এ-সম্পর্কিত পূর্বের সম্পাদকীয় অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন-ওষুধের দাম নির্ধারণ নয়, সরকারের ভূমিকা নিয়ন্ত্রকের

৮ জুলাই ‘ওষুধের নিয়ন্ত্রণহীন বাজার: ওষুধের মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে’ শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রকাশের পর ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ সম্পাদকীয় নিবন্ধের কিছু বক্তব্য যৌক্তিক বলে মনে করেননি।


বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রথম আলো আলোচ্য সম্পাদকীয় অবস্থান পর্যালোচনা ও পুনর্মূল্যায়ন করেছে। বিশেষভাবে দুটি বিষয়ে সম্পাদকীয় অবস্থান বিভ্রান্তিকর ছিল বলে প্রথম আলো মনে করে।
প্রথমত, সব ওষুধের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে বলে যে মন্তব্য ৮ জুলাইয়ের সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়েছিল, তা যথার্থ ছিল না। অত্যাবশ্যকীয় তালিকাভুক্ত ১১৭টি ওষুধ সরকার-নির্ধারিত দামেই বিক্রি হবে। এই বিধান ঠিক রেখে তার বাইরে অন্যান্য ওষুধের দাম নির্ধারণ করবে মূলত বাজারশক্তি। ১৯৯৪ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি অফিস-নির্দেশনা অনুযায়ী, কোম্পানিগুলো নিজ নিজ ওষুধের দাম ঠিক করে এবং তা নির্ধারণের যুক্তি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে জানায়। এরপর অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়েই নির্ধারিত দামে ওষুধ বিক্রি করা হয়। বর্তমানে প্রচলিত এই নিয়মের যথাযথ বাস্তবায়ন হলে ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে আসবে। কোনো কোম্পানি অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ার প্রস্তাব করলে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের রয়েছে। সরকার ওষুধের দাম পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করবে না, তবে বিদ্যমান সুযোগের সদ্ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা পালন করতে পারে। এই ভূমিকা যথাযথভাবে পালিত হোক, এটাই কাম্য।
দ্বিতীয়ত, ১৯৯৪ সালের দাপ্তরিক নির্দেশনাটি বাতিল প্রয়োজন বলে যে মন্তব্য আগের সম্পাদকীয়তে করা হয়েছিল, সেটা ঠিক ছিল না। কারণ, সেই নির্দেশনার মধ্যেই ওষুধের দামের ব্যাপারে সরকারের নিয়ন্ত্রণকারীর ভূমিকা (রেগুলেটরি রোল) পালনের সুযোগ রয়েছে। কোনো ওষুধ নির্ধারিত নির্দেশনা (স্পেসিফিকেশন) অনুযায়ী মানসম্পন্নভাবে উৎপাদিত হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করাও ঔষধ প্রশাসনের দায়িত্ব।
আন্তর্জাতিক বাজারে ওষুধের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় এবং মূল্যস্ফীতির কারণে ওষুধের দাম যুক্তিসংগতভাবে যতটুকু বাড়া উচিত, তার বেশি যেন না হয়—সেটা শুধু সরকারের দেখার বিষয় নয়, ওষুধ উৎপাদনকারীদেরও দেখার বিষয়। স্বচ্ছ বাজার ও সুস্থ প্রতিযোগিতা এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে ওষুধের দামে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলে আশা করা যায়।

No comments

Powered by Blogger.