পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বিল পাস-পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে আদালত অবমাননার দায় থেকে অব্যাহতি

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের আদালত অবমাননার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে গত সোমবার একটি বিল পাস হয়েছে। বিলটি উচ্চকক্ষে পাস হলে এবং প্রেসিডেন্টের অনুমোদন পেলে আইনে পরিণত হবে। নতুন প্রধানমন্ত্রীকে রক্ষা করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির বিরুদ্ধে বিরাট অঙ্কের একটি দুর্নীতির মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে সুইজারল্যান্ড কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিতে নতুন প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। প্রেসিডেন্ট জারদারির বিরুদ্ধে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করতে অস্বীকৃতি জানানোয় আদালত অবমাননার দায়ে গত এপ্রিল মাসে ইউসুফ সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজা গিলানিকে বরখাস্ত করেন আদালত।
সোমবার রাতে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বিলটি পাস করেন দেশটির আইনপ্রণেতারা। বিলটিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীসহ দেশের জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তারা তাঁদের দায়িত্বের অংশ হিসেবে যেসব কাজ করবেন, সেজন্য তাঁদের ওপর আদালত অবমাননার দায় চাপানো যাবে না। অবশ্য বিলটি পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে পাস হওয়া সাপেক্ষে প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষর করার পরই সেটি আইনে পরিণত হবে। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-এন বিল পাসের অধিবেশন বর্জন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী পারভেজ বিলটির পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, এটির ফলে কোনো ব্যক্তিকে তাঁর দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হবে না।
পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী ফারুক এইচ নায়েক বিলটি পার্লামেন্টে উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, বিদ্যমান আদালত অবমাননার আইনে যেসব বিষয়ে বিভ্রান্তি ছিল, তা অপসারণ করা হয়েছে। সংশোধনীটি তড়িঘড়ি করে আনা হয়নি বলেও তিনি দাবি করেন।
তথ্যমন্ত্রী কামার জামান কাইরা বলেন, আদালত অবমাননা-সংক্রান্ত বিদ্যমান আইনে যেসব অস্পষ্টতা রয়েছে, সেগুলো অপসারণে এই পদক্ষেপ সাহায্য করবে। পার্লামেন্টের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘দেশের উৎকৃষ্ট বিচারব্যবস্থার ক্ষমতা খর্ব করা হয়নি। তবে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা নিয়ে যে বিভ্রান্তি ছিল, তা দূর করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এখনো বিশাল ক্ষমতার অধিকারী।’
প্রেসিডেন্ট জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাটি বহু আগের। নব্বইয়ের দশকে তিনি ও তাঁর প্রয়াত স্ত্রী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো তাঁদের সুইস ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার করেছিলেন বলে সন্দেহ করা হয়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পাকিস্তানের শুল্ক বিভাগের পরিদর্শন চুক্তিসংক্রান্ত কাজ পেতে ওই অর্থ তাঁদের ঘুষ হিসেবে দিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০০৮ সালে জারদারি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিলে সুইস কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলাটি তুলে নেয়। পাকিস্তান সরকার তখন থেকেই বলে আসছে, রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে জারদারির পূর্ণ দায়মুক্তি রয়েছে। তবে ২০০৯ সালে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্ট ও অন্য রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত না করার বিষয়ে রাজনৈতিক দায়মুক্তি অধ্যাদেশটি বাতিল করে দেন। আদালত একই সঙ্গে জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেন। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.