ভুয়া চীনা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে বিশ্বব্যাংক সুপারিশ করে-পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান

দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেছেন, পদ্মা সেতুর পরামর্শকের কাজ পেতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। আর বিশ্বব্যাংক ওই প্রতারণার শিকার হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার পদ্মা সেতুর দুর্নীতির বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান।


দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মানুষের মধ্যে প্রতারণা এবং অর্থ আত্মসাত প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি এবং দুদকের অন্যান্য কর্মকর্তাও এর শিকার হচ্ছেন বলে স্বীকার করেন তিনি। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি অভিযোগ নিয়ে যে তোলপাড় হচ্ছে সেখানেও প্রতারণা আছে। যে কয়টি প্রতিষ্ঠান পরামর্শক কাজ পেতে সিডিউল জমা দিয়েছে তার মধ্যে চীনের ভেনচুরা ইন্টারন্যাশনাল অভিজ্ঞতার জাল কাগজপত্র জমা দিয়েছে। আর সেই প্রতিষ্ঠানটির জন্য বিশ্বব্যাংক একাধিকবার সুপারিশ করেছে। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকও ওই চীনা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রতারণার শিকার হতে পারে। একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার জন্য বিশ্বব্যাংকের সুপারিশ কতটুকু যৌক্তিক ছিল সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে বিষয়টি দেখবে বিশ্বব্যাংকের যে বিভাগ তাদের সততা এবং নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করে তারা। এ বিষয়ে আপাতত সুইপিং কনক্লুশনে আসা সঠিক হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। প্রতারণার দায়ে চায়নার বেঞ্চার কোম্পানির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে গোলাম রহমান বলেন, এটা দুদক আইনের আওতায় পড়ে না। তাই দুদক কোন ব্যবস্থা নেবে না। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আইনী ক্ষমতা রাষ্ট্রের আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মানুষের মূল্যবোধ কমেছে উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, অর্থ লাভের আশায় মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি সাধারণ মানুষকে পথে বসিয়েছে। শত শত কোটি টাকার মালিক যারা তারা শেয়ারবাজারের অগণিত মানুষের টাকা নিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরও পথে বসিয়েছে। এ ধরনের অর্থ আত্মসাতকারী এবং প্রতারক চক্রকে প্রতিরোধ করতে সবাইকে সজাগ হওয়ার পরামর্শ দেন গোলাম রহমান। এ সময় তিনি একটি লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এতে বলেন, একাধিক সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে অথবা টেলিফোনের মাধ্যমে কাল্পনিক অভিযোগ অথবা কমিশনের বিবেচনাধীন অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদানের আশ্বাস ও নানা প্রকার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে সরকারী- বেসরকারী ব্যক্তিবর্গের নিকট থেকে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা দাবি করে আসছে। অনেক দুর্বল চিত্তের মানুষ তাদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে দৃঢ়চিত্তে কেউ কেউ কমিশনের নজরে আনে। এ প্রেক্ষাপটে কমিশন অনৈতিক কর্মকা- ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য র‌্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ করে। ইতোমধ্যে র‌্যাব একটি প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। গত বছর একই ধরনের আরেকটি প্রতারক চক্রের আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, কারও একক অভিপ্রায় অনুযায়ী দুদকের তফসিলভুক্ত কোন অপরাধের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু, মামলা রুজু, তদন্ত পরিচালনা এবং অভিযোগ বা মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদানের সুযোগ নেই। তা ছাড়া দুদক কর্মকর্তাদের অভিযুক্তদের সঙ্গে মোবাইল বা টেলিফোনে যোগাযোগ নিষেধ করা আছে। তদন্ত বা অনুসন্ধান কর্মকর্তাদের অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে লিখিত যোগাযোগ করতে হবে। তাই যদি কেউ দুদকের পরিচয় দিয়ে আর্থিক সুবিধা দাবি করে তাকে গ্রেফতারসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়। একই বিষয়ে দুদক পরিচালক (পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন) মেজর আশীষ সরকারের ০১৭৩০৩০৩২০১ নম্বরে জানাতে বলা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.