ বা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সিএনজির দাম মোটামুটি সংগতিপূর্ণই রাখতে হবে। নিজস্ব সম্পদ বলে এর যথেচ্ছ ব্যবহার কাম্য হতে পারে না, বিশেষ করে ক্রমেই যেখানে দেশে গ্যাসের সংকট প্রবল হয়ে উঠছে। কিন্তু কেবল সিএনজির দাম বাড়িয়েই কি গ্যাস সংকটের সমাধান করা যাবে? গ্যাসের অপচয় রোধ করার জন্য এ পর্যন্ত কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? প্রায় এক দশক ধরে আমরা শুনে আসছি, প্রিপেইড মিটার চালু করা হবে। বর্তমান সরকার শুরু থেকেই প্রায় একই কথা বলে আসছে। বাস্তবতা হলো, প্রিপেইড মিটার এখনো চালু হয়নি। ফলে পেট্রোবাংলার অধীন কম্পানিগুলোর তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণীর কোনো কোনো কর্মচারী দেশের সেরা ধনী বনে গেছে এবং যাচ্ছে। অবৈধ সংযোগ, বিল আদায়ে কারসাজি ও অন্যান্য উপায়ে তারা অতিমূল্যবান এ জাতীয় সম্পদটির বিস্তর অপচয় করেছে এবং করছে। গৃহস্থালি সংযোগেও একটি দিয়াশলাই কাঠি বাঁচাতে প্রচুর গ্যাসের অপচয় হচ্ছে। তার পরও প্রিপেইড মিটার চালু করতে এত বিলম্ব কেন? জানা যায়, অতীতে যারা সুবিধা ভোগ করেছে, তাদেরই একটি চক্র এ উদ্যোগকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। আমরা আশা করি, বর্তমান সরকারের দৃষ্টি সেদিকে নিবদ্ধ হবে এবং অতীতের ধারার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।

No comments

Powered by Blogger.